Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিধন্যা আগরতলা নীরমহল ও গোমতী নদীর তীরে ঘুরে আসার গাইডলাইন

রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিধন্যা আগরতলা নীরমহল ও গোমতী নদীর তীরঃ-



উত্তর-পূর্ব ভারতের কোলে সবুজ ছায়াময় অন্যতম পাহাড়ি রাজ্য ত্রিপুরা। মৃণাল সেনের অসামণ্য তথ্যচিত্র ' মুখর বনানী ' সেই সত্যকে প্রমাণ করে। এই ভূখন্ডের কোন এক অমোঘ টানে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৭ বার গিয়েছেন। ৪ বার গিয়েছিলেন রাজ অতিথি হয়ে। শুধু তাই নয় বঙ্গ সংস্কৃতি হিসাবে এই রাজ্যের সাথে খুব মিল আছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ত্রিপুরা সাহায্য করেছিল অনেক। 
চারিদিকে সবুজের সমারোহ। নানা জনজাতি আর ধর্মের মানুষের মধ্যে অপূর্ব সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের সমাবেশ দেখা যায়। অসাধারণ ভৌগোলিক অবস্থান। রাজ্যের তিন দিক জুড়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশ। উত্তর-পূর্বে অসম ও মিজরাম রাজ্য। ৮ টি জেলা ও ২৩ টি মহাকুমা নিয়ে গড়ে উঠেছে ভারতের ক্ষুদ্রতম রাজ্য এই সুন্দরী ত্রিপুরা। ত্রিপুরা শব্দের উৎপত্তি আদিবাসীদের ভাষা ককবরক থেকে।
ককবরক ভাষায় ' তৈ ' মানে জল। 'প্রা' মানে কাছে। তৈপ্রা থেকে ধীরে ধীরে তেপ্রা, তিপ্রা শেষে ত্রিপুরা। কোন কোন গবেষকের মতে পৌরাণিক রাজা ত্রিপুরের নাম থেকে । আজকের ত্রিপুরা বর্ণময় ইতিহাসের এক সাক্ষী। অতীতে ছিল রাজ শাষণ। রাজারা ছিলেন চন্দ্রবংশীয় ক্ষত্রিয়। ' রাজমালা' অনুযায়ী, প্রায় ১৩০০ বছরের রাজত্ব কালে ১৮৪ জন রাজা এ রাজ্যে  রাজত্ব করে আসছেন।১০৪৯১.৬৯ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে গড়ে ওঠা ত্রিপুরা। ৬০% বনাঞ্চল। ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা। ছাইদা নদীর তীরে সাজানো-গোছান এই স্বপ্নের নান্দনিক শহর। আগে নাম ছিল হাবেলি। এগানে প্রচুর আগর গাছ ছিল তার থেকে নাম আগরতলা। 
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের পায়ের ছোয়া ধন্য, প্রবাদ প্রতিম সঙ্গীতশিল্পী শচীনদেব বর্মণ ও আন্তর্জাতিক অ্যাথেলিক দীপা কর্মকারের স্মৃতি বিজড়িত এই আগরতলা। এবার একে একে দেখত হবে ১) মেডিকেল কলেজ ও হাইকোর্ট ২) ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় ৩)  রবীন্দ্রভবন। ৪) রাবার প্রসেসিং সেন্টার, রেল স্টেশন ও বিমানবন্দর ৫) বিধানসভা ভবন স্টেডিয়াম ৭) হরিটেজ পার্ক ৮)দূর্গাবাড়ি ও চা-বাগনা ৯) আগরতলা শহরের মাঝখানে আধ মাইল জুড়ে উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ। এই প্রাসাদের নামকরণ করেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। অসাধারণ স্থাপত্য নিদর্শন।১৮৯৯ সালে এই স্থাপত্যের কাজ শুরুহয়, কাজ শেষ হয় ১৯০১ সালে। মুঘোল ও গথিক শিল্প শৈলিতে এই প্রাসাদ তৈরী করেন মহারাজ রাধাকিশোর মাণিক্য। অসাধরন শিল্প শৈলী । অপার মুগ্ধতায় চোখ জুড়িয়ে যাবে। দোতালা বাড়িতে ৩ টি বিশালাকৃত গম্ভুজ। বাড়িটির উচ্চতা ৮৬ ফুট। নাচঘর, অতিথি শালা, রাজ দরবার, আছে। পূর্ব ভারতের সবচেয়ে সুন্দর প্রাসাদ। ২০১৩ সালের ২৫ শে অক্টোবর ভারতের উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি উজ্জয়ন্ত রাজ প্রাসাদের মিউজিয়াম উদ্বোধন করেন। বিদেশী পর্যটকের কাছে খুবই আকর্ষণীয়। ১০) আগরতলা শিব মন্দির আর জগন্নাথ মন্দির ১১) বাংলাদেশ - ত্রিপুরা বর্ডার ও চেক পোষ্ট ১২) পুষ্পবন্ত প্রাসাদ। ১৯১৭ সালে মহারাজ বীরেন্দ্রকিশোর উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ থেকে  ২ কিলোমিটার দূরে একটি বাড়ি তৈরি করেন। ১৯২৬ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ত্রিপুরা ভ্রমণের সময় এই বাড়িতে  ওঠেন। এখানে তিনি গান লেখেন বেশ কটি। ১৩) খুরলুঙ। আগরতলা থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, নজরকাড়া সৌন্দর্য। ১৪) নেহেরু পার্ক। ১৫) চতুর্দশ দেবতা মন্দির ১৬) বেণুবনবিহার এক বুদ্ধ মন্দির ১৭) উমা - মহেশ্বর মন্দির ১৮ ) রূপসী ও প্রেক্ষাগৃহ ১৯) ইসকন মন্দির ২০) বিগ বাজার সিটি সেন্টার ২১) পুষ্পবন্ত প্রাসাদের পিছনে দোতলা বাড়ি মালঞ্চ নিবাস ২২) যাদুঘর ২৩ ) হস্তশিল্প গ্যালারি। রাধামাধব মন্দির,  সুকান্ত একাদেমি, ক্যাপিটাল ক্যমপ্লেক্স বুক ওর্য়াল্ড। ৪০  কিলোমিটার দূরে অভয়ারণ্য। ১৮৫৪ বর্গ কিলোমিটার  এলাকা জুড়ে জাতীয় পার্ক। ১৫০ প্রজাতির পাখি, ১০০ প্রজাতির বন্য প্রাণী, ৪৫৬ রকমের উদ্ভিদ  দেখা যাবে। এরপর নীরমহল দেখা যাবে ৩৩ কিলোমিটার দূরে। নীলমহর না দেখলে ত্রিপুরা ভ্রমণ বৃথা। রুদ্রসাগরের বুকে নীলমহর ভেসে রয়েছে রাজাদের এক অপূর্ব সৃষ্টি। রাজা বিক্রম কিশোর ১৯৩০ সালে তৈরি করেন।   এবার পৌঁছাতে হবে উদয়নগর। আগে এর নাম ছিল রাঙামাটি। ১৫৬৭ সালে রাজা উদয় মাণিক্য উদয়নগরের নাম রাখেন। ৫১ পীঠের এক পীঠ ভূবনেশ্বরী মন্দির। গোমতীর তীরে। রবীন্দ্রনাথ বিসর্জন নাটকে মন্দিরের উল্লেখ করেছেন। এবার চলে যেতে হবে অমরপুরে, এখানে জম্পই হিলস আর ডম্বুর লেক দেখার মত।
ত্রিপুরার অমলিন স্মৃতি মনজুড়ে থাকবে চিরদিন।
কী ভাবে যাবেন ঃ কলকাতা স্টেশান থেকে প্রতিদিন আগরতলা ট্রেন ছাড়ে। আর প্লেনে দমদম থেকে আগরতলা ফ্লাইটে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ