বাংলার বিভিন্ন স্থানে রয়েছে কত পুরাতন কীর্তি, মন্দির। বহু সাধকের পুণ্যস্মৃতি, বহু মানুষের পুণ্যস্মৃতিতে ধন্য এই পুরাকীর্তি ও মন্দির। এদেরকে কেন্দ্র করে ইতিহাস, প্রবাদ ও জনশ্রুতিগুলিও মূল্যবান। এমনই দুটি স্থানের খোঁজ দেওয়ার উদ্দেশ্যে আমার এই লেখা । আশাকরি আপনারা শুধু পড়েই খান্ত থাকবেন না , সময় সুযোগ বুঝে একবার ঘুরেও আসবেন ।
নৃসিংহতলা
কৃষ্ণনগর শহর থেকে ৭ কিমি দক্ষিণ পশ্চিম কোনে অবস্থিত নৃসিংহতলা বা ঠাকুরতলা। পূর্বে নাম ছিল দেবপল্লী। একদিনের জন্য ঘুরে আসার পক্ষে খুবই আদর্শ জায়গা।
আড়াই শত বছর আগেও জায়গাটি ছিল গভীর জঙ্গলে আবৃত। হিংস্র জানোয়ারের বিচরণক্ষেত্র। যে সামন্য বনপথটুকু ছিল, সেটিও ছিল দস্যু লুটেরাদের অবারিত। মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেব এই দেবপল্লীতে এসেছিলেন। নবদ্বীপ নয়টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। একটি দ্বীপ এর অন্তর্ভূক্ত। সে সময় এখান দিয়ে গঙ্গা প্রবাহিত হোত। তখন এই স্থানের নাম ছিল দেবকোট। বর্তমান ৮ কিমি দূরে গঙ্গা অবস্থান করছে।
এই গভীর জঙ্গলে একটা কষ্টি পাথরে নির্মিত দেবমূর্তি গ্রামের মানুষ উদ্ধার করেন। এই সংবাদ নদীয়া রাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের কাছে পৌঁছায়। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র তাঁর লোক লস্কর নিয়ে মূর্তিটি উদ্ধার করেন এবং এই খানে একটি মন্দির বানিয়ে দেন। নিত্য পূজার ব্যাবস্থাও করে দেন। পুরোহিত ছিলেন বিষ্ণপুর গ্রামের একজন ব্রাহ্মণ।
এই গ্রাম এবং মূর্তি সম্বন্ধে ' স্বাধীনতা রজত জয়ন্তী স্মরক' গ্রন্থে বর্ণিত আছে। একটি কষ্টিপাথরে মূর্তিটি খোদিত। উচ্চতা প্রায় ৪ ফুট। পদতলে প্রহ্লাদ ও অঙ্কে হিরণ্যকশিপু অবস্থিত। মূর্তিটির বেশ কিছু স্থানে অঙ্গহানি হয়ে আছে।
নৃসিংহদেবের প্রাচীন মন্দিরটি সম্পর্ক কান্তিচন্দ্র রাঢ়ী মহাশয় তাঁর 'নবদ্বীপ মহিমায়"(১২৯৮) উল্লেখ করেছেন।
এসব ধ্বংসাবশেষ এখন আর দেখা যায় না। কথিত আছে মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্যদেব সংকীর্তন পরিক্রমা কালে এখানে নৃসিংহমূর্তি দর্শন করেছিলেন। মহাপ্রভূর আবির্ভাবের ফলে ঐ দিন মহোৎসব হয়। পাশেই চামটার বিল। এই বিলের মধ্যেই ব্রঞ্জের তৈরি সুন্দর একটি উগ্রতারার মূর্তি পাওয়া যায়। মূর্তিটি ছোট হলেও শিল্পোৎকর্ষ আছে। উগ্রতারা বৌদ্ধতন্ত্রে উল্লিখিত দেবী। এর অপর নাম চামুন্ডা। মূর্তিটি দেবকোট গ্রামে অধিষ্ঠিত। নিত্য পূজা হয়ে আসছে।
যারা পিকনিক করতে চান তারা চলে আসুন মন্দিরের পাশে। মন্দির কতৃপক্ষের কাছে মৌখিক অনুমতি নিলই হলো।
কীভাবে যাবেন; শিয়ালদহ থেকে লোকালে কৃষ্ণনগর। স্টেশন থেকে অটো বা টোটোয় নৃশংহতলা। বাসস্ট্যান্ড থেকে নবদ্বীপ -বাবলারির বাসে নৃশিংহতলা।
মন্দিরময় বরাকর -
চলুন ঘুরে আসি। পূর্ব বর্ধমান জেলার বরাকর । বরাকরের বুকেই পশ্চিমবঙ্গের প্রাচীন ঐতিহ্যের এক বিপুল সম্ভার। পশ্চিমবঙ্গ ঝাড়খন্ড সীমান্তে অবস্থিত বরাকর।আসানসোল থেকে দূরত্ব ২৫ কি মি মাত্র। বরাকর স্টেশান থেকে মাত্র দেড় কি মি দূরত্বে বেগুনীয়া বাজারের ডানদিকে ৪ টি সুউচ্চ শিখর দেউল। বেগুনীয়া মন্দির নামে পরিচিত।
এখানে পাশাপাশি একজোড়া ৬০ ফুট সুউচ্চ শিখর দেউল দেখতে পাওয়া যাবে। দুটি মন্দিরেই শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করা। মন্দির গাত্রে গণেশ মূর্তি এবং ডানদিকের দিকের দেওয়ালে মহিষমর্দিনী মূর্তি খোদাই করা আছে। এর কিছুটা পশ্চিমে তৃতীয় শিখর দেউলটি দেখা যাবে। এই মন্দিরটি সব থেকে উচু। সামনে সোনাপট্ট -গৌরীপট্টের পরিবর্তে মাছের আকৃতি খোদাই করা আছে। মাছের উপর ৫ টি শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত আছে। চতুর্থ মন্দিরটি হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই মন্দিরটি সিদ্ধেশ্বর মন্দির নামে বিখ্যৎ। সিদ্ধশ্বর মন্দিরটি ভূবনেশ্বরের পরশুরামের মন্দিরের সঙ্গে মিল আছে।
বর্তমান এই মন্দিরগুলি আর্কিওলজি সার্ভে অব ইন্ডিয়ার অধীন। একদিন ঘুরে গেলে ভালো লাগবে
কীভাবে যাবেন -
হাওড়া স্টেশান থেকে ব্লাক ডায়মন্ড এক্সপ্রেস, মিথিলা এক্সপ্রেস, চম্বল এক্স, শিয়ালদহ থেকে জম্বু-তাওয়াই ছাড়া অনেক ট্রেন আছে। বর্ধমান,আসানসোল থেকে বাসে আসা যায়। সময় লাগে ৫০ মিনিট। থাকা
খাওয়ার জন্য হোটেল ও লজ -
কল্যাণেশ্বরী হোটেল ওরিয়ন্ট লজ এবং আরও অনেক হোটেল আছে।
0 মন্তব্যসমূহ