কুমায়ূনের আলমোড়া আর বিনসরের অপূর্ব দৃশ্য দেখতে চলুন যাই ।
অখন্ড পাহাড়ের গায়ে খন্ড নিস্তবদ্ধতায় মোড়া ছোট ছোট গ্রাম, কুয়াশার ঘনঘটা, হিমালয়ের আদিগন্ত বিস্তৃত বাহার, অরণ্যের অকুন্ড নীরবতা। চুপ চুপ নিশ্চুপের সীমাহীন প্রলেপ পেলবতা। কোথাও কোনরূপ শব্দ নেই, এমনকি পাখির কলতানও নেই, নিজের শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ ছাড়া কান পাতলে আর কিছু না। এ পরিবেশে আপনিই ধ্যানস্থ হবেন। নিঝুম বন্য প্রকৃতি। জনমানব কেউ কোথাও নেই। গভীর অরণ্যানী জুড়ে ছেয়ে আছে শুধু নৈশব্দের একান্ততা। পাহাড় আর অরণ্যের নৈসর্গিক রূপে কয়েকটি দিন ঢুবে থাকে বিমুগ্ধ পর্যটক।
কুমায়ূনের আলমোড়া জেলায় পর্বত আর বনানী অনাবিল শোভার মাঝে বিনসর।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৪০০ মিটার উঁচুতে ঝান্ডিয়ার পাহাড়ের নিরালয় বিনসর। শান্তশ্রী পরবেশে সব পাহাড়েই দেখা যায় বিনসর সকলের চেয়ে আলদা। এখানে ধ্যান-নির্জন বাতাবরণ। প্রকৃতি প্রেমিকের স্বর্গ রাজ্য। অবসর বিনদনের শ্রেষ্ঠ ঠিকানা নিসন্দেহে।
উত্তরপ্রদেশের উত্তর প্রান্তে তুষারাবৃত পর্বতমালায় ঘেরা আলমোড়া। ৫৬০০ ফুট উঁচুতে কুমায়ূনের জেলা শহর আলমোড়া। শালিবাহনের বংশধর কুমায়ূনের চাঁদ রাজাদের রাজধানী ছিল এই শৈল শহর। ১৬৬০ খ্রিষ্টাব্দে হুুমায়ূনের রাজা কল্যাণ চাঁদ এই শহরের পত্তন করেন। পরে ব্রিটিশদের হাতে আধুনিক শহরের পত্তন হয়। প্রায় ২ মাইল দীর্ঘ এই শহরের যতদূর চোখ যায়, শুধু পাহাড় আর পাহাড়। আর তার পশ্চিম চূড়ায় সব প্রাচীন মন্দির আর মন্দির। পশ্চিমে ( ৭,১২০) মিটার উচ্চতায় ত্রিশূল মন্দির। উত্তর-পূর্বে (৭৮১৭) মিটার উচ্চূ ভারতের পর্বত শিখর নন্দাদেবী ছাড়াও নন্দাঘুটি, নন্দকোটা শৃঙ্গ রয়েছে আলমোড়ায়। আলমোড়ার প্রধান নদী কোশী, পিন্ডিরা, সরযূ ও সরযূর শাখা নদী গোমতী প্রবাহিত হয়েছে জেলার দুই ধারের সুউচ্চ পর্বত শ্রেণীর অতল গভীর খাদের মধ্য দিয়ে। ভোট ও খস শ্রেণীর বসবাস প্রাচীন এই পাহাড়ি শহরে। খুব স্বাস্থ্যকর জলবায়ূ এই আলমোড়ায়। বৃক্ষ সমৃদ্ধ অরণ্য সম্পদই এই জেলার প্রধান সম্পদ। পাইন, দেবদারু, চীর, রডডেনড্রন এবং বিশেষ করে শালের আধিক্য চোখে পড়ে এখানে। গহীন অরণ্যে ঘোরফেরা করে হরিণ, নেকড়ে, ভাল্লুকের মত জন্তু গুলো। কমলা, আপেল, চেরি, ন্যাশপাতি, আখরোট এমন কি কলা, আম, জামও জন্মায় এই পাহাড়ে। পর্যাপ্ত ধান, গম, আলুর ধাপ চাষ হয় এই পাহাড়ে। পাহাড়ের উচু স্থানে কোন চাষাবাদ করা যায় না সেখানে পশু পালন হয়ে থাকে। উল্লেখযোগ্য পশু বলতে এখানে চামরি, মোষ এবং ঘোড়া। আলমোড়ায় পশমদ্রব্য, মাদুর, ঝুড়ির ভালো কদর আছে। এখানে কুটির শিল্পকেন্দ্র আছে। আলমোড়ায় সুন্দর নকশার কাঠের কাজ দেখা যায়। আলমোড়ায় বালমিঠাই আর রডেনড্রডান ফুলের স্কোয়াশ প্রায় সব পর্যটকের খুব পছন্দ। পাথরে বাঁধান বাজার ঘাট, দেখার মত। রাস্তার দু-পাশে দোতলা, তিনতলা, চারতলা বাড়িগুলি সব শ্লেট পাথরে তৈরী। অসংখ মন্দির শহর জুড়ে। কাছে ও দূরে। সূর্যদেবতা, ত্রিপুরা সুন্দরী, কাঁসার দেবী, নন্দ দেবীর মন্দির এদের মধ্যে বিখ্যাত। আলমোড়ায় শক্তি পূজার আধিক্য বেশী। নন্দা অর্থাৎ দূর্গা, কুমায়ূনের দূর্গা জাগ্রত নন্দাদেবী। কৈলাশে যেমন শিব তেমনি এখানে নন্দা দেবী। কত যে মন্দির এই কুমায়ূন জুড়ে, বলা কঠিন। শ্রাবণ মাসে মেলা হয়, দেবীর উদ্দেশ্যে তীর্থযাত্রা করে কুমায়ূনের ধর্মপ্রাণ মানুষ। ত্রিশুল শৃঙ্গের পাদদেশে হোম কুন্ডিতে আছে জাগ্রত নন্দদেবী।
শাজাহান বাদশার সমসাময়িক বাজ বাহাদুর চাঁদ সমগ্র কুমায়ূন জুড়ে নন্দদেবীর উৎসব শুরু করেছিলেন তা এখন প্রবাহিত। রবীন্দ্রনাথ ও বিবেকানন্দের স্মৃতি বিজড়িত আলমোড়া। উদয়শংকরের শিল্প সাধনার কেন্দ্র এই আলমোড়া।প্রাচীন মন্দির ছাড়াও আলমোড়ায় দেখার জায়গা বলতে ব্রাইট এন্ড ভিউ পয়েন্ট, স্বামী তুরিয়ানন্দ প্রতিষ্ঠত ভারত সেবাশ্রম আশ্রম, আনন্দময়ী মাতার আশ্রম, ডিয়ার পার্ক, ৫ কিলোমিটার দূরে কালিমঠ। এখান থেকে নেপাল দেশের পাহাড় দেখা যায়।
আলমোড়া থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে অনন্য সুন্দর বিনসুর। আষ্টদশ শতকে চাঁদ রাজা এখানে গ্রষ্মের রাজধানী হিসাবে গড়ে ছিলেন বিনসরকে । ঘন অরণ্যের শ্যামলিমা, তূষারধবল হিমশৃঙ্গের সদা জাগ্রত অবস্থান, সদুর প্রসারি সবুজ উপত্যকার নরম মাধুর্য, অতু্চ্চ তৃণভূমি, বুগলিয়ারের দীপ্ত বিভাস বিনসরের পরম ঐশ্বর্য্য।
কীভাবে যাবেন ঃ- হাওড়া থেকে বাঘ এক্সপ্রেসে কাঠগুদামে নেমে, বিনসর। দিল্লীর উড়ানে সরাসরি বিনসর।
থাকার জায়গা ঃ- এম,ভি, এন, টুরিষ্ট গেষ্ট হিউস। বিনসরে ক্লাব মাহিন্দর রিসর্ট।
0 মন্তব্যসমূহ