Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

গাড়োয়ালের নিভৃতে চোরাবালিতাল হয়ে দেওরিয়া -ম অসাধারন এক ভ্রমন অভিজ্ঞতা

 গাড়োয়ালের নিভৃতে চোরাবালিতাল হয়ে দেওরিয়া


রদুন এক্সপ্রেসে নির্ধারিত দিনে হরিদ্বারের উদ্যেশে রওনা হওয়া গেলো। দু'রাত কাটিয়ে পরের দিন হরিদ্বারে নামতেই এক ঝলক ঠান্ডা শীতল হাওয়া ক্লান্তিকর ট্রেন জার্নি নিমেশে উদাহ হয়ে গেল। একটু বিশ্রাম নিয়ে হরিদ্বারের গঙ্গা আরতি দেখে নিলাম।
ভাড়া করা গাড়িতে এবার রওনা হিমালয়ের গহন অন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। দেবপ্রয়াগ, রুদ্রপ্রয়াগ ছাড়িয়ে যখন গাড়ি গৌরকুন্ডে পৌঁছাল তখন পড়ন্ত বিকেল। আমরা উঠলাম ভারত সেবাশ্রমের নিশ্চত আশ্রয়ে।
পরদিন খুব ভোর বেলায় রওনা হলাম কেদারনাথের উদ্দেশ্যে। এই সময়ে পূর্ণাথীদের ভীড় কম থাকে। কিন্তু শুধু কেদারনাথ নয়, এবার লক্ষ মন্দাকিনী হিমবাহ ছেড়ে চোরাবারিতালে। সময় নিয়ে হিমালয়ের অফুরন্ত ভান্ডারের কিছু সম্পদকে প্রাণভরে উপলব্ধি করার ইচ্ছে। দু-চোখ ভরে হিমালয়ের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে অনেকগুলি ঝর্ণা পেরিয়ে পৌঁছে গেলাম রামওয়ার চটিতে।
দশ-বারো মিনিট বিশ্রাম নিয়ে এগিয়ে চললাম সামনের দিকে। যাইহোক দূপুর বারোটার মধ্যে পৌঁছে গেলাম কেদারনাথের চরণে। বেলা বাড়ছে, পড়ন্ত বেলায় কনে দেখা আলোতে মন্দিরের পিছনে কেদারশৃঙ্গ অসাধারণ সুন্দর হয়ে উঠলো। সন্ধ্যারতি কেদারনাথের এক পরম প্রাপ্তি। এইখানে কেদারনাথকে দু-হাতে স্পর্শ করা অতীব ভাগ্যের বিষয়। আরতি দেখে বাইরে দেখতে পেলাম সাবুদানার মত বরফ পড়ছে। মাথায় গায়ে মুক্তোদানা যেন ঝরে পড়ছে। বাইরে প্রবল ঠান্ডা, তাই লেপের তলাই ডুকলাম। আগামী কাল চিন্তা চোরাবারিতাল কখন যাবো।
মন্দিরের ঘন্টা ধ্বনীতে ঘুম ভাঙলো। এত শীতে স্নান সেরে তৈরি হলাম।
তখনও পুবের আকাশ ফর্সা হয়নি ভালো করে। কী অসাধারণ ধ্যানগম্ভীর হিমালয়ের সৌন্দর্য্য। এই সৌন্দর্যের ব্যাখ্যা কি ভাবে যে দিতে পারি !
হিমালয়ের উচ্চকোটি সাধুর দর্শন মেলে। এক সাধু একটা রুদ্রাক্ষের মালা দিলেন। কেদারনাথ মন্দির যেখানে শেষ, তার ৪ কিলোমিটার গেলেই চোরাবালিতাল। ট্রেকিং পথ খুব মারাত্মক রকমের চড়াই। গাইড নেওয়াটা খুবই জরুরী। গাইডের নাম মুরলী সিং নেগী। সে হাই অল্টিচুড ট্রেকিং-এর গাইড। পয়সার বেশী আবদার নেই। অতএব চল্লাম তার সাথে। ধীরে ধীরে পায়ে পায়ে এগিয়ে চললাম। ডান দিকে পুরো কেদারনাথ পড়ে রইল। মাথার উপর ঝকঝকে নীল আকাশ, সামনে তুষারমৌলি হিমালয়। স্বর্গরাজ্যের দিকে এগিয়ে চলেছি, নেগীর মুখে নানান শৃঙ্গ অভিযানের গল্প শুনতে শুনতে। মাঝেমাঝে তার হুশিয়ারী " সামলকে  চলো, কোহি জলদি নেহি।"
পুবের আকাশের সোনা ঝরা আকাশের রোদ   গায়ে মেখে মন্দাকিনি হিমবাহের সামনে এসে দাঁড়াই। হিমবাহের উপর রোদ পড়তেই চোখ যেন ঠিকরে ওঠে। লাঠি ভর করে আস্তে আস্তে হিমবাহ পার হলাম। এই হিমবাহ থেকে মন্দাকিনী নদীর জন্ম। দীর্ঘ ১০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে রুদ্রপ্রয়াগে মিশেছে অলকানন্দায়। পথে সথী হসাবে পেয়েছে দুধগঙ্গা, মধুগঙ্গা, স্বর্ণদুয়ারী ও সরস্বতীকে। ধীরে ধীর পৌঁছে গেলাম তালের সামনে। কী সুন্দর নীল টলটলে জল।
ধ্যানগম্ভীর তুষারমৌলি হিমালয়ের শীতল স্পর্শে সবাই আমরা ধন্য হলাম। সামনে সুউচ্চ শৃঙ্গেরা, মুরলি হাত বাড়িয়ে দেখাচ্ছে কেদারনাথ, ভারতকুন্ডা, কীর্তিস্তম্ভ, সমেরুদেব, কাকে ছেড়ে কাকে দেখি। এখানে বেশীক্ষণ থাকবার অনুমতি নেই - নেগী তাড়া দিচ্ছিলেন ফেরার জন্য। কারণ হিমবাহ গলতে শুরু হলে নদী পার হওয়া দুষ্কর।

কেদারনাথ কাটিয়ে এবারের গন্তব্য ভৈরনাথ মন্দির দর্শন করে মন্দিরের চাতালে কিছুটা বিশ্রাম করে রওনা দিলাম উঘিমঠের উদ্দেশ্যে। উঠলাম এখানে ভারত সেবাশ্রমে সংঘের আবাস স্থলে। সংঘের বারান্দায় মনে হয় পাহাড়ের কোলে ঝুলছে। আকাশের রং বদলের পালা শুরু হল। পাহাড়ের দৃশ্য অবর্ণনীয় । নীচে মন্দাকিনি নদী বহে চলছে।
বুগিয়ালে রাত কাটাবার ব্যাবস্থা হলো।পরদিন রওনা হলেম দেওরিয়া তালের পথে। পাহাড়ের চড়াই ভেঙ্গে এগুতেই সামনে সমতল ভূমি, একটা ছোট শিব মন্দির দেখা গেল। পাহাড়ের ঢালে ফুলের সমারোহ। নাম না জানা পহাড়ি পাখি। সামনে এগোতেই চোখে পড়ল সুন্দর হ্রদ চোখে পড়ল। এর নাম দেওরায়াতাল।  এই তাল দেখার জন্য মানুষ উদগ্রীব হয়ে আসে। সামনে দেখলাম চৌখাম্বা শৃঙ্গ, কি বিশাল আকৃতি, তাকে ঘিরে রয়েছে দৌপদী, শ্রীকন্ঠ, গঙ্গোত্রী, ১-২-৩, ভাতৃকুন্ডা, সুমেরু, কেদারনাথ, সতোপন্থ, স্বর্গরোহিনী সব নামী-দামী পর্বত শৃঙ্গরা। দূরে নীলকন্ঠ তালের জলে চৌখাম্বার প্রতিবিম্ব দেখা পর্যটকদের কাছে আকাঙ্খিত বস্তু।
এবার ফিরতে হবে। সারিগ্রাম থেকে গাড়িতে হরিদ্রার।  আড়াইদিন ট্রেন জার্নি শেষে হাওড়া
থাকার স্থানঃ- ভারত সেবাশ্রম সংঘের আশ্রম। তাঁবু। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ