ভোলার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর প্রাচীন স্থাপত্যের হাতছানি ঃ --
ভোলার মনপুরার দক্ষিণা বিচ।
বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে নদীবেষ্টিত গাঙ্গেয় দ্বীপ জেলা ভোলা। এর আয়তন ৩ হাজার ৪০৩ বর্গ কিলোমিটার। রূপালী ইলিশ, ধান আর সুপারির জন্য এ জেলা সু-পরিচিত। সূদীর্ঘ ইতিহাসের সাক্ষি হিসেবে নান্দনিক প্রাচীন স্থাপত্য এ জেলাকে দিয়েছে ভিন্নমাত্রা। যা অনেকটা লোকচক্ষুর আড়ালে পড়ে আছে। সরকারের পুরাকীর্তি সংরক্ষণ বিভাগ এদিকে নজর দিলে অনেক অজানা তথ্য বেড়িয়ে আসতে বাধ্য। অন্যদিকে ভোলার সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে অনেগুলো বিস্তৃত চরে ম্যানগ্রোভ বন আর সাগরের বিচ মিলে অপরুপ সৌন্দর্যের আধার হিসেবে প্রকৃতিপ্রেমীদের নজর কাড়ছে। একপাশে বিচ আরেক পাশে বন; সঙ্গে শো শো শব্দ। সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের মায়াবী দৃশ্য যে কারো মনে অদ্ভুত দোলা দেবে। এখানে না আসলে প্রকৃতির অবারিত সাঁজের পসরা বর্ণনায় বুঝানো কঠিন।
তারুয়া দ্বীপ:
তারুয়া দ্বীপের লাল কাঁকড়া
ভোলা জেলা সদর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দক্ষিণে চরফ্যাশন উপজেলা। উপজেলার সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় প্রায় ১৫০ বছর আগে জেগে ওঠা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ঢালচর। এই চরের তারুয়া সমুদ্র সৈকতটি অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি। বিচ্ছিন্ন এই ঢালচর থেকে তারুয়া ট্রলারে প্রায় দেড় ঘণ্টার নদীপথ। স্পিডবোটে মাত্র বিশ-পঁচিশ মিনিট। বঙ্গোপসাগরের একেবারে দক্ষিণের মোহনায় মনোরম ম্যানগ্রোভ বনসমৃদ্ধ তারুয়া চর সগর্বে দাঁড়িয়ে। চারপাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বিভিন্ন সারি সারি কেওড়া গাছ। অন্য প্রজাতির গাছও নেহায়েত কম নয়।
তারুয়ার সৈকতে দেখা মিলবে চকচকে সাদা বালি আর লাল কাঁকড়ার মিছিল। মাথার ওপর কিংবা বেলাভূমিতে বিভিন্ন প্রজাতির হাজারো পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে চারপাশ। তবে শীতের সময় অতিথি পাখির বিচরণে এক অতি-প্রাকৃতিক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের বর্ণিল আলোকচ্ছটা মোহিত করবে যে কাউকে। নাগরিক ব্যস্ততার বন্দি জীবনে অবকাশ যাপনের জন্য প্রকৃতিপ্রেমীরা একটু সময় করে এখানে আসলে প্রকৃতি তাদের নিরাশ করবে না।
তারুয়া ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল:
ঢালচরের ৩১ দশমিক ৩১ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ২৮ দশমিক ২০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে সুবিশাল বনাঞ্চল। এর মধ্যে তারুয়ার বন অন্যতম। এই তারুয়া বনে রয়েছে গেওয়া, গড়ান, কেওড়া, বাইন, রেইনট্রিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান গাছ। শীত এলেই এখানে আস্তানা গড়ে বিভিন্ন প্রজাতির হাজার হাজার অতিথি পাখি।
এখানে পরিকল্পিতভাবে বনাঞ্চল শুরু হয় ১৯৭৬ সালে। এখানে কোনো হিংস্র পশুর ভয় না থাকলেও বনে রয়েছে শেয়াল, বনবিড়াল, হরিণ, সাপসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণি। এ বাগানের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া সরু ধরে হাঁটতে হাঁটতে একটু ভেতরে গেলেই মনে হবে, এ যেন আরেক ভূবন। সেখানে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বিশাল একটি শীতল ছাঁয়া বিশিষ্ট মাঠ। স্থানীয়ভাবে জায়গাটা বরইতলা নামে পরিচিত।
তারুয়া সমুদ্র সৈকত:
বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের অবস্থান। সেই বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা তারুয়ার সাদা বালির বিশাল সমুদ্র সৈকতে নোনা পানির ঢেউ শো শো শব্দে আছড়ে পড়ে। সাদা বালিতে নোনা পানির উঁচু ঢেউ, কাছাকাছি সবুজ বনভূমি কক্সবাজার অথবা কুয়াকাটা সৈকতের চেয়ে কারো কাছে অন্যরকম মনে হতে পারে। সৈকতে লাল কাকড়ার বিচরণ। বালির ওপর ছোট ছোট পা দিয়ে দৌড়ে চলে এসব লাল কাঁকড়ার দল। মানুষের অবস্থান টের পেলে এরা চোখের নিমিষেই লুকিয়ে পড়ে বালির গর্তে। এ চরে চিত্রা হরিণ, বানর, উদবিড়াল, পাতিশেয়াল, বন্যমহিষ-গরু, বনবিড়াল, বন মোরগসহ নানা প্রজাতির প্রাণি রয়েছে। বক, শঙ্খচিল, মথুরা, কাঠময়ূর, কোয়েল, গুঁইসাপ, বেজি, কচ্ছপ নানা ধরনের সাপও আছে এ চরে।
চর কুকরি-মুকরি:
কুকড়ি-মুকরির চরে অতিথি পাখি।
চর কুকরি-মুকরি আরেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। ট্রলার বা স্পিডবোটে মাঝারী খালের মধ্য দিয়ে যাওবার সময় দুই পাশের ম্যানগ্রোভ বন দেখে সুন্দরবনের অবয়ব ভেসে ওঠে। পায়ে হেঁটে বনের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় মনে হবে যেন সুন্দরবনের কোনো অংশ। সুন্দরি, গেওয়া, গরান গাছ এবং শ্বাসমূলীয় গাছের বন এটি। এছাড়া গোলপাতার সমাহারও চোখে পড়ার মতো। কুকরির পূর্ব অংশে নারকেল বাগান। নামে নারকেল বাগান হলেও নানা প্রজাতির বৃক্ষরাজির আচ্ছাদনে ঢাকা পড়ে সূর্য। বনের ভেতরে যাওবার জন্য গামবুট অথবা কেডস উপযুক্ত। অন্যথায় শ্বাসমূলে পা রক্তাত্ত হওবার সম্ভাবনা বেশি। নদীর পাড় আরও মুগ্ধতার। নদী পাড় যেন শুভ্রতায় মোড়ানো। কারণ সাদা বকের সমারোহ থাকে সেখানে। শীতের সময় অতিথি পাখি এ এলাকাকে দেয় ভিন্নমাত্রা। এ চরে বেড়ানোর জন্য শীতই যথোপযুক্ত। কুকরি-মুকরির শীতকালের চিত্র মুগ্ধ হওয়ার মতো। বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত হয়ে ওঠে এসব অঞ্চলের চারপাশ। অতিথি পাখিদের আগমনে চরাঞ্চলগুলো যেন নতুন রূপ ধারণ করে। এছাড়া এখানকার সমুদ্র সৈকতটিও বেশ পরিচ্ছন্ন ও নিরিবিলি। দেশের অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোর তুলনায় কুকরি-মুকরির চিত্র কিছুটা ভিন্ন। মাইলের পর মাইল বৃক্ষরাজির বিশাল বনভূমি কুকরি-মুকরিকে সাজিয়েছে অদ্ভুত সবুজের চাদরে ।
চর কুকরি-মুকরির ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে একটি খাল। খালটির নাম ভাড়ানি খাল। মেঘনার বিশাল বুক থেকে বয়ে গিয়ে খালটি পড়েছে বঙ্গোপসাগরে। এখানকার ধূ-ধূ বালিয়াড়ির ওপর দাঁড়ালে সাগরের শোঁ শোঁ শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা যাবে না। স্থানীয় মানুষ এ স্পটটিকে বালুর ধুম নামে ডাকে। একটু সামনে এগোলেই ঢাল চর। এরপরই বঙ্গোপসাগর। এখানে উত্তাল ঢেউ আছড়ে পড়া দেখলেই মনে পড়ে যাবে কক্সবাজার কিংবা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের কথা।
এখানে বসেই সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। তবে কুকরি-মুকরির প্রধান আকর্ষণ সাগরপাড়। এখানে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত কিংবা সূর্য ডোবার দৃশ্য ভ্রমণপিপাসুদের মুগ্ধ করবে। চর কুকরি-মুকরিতে ডুবন্ত সূর্যের লাল, হলুদ, কমলা আভা সবুজরঙা চর কুকরি-মুকরির বনে ছড়িয়ে পড়ে বনটিকে আরও মায়াবী করে তোলে।
যেভাবে যাওয়া যাবে:
ঢাকা থেকে লঞ্চে সরাসরি যেতে পারবেন ভোলা জেলার চরফ্যাশনে। সেখান থেকে মোটরসাইকেল কিংবা সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া করে চর দক্ষিণ আইচা এলাকার চর কচ্ছপিয়া ঘাটে। এরপর চর কচ্ছপিয়া ট্রলার ঘাট হয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকা অথবা বেশ খানিকটা জলপথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছানো যাবে চর কুকরি-মুকরি অথবা তারুয়া দ্বীপে। লক্ষ্মীপুর থেকে যেতে হলে মজু চৌধুরী লঞ্চ ও ফেরিঘাট থেকে লঞ্চ/ট্রলার/স্পিডবোটে ভোলার ইলিশা ঘাট, সেখান থেকে অটোরিকশায় ভোলা শহরে। শহরের বাসস্ট্যান্ট থেকে চরফ্যাশনের বাসে করে চরফ্যাশন গিয়ে পূর্ব নির্দেশিত পথে।
থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা:
এ চরে থাকার ব্যবস্থার মধ্যে চর কুকরি-মুকরি বাজারের পাশে বন বিভাগের একটি রিসোর্ট রয়েছে। সেখানে থাকতে হলে যোগাযোগ করতে পারেন সেখানকার কেয়ারটেকার করিমের সঙ্গে।
বাজারে হানিফ নামের একটি হোটেল রয়েছে। রিসোর্ট আর ইউনিয়ন পরিষদে খাওয়ার ব্যবস্থা না থাকলেও এখানে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে।
এছাড়া ব্যাক্তি উদ্যোগে বেশ কয়েকটি স্টে হোম সার্ভিস চালু আছে। সেখানে স্বল্প খরচে থাকা যায়।
তারুয়ায় যেতে হলে স্পিডবোট অথবা ট্রলারে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে কুকরি-মুকরি থেকে ওই পরিবহণ ভাড়া করে বা রিজার্ভ নিয়ে সন্ধ্যায় ফিরে আসতে হবে।
মনপুরা:
মনপুরার নদীর ঢেউ, সূর্যাস্ত দেখার জন্য ল্যান্ডিং স্টেশন।
ভোলা সদর থেকে ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে বঙ্গোপাসাগরের কোল ঘেঁষে মেঘনার বুকে জেগে ওঠা দ্বীপ উপজেলা মনপুরার অবস্থান। প্রমত্তা মেঘনার উত্তাল ঢেউয়ের পলি জমে এ দ্বীপটির জন্ম হয়। সাগরের কোল ঘেঁষে জন্ম নেওয়ায় স্থানীয়দের কাছে মনপুরা 'সাগরকন্যা' হিসেবে পরিচিত।
এখানে ভোরে সূর্যের আগমনী বার্তা আর বিকালের পশ্চিম আকাশের সিঁড়ি বেয়ে এক পা দু’পা করে মেঘের বুকে হারিয়ে যাওয়ার দৃশ্য সত্যিই অতুলনীয়। আবার রাতের নতুন শাড়িতে ঘোমটা জড়ানো বধুর মতো নিস্তব্দতায় ছেয়ে যায় পুরো দ্বীপ।
প্রায় ৮০০ বছরের পুরনো মনপুরা উপজেলা বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চল তথা দেশজুড়ে পরিচিত একটি নাম। এখানকার ইতিহাস বেশ প্রাচীন। ৭০০ বছর আগে এখানে পর্তুগিজ জলদস্যুদের আস্তানা ছিল। যার প্রমাণ মেলে মনপুরায় আজও সে সময়ের লোমশ কুকুরের বিচরণ।
প্রাকৃতিক সৌন্দের্যের অপরুপ লীলাভূমি মনপুরায় রয়েছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আর্কষণীয় বিষয় হচ্ছে এখানকার হাজার হাজার একর জায়গাজুড়ে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। এছাড়াও রয়েছে বাহারী প্রজাতির বৃক্ষ, তরুলতার সমাহার। বনে আছে হরিণ, বানর, ভাল্লুকসহ নানা বৈচিত্রময় প্রাণি। এর গহীন জঙ্গলে ভয়ঙ্কর কিছু মাংশাসী প্রাণি রয়েছে বলেও জনশ্রুতি আছে।
মনপুরার রয়েছে ৮ থেকে ১০টি বিচ্ছিন্ন চর। এগুলো হচ্ছে চর তাজাম্মল, চর জামশেদ, চর পাতিলা, চর পিয়াল, চর নিজাম, লালচর, বালুয়ারচর, চর গোয়ালিয়া ও সাকুচিয়ার চর। আর চরগুলো দেখলে মনে হবে কিশোরীর গলায় মুক্তর মালা। এসব চরাঞ্চলে বন বিভাগের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে সবুজ বিল্পব। চোখ ধাঁধানো রূপ নিয়েই যেন এসব চরগুলোর জন্ম। চরগুলোতে রয়েছে মানুষের বসতি। তাদের পেশা অনেকটা নদীর আয়ের ওপর নির্ভরশীল। জীবনযাত্রার মানও কিছুটা ভিন্ন ধরনের। তাই সবুজের সমারোহ আর পাখির কলকাকলিতে মুখরিত বিচ্ছিন্ন সাগরকন্যা মনপুরা পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গুরুত্বের দাবিদার।
ভ্রমণপিপাসু মানুষকে মুগ্ধতার বন্ধনে আটকে দেয়ার অলৌকিক ক্ষমতা রয়েছে সাগরকন্যার। শীত মৌসুমে এর চিত্র ভিন্ন ধরনের। সুদূর সাইরেরিয়া থেকে ছুটে আসা অতিথি পাখিদের আগমনে চরাঞ্চলগুলো যেন নতুন রুপ ধারণ করে। শীত মৌসুমে বাংলাদেশে যেসব প্রজাতির অতিথি পাখি আসে, এর মধ্যে সিংহভাগই ভোলায় অবস্থান করে। তখন মনপুরার চর অতিথি পাখিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়। দেশের অন্যসব পর্যটন কেন্দ্রের তুলনায় মনপুরার চিত্র কিছুটা ভিন্ন। মাইলের পর মাইল বৃক্ষের সবুজ সমাহার যেন ক্যানভাসে আঁকা শিল্পীর নিপুন হাতের ছোঁয়া। যেখানে আছে নানা প্রজাতির গাছ, সংখ্যায় প্রায় পাঁচ কোটিরও বেশি। রয়েছে একটি ল্যান্ডিং স্টেশন। সেখান থেকে সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের দৃশ্য উপভোগ করা যায়। দেখা যায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য।
এছাড়া সম্প্রতি মনপুরার সাগর মোহনায় জেগে উঠা প্রায় এক কিলোমিটার বালির বিচকে ঘিরে তৈরি হয়েছে দক্ষিণা হাওয়া সি-বিচ। এই বিচকে ঘিরে নতুন সম্ভাবনা। মনপুরার অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা, ভালো মানের হোটেল, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিসহ বিভিন্ন সুবিধা বাড়াতে পারলে পর্যটকদের আকৃষ্ট করার মতো সৌন্দর্য ছড়িয়ে আছে মনপুরায়। তবে সরকারি, বেসরকারি কিংবা এনজিও সংস্থাগুলো যদি গুরুত্বের সঙ্গে দৃষ্টি দেয়, তাহলে শিগগিরই এখানে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব।
যোগাযোগ ব্যবস্থা: ঢাকা থেকে সরাসরি লঞ্চযোগে মনপুরা আসা যায়। সন্ধ্যায় লঞ্চে উঠে সকাল ৬টায় পৌঁছানো যায় মনপুরায়। এছাড়াও ভোলা ইলিশা থেকে রাতে লঞ্চে ও সি-ট্রাকে তজুমদ্দিন অথবা ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে করে যাতায়াত করা যায়।
প্রাচীন স্থাপত্য:
ভোলার বোরহানউদ্দিনে প্রায় সাড়ে ৫০০ বছর আগে তৎকালীন চন্দ্রদ্বীপের রাজা জয়দেবের মেয়ে বিদ্যা সুন্দরী ও জামাতার জন্য এ রাজবাড়ি নির্মাণ করেন।
ভোলা জেলা সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার দক্ষিনে বোরহানউদ্দিন উপজেলা। এখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি সু-দৃশ্য প্রাচীন নান্দনিক স্থাপনা। এগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে অনেক প্রকৌশলী নির্মানশৈলী দেখলে বিস্ময়ে ‘থ’ হয়ে যান। এরকমই স্থাপনার সন্ধান মিলে বোরহানউদ্দিন উপজেলা সদর থেকে ৫-৬ কিলোমিটার দক্ষিণে সাঁচড়া ইউনিয়নের গুড়িন্দা বাড়িতে। প্রায় সাড়ে ৫০০ বছর আগে তৎকালীন চন্দ্রদ্বীপের রাজা জয়দেবের ছোট মেয়ে বিদ্যা সুন্দরীকে বিয়ে দিয়ে তাদের জন্য ওই রাজবাড়ি নির্মান করেন। কিছু জায়গার পলেস্তারা খসে পড়লেও এর নির্মানশৈলী অবাক করার মতো। স্থানীয়রা এর ইতিহাস বলতে পারে না। তবে ইতিহাস থেকে জানা যায়, রাজার জামাতা রাজার গোয়েন্দা হিসেবে কাজ করতেন। ওই কারণে ওই বাড়ির নাম একসময় গোয়েন্দা বাড়ি ডাকা হত। ধারণা করা হয় রাজ শাসনের পর কালক্রমে মানুষের মুখে মুখে ওই বাড়ির নাম গুড়িন্দা বাড়ি হয়ে যায়। এ পূরাকীর্তি সরকারি হেফাজতে নিয়ে সংরক্ষণ করা উচিৎ। পরিপূর্ণ গবেষণায় এ স্থান থেকে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হওয়া অসম্ভব না।
এছাড়া রাজা জয়দেব এলাকায় পানীয় জলের জন্য তার দুই মেয়ের নামে কমলা সুন্দরীর দীঘি ও বিদ্যা সুন্দরীর দীঘি খনন করেন। ওই দুইটি দীঘি কালক্রমে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। তবে কমলা সুন্দরী দীঘির শুধু একটি পাড় ও বিদ্যাসুন্দীর দীঘির দুইটি পাড় কালের সাক্ষ্য বহন করছে। স্থানীয়রা ওই পাড়গুলোকে পাহাড় নামে ডাকে।
একই উপজেলায় ২০০ বছর বয়সী আব্দুল জব্বার চৌধুরী জমিদার বাড়ি, বোরহানউদ্দিন চৌধুরী জমিদার বাড়ি, বোরহানউদ্দিন চৌধুরী জমিদার বাড়ির মসজিদ, হায়দার আলী মিয়া বাড়ি প্রাচীন স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন হিসেবে যে কাউকে মোহিত করবে। এগুলোর নির্মাশৈলী দেখলে নানা প্রশ্নের জন্ম দিবে। প্রত্মতত্ত্ব বা পূরাকীর্তি যাদের আকৃষ্ট করে, নিঃসন্দেহে এ স্থাপনা তাদের নিরাশ করবে না।
0 মন্তব্যসমূহ