এবার পূজোয় লাদাখ চলুন ঃ--
ভ্রমণ পাগলদের কাছে এক স্বপ্নের জায়গা ' হিমালয়ান ডেজার্ট '। কারণ এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ, পাহাড়ের রং ও রূপ আর পাহাড়ের সৌন্দর্য্য মোহিত করে রাখবে আপনাকে। তাই লাদাখ ভ্রমণ আপনার কাছে স্বপ্নের মত। একদিকে চিন অন্যদিকে পাকিস্তান। আর এই দুই দেশের মধ্যে তিব্বতী শিক্ষা আর সংস্কৃতির হিমশীতল মরুভূমি লাদাখ।
রং বেরং সচ্ছ জলের লেক বা হ্রদ। সঙ্গে নক্ষত্র খোচিত অসংখ্য মরু পাহাড়। আছে খরশ্রোতা নদী। পাহাড়ের উপর ঝুর ঝুরে মাটি আর পাথর। গাছ গাছালির চিহ্ন মাত্র নেই। আর পাহাড়ের কোলে ছোট ছোট গ্রাম।
দিল্লী থেকে লাদাখে প্লেনে সময় লাগে দেড় ঘন্টা মত। বিমান থেকে অদ্ভূত দৃশ্য যা চোখের পাতায় বহুদিন লেগে থাকবে।
হষিকেশ রিভার র্যাফটিং রোমাঞ্চকর। ৮ কিলোমিটার পর্যন্ত অবধী র্যাফটিং হয়ে থাকে। নদীর প্রবল শ্রোতে দুলতে দুলতে চলা। কখনও জল আছড়ে পড়ছে গায়ে কখনও টলমটাল অবস্থা। ১২০০ টাকা লাগে এই র্যাফটিংএ। এরপর একটু দূরে হান্ডার ও দীক্ষিট গ্রামের মাঝে ক্যামল রাইডিং। নুবরা ভ্যালির এই জায়গায় কয়েক কিলোমিটার জুড়ে মরুভূমির বালিয়াড়ি। এখানে প্রচুর উঠ রাখা আছে। এখানকার উটের দুটো করে কুঁজ দেখাযাবে। উটে চড়তে খরচ ৩০০ টাকা।
এরপর খুরদাঙলা। বিশ্বের সবচেয়ে উুঁচু স্থান। মোটর রাইড করবার জায়গা। সমুদ্রতট থেকে ১৭,৫৮২ ফুট বা ৫০০০ মিটারেরও বেশী উঁচু খারদঙলা বিশ্বের সর্বোচ্চ গিরিপথ। এই পথেই সিয়াচিন হিমবাহে যাওয়া যায়। সারা বছরই বরফে ডাকা থাকে। এখানে বড় সমস্যা হলো শ্বাস কষ্টের।
খারুদাঙলা হয়ে বেশ কয়েকটি পাহাড় ডিঙিয়ে প্যাঙগঙ লেক। মনে হবে যেন একটা নদী। এই হ্রদের ৪০% ভারতে ৬০% চিনে। এই হ্রদের জল জানুয়ারিতে সম্পূর্ণ বরফ হয়ে যায়। হ্রদের জলে নীল, লাল, সবুজের অদ্ভূদ মিশেল দেখা যায়। হ্রদের পাশে বসে থাকলে মন ভরে যায়। হ্রদের পাশে আছে ছোট ছোট তাঁবু ও কটেজ।
এবার অনেক অপেক্ষার পাওয়া যাবে মধ্য লাদাখের ট্রকসে মনেস্ট্রি। এই মনেস্ট্রি বা বুদ্ধ মূর্তি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বুদ্ধ মূর্তি। একতলায় দেহ দোতলায় মুখ। তা দেখে পর্যটকরা অবিভূত হয়ে পড়তে বাধ্য। ৩০ /৪০ জন বৌদ্ধ ভিক্ষুকেরা এক সাথে মন্ত্র উচ্চারণ করেন যেন ঐক স্বর্গীয় অনুভূতি।
অনেকেই সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে চান না। তবে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠার পর আর কষ্ট থাকে না। এখানেই সেই 'থ্রি ইডিয়েট' ছবির সুটিং - এর স্কুল। এই স্কুলেই বেশ কিছু দিন ফিল্মষ্টারগণ অবস্থান করেছিলেন। এই স্কুল এখন টুরিষ্ট স্পট।
প্যাঙপঙ চড়াই উৎরাই ভেঙে ভরপুর। কিছু জায়গায় রাস্তা নেই বল্লেই হয়। সরু করে পাহাড়ের ঢাল কেটে রাস্তা তৈরি হয়েছে। একটু অসাবধান হলেই সমূহ বিপদের সম্মুখীন হতে হবে। কিছু জায়গায় পাকা রাস্তা তৈরি হচ্ছে। কোথাও কোথাও নদীর জল ঢুকে গেছে রাস্তার উপর। হাতের তালুতে জীবন নিয়ে লাদাখ ভ্রমণ করতে হয়। লাদাখ শেষ করে লে'তে থামতে হয়। লে'তে মাথা ব্যাথা, শ্বাস কষ্ট উধাও হয়ে যাবে।
লাদাখ ভ্রমণের প্যাকেজ ৭ দিনের হলে সম্পূর্ণ হতে পারে বলে মনে হয়।
সারা বছরই লাদাখ ভ্রমণ করছেন মানুষ। তবে মার্চ থেকে নভেম্বর হচ্ছে ফুল সিজেন টাইম। এই সময় লাদাখে পর্যটকের ভিড় খুবই আশাপ্রদ। জোর ঠান্ডায় পর্যটক কমে যায়।
আনুমাণিক ২৫ ০০০ থেকে ৩৫০০০ টাকা আনুমানিক খরচ ধরে এগুন ভালো। হিসাব নিকাশ, পর্যাপ্ত শীতের পোশাক, ইত্যদি যোগাড় করেই 'হিমালয়ের মরুভূমি' সৌন্দর্য্য উপভোগ করে স্মৃতির পাতায় তুলে রাখা ভাগ্যবানের বিষয়।
কী ভাবে যাবেন ঃ- দিল্লী থেকে বিমানে লে পৌঁছান যাবে ওখান থেকে লাদাখ। হিমাচল প্রদেশের মানালি হয়ে কিম্বা কলকাতা স্টেশন থেকে জম্বু তাওয়াই এক্সপ্রেসে জম্বু কাশ্মির স্টেশন থেকে শ্রীনগর সেখান থেকে লাদাখ।
0 মন্তব্যসমূহ