Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

সিল্ক রুট , তিব্বত ও বাংলার এক চীনা উপনিবেশের কাহিনী ও ভ্রমন বৃত্তান্ত


অতিতকালে আমাদের দেশের সাথে তিব্বত, মধ‍্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে ব‍্যাবসার জন‍্য এই স্থানে মানুষ আসত। বনিকের দল বিভিন্ন ব‍্যাবসায় মেতে উঠত। এই স্থানে সিল্ক বা রেশম,  সেন্ট, নানা রকম মশলাপাতি এমনকি সোনা-রূপার মুদ্রাও বিকিকিনি হতো। সেই থেকে নামকরণ সিল্ক রুট বা রেশম পথ।আগে এই পথ বন্ধ ছিল। বর্তমানে এ স্থানে পর্যটকদের ভীড় হতে থাকায় খুলে দেওয়া হয়েছে। তিন/ চার দিনের জন‍্য সময় হাতে নিয়ে আসা যায় সিল্করুটে। দেখে মন-প্রাণ জুড়িয়ে নেওয়া যাবে। জলে রঙে প‍্রকৃতির ক‍্যানভাস মুগ্ধ হওয়ার মত।

প্রথমে পৌঁছাতে হবে সিকিমের লিঙথামে। শিলিগুড়ি শহরের পাশের সেবক রোড ধরে এগিয়ে গেলে বাঁধবে ছোট একটি লোকালয় -রংপো। এখান থেকে ঘন্টা চারেক গাড়িতে চলার পর অপরূপ প্রকৃতি পাহাড় টিলা দেখতে  দেখতে পৌঁছে যাবে রঙ্গোলী বাজারে। এখান থেকে সিল্ক যাওয়ার অনুমতি পত্র পাওয়া  যাবে। গাড়ির ড্রাইভারকে I Card/ Adhar Card দিলেই ওরা অনুমতির কাগজ সংগ্রহ করে দেবে। তৎক্ষণে রংগোলি বাজারটা দেখে নেওয়া যাবে। এই বাজারে পাওয়া যাবে খুব আকর্ষণীয় স্মরাক বস্তু। 

রংগোলি বাজার থেকে ৮ কি মি লিংথাম। এখানে ঢোকার মুখে অনুমতি পত্র জমা করতে হবে। এখানেই হোম স্টে রয়েছে অনেক। কোন হোটাল পাওয়া যাবেনা। পারিবারিক আতিথ‍্যে থাকার সুব‍্যবস্থা আছে।

ঘুরতে বেরিয়ে এবার দেখা যাবে বাকটার খোলা। খোলা কথাটির অর্থ হলো নদী। পাহাড়ি নদী। নির্জনতায় প্রাক‍ৃতিক সৌন্দর্য‍্য উপভোগ করা যাবে। খোলার পাশ বরাবর হাঁটতে আর অনন‍্য সাধারণ রূপ দেখতে দেখতে অন‍্য ভাবের জগতে চলে যাওয়া যায়।  এবার নিকটবর্তী বৌদ্ধ মঠ আর মন্দির দর্শন করা যাবে। প্রশস্ত এলাকা জুড়ে একটি বৌদ্ধ মঠ। শান্ত পরিচ্ছন্ন এলাকা ঘুরতে বা কিছুক্ষণ সময় কাটাতে ভালো লাগবে খুব। 

এবার পেয়ে যাবেন অরিটর হ্রদ। আছে প‍্যাডেল চালিয়ে বোটিং করবার ব‍্যাবস্থা। 

তৃতীয় দিনে শাল, সেগুন আর বাঁশের সমারোহে পেয়ে যাবেন জুলুকে । লিংথাম থেকে বেশী দূরে নয়। জুলুক সেনা অধ‍‍্যসিত বসতি। একটু নিরাপত্তার কড়াকড়ি যথেষ্ট। জুলুক থেকে একটু গেলে জুলুক লুপ পাওয়া যাবে। থাম্বি ভিউ পয়েন্টের অনন‍্য সাধারণ দৃশ‍্য দেখলে মন ভরে যাবে। 

জুলুক এবং লক্ষ্ণণচক পেরিয়ে পৌঁছান যাবে নাথাং ভ‍্যালির কাছে। এখানে মিলিটারির ক‍্যাম্প। দেখা যাবে হরভজন সিংহের ব‍্যাবহারিত ব‍্যাঙ্কার। ব‍্যাঙ্কারের ভিতর ঘুরে দেখা যায়। এলাকাটি ভারত-চিন বর্ডার সিমান্ত দেখা যাবে। এই টুকলা উপত‍্যকায় রয়েছে অ‍্যালিফ‍্যান্ট লেক, স্টবরে লেক, কুপুপ ভ‍্যালি প্রভৃতি। খুব উপরের পাহাড় থেকে ঝর্ণা নামছে -নাম কিউ খেলা জলপ্রপাত। দেখে নিন রেলপো  নদীর উপর ঝুলন্ত সেতু। সেতুর উপর উঠলেই  দুলতে থাকে। শিহরণ জাগে। চারিদিক চোখ রাখলে চোখ জুড়িয়ে যাবে। এবার সিল্ক রুট ঘোরা শেষ করে বাড়ি ফেরার পালা।

কীভাবে  পৌঁছান যায় -

হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে  রোজই আছে  নিউ জলপাইগুড়ি অবধি। স্টেশন বাইরে পেয়ে যাবেন শেয়ার গাড়ি। 

থাকা -খাওয়া -

সুন্দর সব হোম স্টে ছাড়া হোটেল  নেই। পারিবারিক আতিথ‍্য দারুন।


চিনা উপনিবেশে 

একদিনের জন‍্য ঘুরে আসি, চলুন---"১৮০০ শতকে দক্ষিণ২৪ পরগণায় গড়ে উঠেছিল  চিনা উপনিবেশ। ইংরেজদের আগেও বাংলায় গড়ে উঠে ছিল ডাচ, ফরাসি,পুর্তগিজদের উপনিবেশি। চিনারও গড়ে তোলে উপনিবেশ। চিনের ক‍্যান্টনবাসী আছুসাহেব গড়ে তোলেন বাংলায় এই চিনা উপনিবেশ। বলা চলে তিনিই প্রতিষ্ঠাতা। ঘটনা জানা দরকার-- এক সময় বাংলা-বিহার থেকে ইংরেজ ব‍্যাবসায়ীগণ  আফিন রপ্তানী ব‍্যাবসা চালতো  এই  ক‍্যান্টিনে। এখানেই আলাপ হয় আছু সাহেবের সাথে। আছু সাহেবের ইচ্ছা ছিল ব‍্যাবসার সাথে সাথে চিনা মানুষদের দেশ থেকে নিয়ে এসে একটা কলোনী স্থাপন করার। কলোনি স্থাপনের উদ্দেশ‍্য নিয়ে বিস্তারিত তথ‍্য ও পরিসংখ্যান দিয়ে ততকালিন গভর্নর ওয়ারেন হেস্টংসের কাছে আবেদন করেন। আবেদন মঞ্জুর হয়। আছু সাহেব চিন দেশ থেকে  বেশকিছু চিনা মানুষদের নিয়ে এসে চিনা কলোনীকে মনের মত করে  সাজিয়ে তোলেন। আছুসাহেবকে দক্ষিণ ২৪ পরগণার বজবজ এলাকায় কুত্তানি ক্রিমোর  উপরি ভাগে  কলোনী গড়তে  জমি দেওয়া হয়। চিনা জনগণ এই এলাকায় চাষাবাদ শুরু করেন। আঁখ চাষ হওয়ার ফলে চিনিকল স্থাপন হয়। নীল চাষ করে বেনিয়ারা। চিনি যেত  কলকাতায়   আর নীল যেত ইংল‍্যান্ডে। 

এরপর আছু সাহেবের মৃত‍্যু হয়। কলোনী ফাঁকা হতে শুরু করে। কিন্তু আছুর টানে কিছু চিনা মানুষ থেকে যায়। এখনও চিনা মানুষকে  এখানে দেখা যায়। আছু সাহেবের সমস্ত সম্পত্তি সরকারের পক্ষ থেকে  ক্রোক করা হয়। নিলামে বিক্রি হয়। বর্তমানে অছির পুরা এস্টেট পুজালী পুরসভার অন্তর্গত। 

কীভাবে  যাবেন :-- 

শিয়ালদহ সাউথ থেকে বজবজে পৌঁছে অটো কিম্বা বাসে করে চলে আসুন প্রাচীন অছিপুর এস্টেটে। প্রথমে আসুন চিনাম‍্যানতলা। ঐখানে উপনিবেশের স্মৃতি নিয়ে একটা মন্দির দেখতে পাবেন। মন্দিরে প্রতিদিন বুদ্ধদেবের পূজো  হয়। মন্দির থেকে একটু এগুলেই দেখা যাবে আছুসাহেবের সমাধি ক্ষেত্র। লাল ফলকে খোদাই করা স্মারক। প্রতি বছর চিনা নববর্ষে চিনা মানুষরা সমবেত হন, সমাধি স্থলে আছুসাহেবকে শ্রদ্ধা জানাতে।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ