ভালকী ঘুরতে চলুন
ভালকী গ্রামের আগের নাম ছিলো 'কাইরপুর'। এই গ্রামে সদ্ গোপ রাজ ভাল্লুপদ রাজধানী করেছিলেন বলে পরবর্তীকালে কাইরপুরের নাম হয় ভালকী।
কলকাতা থেকে ১৪২ কিমি আর বর্ধমান থেকে ৪০ কিমি দূরে ভালকী। চারদিক শালবন। একেবারে নিস্তব্ধ, নিঝুম। পাশেই একটি অন্যন্য সুন্দর লেক বা জলাশয়। দেখে চোখ জুড়িয়ে যাবে। অভয়ারণ্য নাম দেওয়া হয়ছে মাচান প্রকল্প। জলাশয়ের চারদিকে ঘিরে তৈরি হয়েছে বাগান। পাতাবাহার, নানান ফুল গাছ দিয়ে সাজানো হয়েছে অপরূপ।জলাশয়ের চারদিক চারটি বেদী আর বিশ্রামের শেড আছে। জলাশয়ে ঘুরবার জন্য বোটিং-এর ব্যাবস্থা আছে।
ভালকী গ্রাম পঞ্চায়েতর পক্ষ থেকে সুন্দর বাংলো নির্মাণ করা হয়েছে। ৪/৫ টি ঘর পর্যটকদের জন্য রেডি। খাওয়া দাওয়ার জন্য কেয়ারটেকার অথবা নিজেদের রান্না করার ব্যাবস্থা রয়েছে।
ভালকী গ্রামের আশেপাশে অনেক কিছু দেখার আছে। যেমন মাচান, বাঁশের নয় কংক্রিট ইট পাথরের তৈরী মাচান। মোট৫ খানা ইটের পিলারের উপর। বিশালাকায় দৈত্যের মত দাঁড়িয়ে আছে অর্দ্ধ ভগ্ন অবস্থায়। স্থানীয় গ্রামবাসীগণ এটাকে মনুমেন্ট হিসাবে মনে করে। মাচানটি কেন তৈরী হয়েছিল তা নিয়ে মতভেদ আছে যথেষ্ট। মাচানটি নিয়ে গবেষণা চলছে এখনো। মাচান দেখতে প্রচুর পর্যটক এখানে আসেন।
এবার অভিরামপুর থেকে ১ কিমি দূরে বাহাদুরপুর। এই গ্রামে টেরাকোটার কাজে নির্মিত শিব, নারায়ণ, গোপীনাথের মন্দির দেখা যাবে। গবেষকরা এই নির্মাণ সম্পর্কে বলতে পারেন। গ্রামবাসীগণ সম্পূর্ণ উদাসিন। এবার অভিরামপুর থেকে ঘুরে আসা যাবে যমুনা দিঘি মৎস্য প্রকল্প। চারিদিক উজ্জ্বল আলোর ঝলকানি। জলধারটি তাই খুব আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
এবার অমারগড়- মহেন্দ্র রাজার বীরত্বের কাহিনী 'শিবাক্ষ কিঙ্কর ' কাব্যে পাওয়া যাবে। অমারগড়ে অনেক রাজা অভিযান করেছেন এবং বীর রাজা ও তার যোদ্ধাগণ জীবনপণ করে দেশ রক্ষা করেছেন। আজও আমারগড়- ভালকী প্রাচীন ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।
মানসিক প্রশান্তির খোঁজে ঘুড়ে আসুন শালবন
সারি সারি শাল আর ঝাউগাছ। সঙ্গে নানা রকমের পাখির কলকাকলি। বিশাল বনের মাঝ দিয়ে চলে গেছে মেঠোপথ। পথ ধরে এগিয়ে গেলে মিলবে গভীর অরণ্য। এমন দৃশ্য দেখে যে কারো মন ভরে উঠবে। মনে জাগবে অন্যরকম অনুভূতি।
সেকালের বীরনগর-
বীরনগরের প্রাচীন নাম উলা। আইন-ই-আকবর ও কবি কঙ্কন মুকুন্দরামে চন্ডীতে উলার নাম পাওয়া যায়। উলা নামটি কোথা থেকে এসেছে তা নিয়ে মতান্তর আছে। কেউ বলেন উলুবন কেটে বসতির জন্যই নামকরণ হয় উলা। আবার কারো মতে ইরানী মতে আউল (জ্ঞানী) থেকেই উলা। যাইহোক উলাকে নিয়ে নানান রসিকতা এখনো চলে আসছে। অতিতে এখানে খুব ডাকাতের উপদ্রপ ছিল। বীর বাসিন্দারা ভয়ঙ্কর ডাকাতের শায়েস্তা করে তৎকালীন কোলকাতা কোর্ট অব সার্কিটের জর্জ সাহেব খুশী হয়ে এই স্থানের নতুন নাম দেন বীরনগর। সেই হলো বীরনগর।
বহু টোল আর চতুষ্পাঠী ছিল উলাতে। পন্ডিত চতুর্ভূজ ন্যায়রত্ন, সদাশিব তর্কালঙ্কার, ভবানীচরন ন্যায়ভূষণ, কবি দূর্গা দাসের নাম অনেকই শুনেছেন। বিশেষত রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সময়ে পান্ডিত আর কুলগৌরবের খ্যাতি দিগ্বিদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল।
এককালের সমৃদ্ধ উলার অতিতের সব ঐতিহ্য নষ্ট হলেও আজও প্রচুর মন্দির-দেবস্থান দেখা যায়। ওলাইচন্ডি এখানকার জাগ্রত দেবী। এই দেবীকে কেন্দ্র করে প্রচুর প্রবাদ, ইতিহাস, কিংবদন্তি ছড়িয়ে আছে। পূজা পদ্ধতি খুবই অদ্ভূত। প্রতি বছর বৈশাখী পূর্ণিমার দিন ওলাইচন্ডির মেলা বসে ৩ দিনের জন্য। প্রথমে অন্তজ শ্রেণীর মানুষ যথা হাড়ি, ডোম, বাগ্দী সম্প্রদায়ের মানুষ শুকর বলি দিয়ে দেবীর পুজো উদ্বোধন করেন , তারপর বর্ণহিন্দুদের পুজো শুরু হয়। এই নিয়মের জন্য অনেকেই মনে করেন মূর্তিটি বৌদ্ধ যুগের।
মুকুন্দরামের চন্ডিমঙ্গলে বিবরণ অনুসারে গঙ্গা নদীপথে সিংহল যাত্রায় চাঁদ সওদাগরের পুত্র শ্রীমন্ত সওদাগর উলায় সপ্তডিঙ্গা ভয়ানক দূর্যোগের মধ্যে পড়ে। নদীপথে একটি পাথর খন্ড তুলে এনে প্রাচীন বট গাছের নীচে স্থাপন করলে , তবেই দূর্যোগ থেমে যায়। পাশেই একটি খাল, গঙ্গার পুরাতন পথ এটি। এখানেই শ্রীমন্তের ডিঙ্গা আটকে ছিল, ওলাইচন্ডির স্থানে আছে একটি পুরাতন বটগাছ।
বীরনগরে উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান হলো রাধাকৃষ্ণের জোড়াবাংলা মন্দির। ১৬৯৪ খ্রিষ্টাব্দে মুর্শিদকুলি খাঁর নায়েব রামেশ্বর মুস্তৌফি এই মন্দিটি স্থাপন করেন। মন্দিরের চারপাশ টেরাকোটার কাজ দৃষ্টিনন্দিত। মুস্তৌফিদের ওলাইচন্ডির শিল্পকর্ম অসাধারণ শিল্পনৈপুন্যের নিদর্শন মেলে। ঁঈশ্বরচন্দ্রের দ্বাদশ মন্দিরগুলো দেখার মত। ১টি কালি, ১ টি দূর্গা মন্দির ও ১০টি শিব মন্দির আছে। আদতে বীরনগর একটু পড়াশুনা করে গেলে ভালো লাগবে।
কীভাবে পৌছাবেন;--
শিয়ালদহ থেকে কৃষ্ণনগর লোকালে নামতে হবে বীরনগর। সময় লাগবে ২ ঘন্টার মত। স্টেশন থেকে চুক্তি করে TOTO ভাড়া করে সব স্থানগুলি দেখে নেওয়া যায়।
0 মন্তব্যসমূহ