Header Ads Widget

Responsive Advertisement

বাতাবাড়ি ও পারমদনপুর - কোলকাতার কাছে-দূরে দুটি অরণ্য - ভ্রমন বৃত্তান্ত

 বাতাবাড়ি জঙ্গল  

বনের নাম বাতাবাড়ি । জেলা জলপাইগুড়ি , রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ । জার্নির শেষের দিকে যখন  কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেসটি  ঢুকবে ডুয়ার্সের গহিনে, তখন অপূর্ব নিসর্গ আপনাকে মোহিত করে দেবে। রেলসেতু পেরিয়ে ঝমঝম আওয়াজে এবং মাটির ভিজে গন্ধে যাত্রাপথের প্রাণ সুধা গ্রহন না করে পারা যাবে ? 

একের পর এক নদী পার হয়ে যেতে হবে। যেমন নেওড়া, মূর্তি, নীলধারা এমনি সুন্দর নামসব। নদী আর পাহাড়ের সখ্যতা ডুয়ার্সেই চোখে পড়বে। চালসার মোড় থেকে বা দিকে ময়নাগুড়ি হয়ে  জলপাইগুড়ির দিকে মঙ্গলবাড়ি। 

এই মঙ্গলবাড়িতে প্রতি রবিবারে বসে সাপ্তাহিক হাট। ঘুরে দেখতে পারেন পাহাড়ি হাট কেমন হয়। মূলত চা-বাগান অঞ্চলের হাট বলা যায়।  শালগাছের ঘন জঙ্গল পড়বে সামনে। এরপর বাতাবাড়ি চা-বাগানের বিস্তার। সবুজ চা-বাগান দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। সামনে ' গ্রীন টি রিসর্ট '। এখানেই রাত্রিবাস। যদি আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকে আকাশ ঝকঝকে পরিস্কার থাকে তবে অপরূপ কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পবেন। এবার কাছে পিঠে ঘুরে নিন্। ফার্মাবাজার সামনে, চা-বাগানের অপরূপ দৃশ্য দেখতে দেখতে চলে আসুন কুর্তি নদীর কাছে , একটু দূরে ময়ূয়ের চলাফেরা হতে পারে, একটু দাঁড়িয়ে যান। পাশের একটি স্থান ছায়াওফেলি। চারিদিক শুধু ছায়া হি ছায়া। গাছের ছায়া, মেঘের ছায়া, চা-বাগানের ছায়া। 

এবার কুর্তির সাথে মিশে আছে নাওঘাট। অর্থাৎ কুর্তি নদীতে নৌকা বিহার করা যেতে পারে। এ পারটা বড় দিঘী চা-বাগান ও পারটা বড় দিঘী জনপদ। প্রচুর নদীর সমাঙ্গম। দেখে নিন্ কুর্তি মন্দির। আর অঢেল চা-বাগানের সবুজ, আর রোমান্টিক চড়াই-উৎরাই। এবার সময় হাতে করে আনায়াসে দেখে নিতে পারেন মূর্তি নদী, মূর্তি বন বাংলো, গরুমারা, চাপড়ামারি। 

ডুয়ার্সের বাতাবাড়ির অবস্থান এমন যে, এখান থেকে সামসিং, টোটোপাড়া, ভূটানের ফুন্টশোলিং, বিন্দু, ময়নাগুড়ির জল্পেশ মন্দির ঘুরে দেখতে পারেন। বনের সবুজ আর আকাশের নীল। এই নীল-সবুজের সখ্যতা আর কোথাও পাবেন না। আর পথের দু পাশ দিয়ে দেখতে পাবেন রডোডেনড্রনের সমাহার। চোখ জুড়িয়ে যাবে রোডডেন্ড্রনের আলোয় । ফুল তো নয় যেন সৃষ্টিকর্তা বসে বসে প্রতিটি ডালে নানান রঙের ছবি এঁকেছেন । ছবি তুলতে যারা পছন্দ করেন তাদের জন্য বাতাবাড়ি স্বর্গের চেয়ে কিছু কম নয় । 

কীভাবে যাবেন- শিয়ালদহ থেকে যে কোন ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন। স্টেশন থেকে ভাড়া গাড়িতে বাতাবাড়ি।

থাকার জায়গা- গ্রীন টি রিসর্ট, AC\Non AC মোট ৪ শয্যা বিশিষ্ট কটেজ।

এতো গেলো কোলকাতা থেকে দূরের এক অরণ্য । এবার আলোচনা করি কোলকাতার খুব কাছেই একটি সজীব অভয়ারন্যের সম্বন্ধে । উত্তর ২৪ পরগণার পার-মদনপুরে রাস্তার ধারেই কয়েক একর জমিতে এই বন । সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামানুসারে এই অরন্যের নামকরন করা হয়েছে বিভূতিভূষণ অভয়ারণ্য । আসুন জেনে নিই বিস্তারিত - 

বিভূতিভূষণ অভয়ারণ্যঃ- 

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় অভয়ারণ্য খুব জনপ্রিয় মানুষের কাছে। জায়গাটি একেবারে বাংলাদেশের সীমান্তের কাছাকাছি। আছে ইছামতি নদী আর পলাশ, শিমূল, শিরিষ, অর্জুন, শিশু, গরানের মেলবন্ধন। অসংখ্য বাঁদর, হরিণ, খরগোসের আনাগোনা এই অভয়ারণ্যে। শঙ্খচিল, নীলকন্ঠ, মৌটুসি পাখির দেখা মিলবে এখানে।  

গাছ, পাখি ছাড়াও চোখে পড়বে হরিণ। প্রায় ৪০০ টি হরিণ এখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কাছেই থাকতেন বিভূতিভূষণবাবু। বনগাঁ, ইছামতিকে নিয়ে যেমন তাঁর আসংখ্য লেখা পাওয়া যায় তেমনি এই স্থানের ভাবনায় অরণ্যক উপন্যাসটি লেখা। তিনি লিখেছেন ' শুইয়া আছি, হঠাৎ পায়ের শব্দে উঠিয়া বসিয়া শিয়রে চাহিয়া দেখি ঝোপের নিভৃতিতম দৃর্গম অঞ্চলে নিবিড় লতাপাতার জড়াজড়ির মধ্যে আসিয়া দাঁড়াইয়াছে একটা হরিণ। ভালো করিয়া চাহিয়া দেখি বড় হরিণ নয়, হরিণ শাবক। সে আমায় দেখিতে পাইয়া অবোধ বিস্ময়ে বড় বড় চোখে আমার দিকে চাহিয়া আছে, ভাবিতেছে এ আবার কোন অদ্ভূত জীব'।

ইছামতির  ধারে প্রায় ৬৮ বর্গকিমি নিয়ে অভয়ারণ্য তৈরী হয়েছে।  ভিতরে শিশু পার্ক, ছোট চিড়িয়াখানা, টুরিষ্ট লজ আছে। পারমাদনে ঢুকতে মানুষের এবং গাড়ির প্রবেশ মূল্য ধার্য্য আছে। ভিতরে বনভোজন করা যায় অনুমতিসাপেক্ষে। এখান থেকে পেট্রাপোল বর্ডার কাছেই। জঙ্গল ঘুরে আড়ংঘাটায় যুগোল কিশোরের মন্দির দেখে নিতে পারেন। জ্যৈষ্ঠ মাসে একমাস ধরে যুগোলের মেলা বসে।

কীভাবে আসবেন- শিয়ালদহ থেকে গেদে প্যসেন্জারে আড়ংঘাটা স্টেশানে নামতে হবে। স্টেশান থেকে টোটো, ট্রেকার পাওয়া যাবে।

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ