জগদলপুরের জলপ্রপাত ভারতের মিনি নয়াগ্রাঃ--
ছত্তিশগড়ের বস্তার জেলাকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের খনিও বলা চলে। কি নেই এখান, নদী, নালা, ঝোরা, খাল-বিল, গুহা, পাহাড়ি নদী, গুহা-মন্দির,টিলা, জলপ্রপাতের এক অনন্য সহবস্থান। এই এলাকা সব সময় আপনাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। এখানকার জন গোষ্ঠির ৭% হচ্ছে উপজাতি অর্থাৎ ট্রাইব। এদের একটা বড় অংশ বন-জঙ্গলে বসবাস করে। তাঁদের সাংস্কৃতিক সুরক্ষ্মার জন্য বহিরাগতের যোগাযোগের ক্ষেত্র একটা সীমারেখা রেখে দিয়েছে। এই অঞ্চলের বড় উৎসব হচ্ছে " দশেরা "। উপজাতিদের চারু ও কারু শিল্পের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে চতুর্দিকে। বস্তার জেলা ডোকরা শিল্প ও হাতের কাজের জন্য জগত বিখ্যাত। এই বস্তার জেলা সদর শহর জগদলপুর বস্তারের রাজধানী ছিল। ঐতিহাসিকদের মতে রামচন্দ্রের পায়ের ধূলায় এই স্থান দন্ডকারণ্য নামেও পরিচিত ছিল। ইন্দ্রাবতি নদীর কুলে অবস্থান জগদলপুরের। এই জেলার চিত্রকুট জলপ্রপাতকে ভারতের নয়াগ্রা জলপ্রপাত বলে পৃথিবী বিখ্যাৎ। জগদলপুরের দু'প্রান্তে দু'টি জলপ্রপাত ১. চিত্রকোট ২. তিরথগড়। বাসস্ট্যান্ড থেকে দুটোর দূরত্বই সমান। পশ্চিমে ৩৯ কিমি দূরে চিত্রকুট আর দক্ষিণে ৩৯ কিমি দূরত্বে তিরুথগড়। দৃশ্যশোভায় দুজনার দু'রকমের। এছাড়া আরো ৪ টি জলপ্রপাত আছে। যেমন মনডাওয়া, চিত্রধারা, তামড়া-গুমার, ধূমার জলপ্রপাত। জগদলপুরে ২ টি জলপ্রপাত থাকায় ভ্রমণপিপাষু মানুষেরা এখানই বেশী আসেন।
২.
প্রায় ৩০০ বর্গ কিলোমিটার প্রশস্ত চিত্রকুট জলপ্রপাত দেখার জন্য অনেকেই ভাড়া গাড়ি করে যান। সবারই মনের মধ্যে এক অদ্ভূৎ শিহরণ ও কৌতুহল সৃষ্টি হয় জলপ্রপাত দেখবার জন্য। চিত্রকুট জলপ্রপাতের উৎস্য কাবেরী নদীর শাখা নদী ইরাবতী বা ইন্দ্রাণী বা ইন্দ্রাবতী নামে পরিচিত। এই নদীটিই ঝাঁপিয়ে পড়ে ১০০ ফুট উপর থেকে নীচে নামে। বর্ষায় এই নদী ফুলে ফেঁপে ওঠে। তখন এর বিস্তার হয় প্রায় আধ কিলোমিটার। বিভিন্ন ধারায় জলপ্রপাতের জল গড়িয়ে পড়ে। বর্ষার এই ভয়ঙ্কর অবিশ্বাস্য রূপ দেখতে মানুষের ঢল নামে এখানে। ভালতের বিশাল চওড়া জলপ্রপাত এটি। তাই নায়গ্রার সাথে তুলনা করা হয় এই জলপ্রপাতকে। জলের বেগে বিচ্ছুরিত জলকণায় সূর্যের আলো পড়ে এক মোহময় রামধনুর সৃষ্টি হয়। এই জলধারা দূরে গোদাবরীতে মিশেছে। নৌকা বিহারেরও ব্যাবস্থা আছে। আপনি নৌকায় চলে যেতে পারন উৎপত্তিস্থলে। আপনার মন প্রাণ আলাদা একটা অনুভূতিতে ভরে যাবে অবশ্যই।
সন্ধ্যের প্রাকমুহূর্ত পেরিয়ে আর কিছু সময় পরে চিত্রকুটের আর এক নতুন রূপ আপনার সম্মুখে ফুটে উঠবে। অস্তগামী সূর্যের রক্তিম আভায় স্নাত চিত্রকুটের বুকে অন্ধকার নেমে আসার আগেই বিজলিবাতি জ্বলে উঠবে। সে আলো ঠিকরে গিয়ে পড়বে জলখাবার ধারার উপর। আলোর বন্যায় স্নান করে চিত্রকুট নতুন সাজে, নতুন রূপে দেখা দেবে।
৩.
দ্বিতীয় দিনঃ আর একটি জলধারা দেখতে হবে। যাওয়ার পথে পড়বে একটি অভয়ারণ্য, ৪০ কিলোমিটার দূরে। ২০৫ বর্গ কিমি বিস্তৃত কাঙ্গেরঘাটি ন্যাশনাল পার্ক (Kangerghati National Park) চারিদিক জঙ্গলে ঘেরা এই স্থানটি আদিবাসীদের বসবাস। নানা সম্প্রদায়ের আদিবাসীরা এখনে থাকেন। অভয়ারণ্যের বুক চিরে রয়েছে কাঙ্গের নদী ( Kanger River) চিতাবাঘ, বন্য শূকর, চিতল হরিণ, নানান জন্ত-জানোয়ারের ও হরেক কিসিমের পাখির কলরবে মুখরিত এক সুন্দর পরিবেশ। পাখিদের মধ্যে পাহাড়ি ময়না অন্যতম। এখানে থাকবার জন্য রয়েছে বনবাংলো। একটু এগিয়ে জলপ্রপাত - তিরথগড় (Tirathgarh waterfalls ) কাঙ্গের নদীর এক ছোট শাখা নদী মুগাবাহার ১১০ মিটার উঁচু থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে সৃষ্টি করেছে জলপ্রপাত। এর বিস্তৃতি প্রায় ১৬০ মিটার। পাহাড়ের ধাপে ধাপে জল নামছে নীচে। তবে সশব্দ জল পড়বার দৃশ্য উপভোগ করতে হলে ২১৪ ফুট ধাপ বেয়ে ৯০ ফুট নীচে নামলে আপনি দেখতে পাবেন ভয়ঙ্কর সুন্দর, হাস্নুহানা ফুলের মত সফেদ জলরাশি গড়িয়ে পড়ছে। রোমাঞ্চে ভরপুর এক অনন্য অসাধরণ পরিবেশ।
এবার অভয়ারণ্যের পরিবেশ দেখতে আসুন।
চারিদিক বন্য গাছেদের ভীড়, অচনা পাখিদের কলতান, হনুমানের দৌড়ঝাঁপ, - কেমন যেন গা ছমছমে নিঝুম পরিবেশ।
তারই মাঝে একটা শিব মন্দির। ২ জন পুরোহিত নিত্য পুজো করেন। ১০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে একটি কুটুমসার গুহা (Kutumsar Cave) গুহার মধ্যে আছে চুনাপাথরের শিব লিঙ্গ। গুহাটির বিস্তৃতি প্রায় দেড় কিলোমিটার।
কীভাবে যাবেনঃ- হাওড়া থেকে চেনাই গামী ট্রেনে বিশাখাপত্তনামে এসে। ট্রেনে বা বাসে উঠতে হবে। এপথে সামনে পড়বে অনেক ট্যানেল, ট্যানেলের মধ্য দিয়ে যাতায়াত খুবই রোমাঞ্চকর। জগদলপুরে থেকে একটা গাড়ী ভাড়া করে নির্দিষ্ট গন্তব্যে।
কোথায় থাকবেনঃ- এখানে অনেক হোটেল রেস্ত অনুযায়ী ওঠা যাবে।।
0 মন্তব্যসমূহ