পুরুলিয়ার ফুটিয়ারি ঃ-
পুরুলিয়া রেল স্টেশান থেকে বা পুরুলিয়া শহর থেকে ফুটিয়ারি খুব বেশি দূরে নয়।
গাড়িতে ৪০-৪৫ মিনিটের রাস্তা। লোধুকড়া, বেলাবহাল গ্রাম পেরিয়ে কিছুটা এগোতে রাস্তার ধারেই " ফুটিয়ারি রিট্রট " বোর্ড নজরে পড়বে। রিট্রটে উঠে ফুটিয়ারি ড্যামের জলের কিনারায় ঘুরতে খুবই আকর্ষণীয় লাগবে। চারপাশে পলাশ গাছের নিবিড় জঙ্গল। পলাশের লাল আগুনে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে এ জায়গা, তাতে সন্দেহ নেই।
নীল জলের ওপারে ঘাড় উচু করে থাকা তিলাবনি পাহাড়ের ঠিক নীচেই রেয়েছে কলাবনি। নামে মিল থাকলেও কলাবনি হল একটি গ্রামের নাম। ২০০০ সালে ফুটিয়ারি নদীর উপর তৈরী হয়েছে এই ড্যাম। দৈঘ্য আড়াই কিলোমিটার, প্রস্থ দেড় কিলোমিটার, গভীরতা ৮০-৯০ ফুট। পুরুলিয়ার অনেক বাঁধই ওভারফ্লো ড্যাম, সেচ বিভাগের পরিভাষায়।
নীল জলে ফুটে আছে লাল গোলাপী শালুক। শালুকের পা তুলে নাচ দেখায় জলময়ূর। অপূর্ব সেই ভঙ্গিমা, পানডুবি সাঁতার দিতে দিতে হঠাৎ মুখ বাড়ায়।
নানান প্রজাতির নানান রঙের পাখি চোখে পড়ছে জলাশয়ে এবং আশেপাশে। করচে বক, শামুখখোল, নীলকন্ঠ, জলমোরগ, হলদে টিট্টি, হুপো, ঘুঘু, মুনিয়া আর কত কি। নিখাদ পক্ষি প্রমিকের কাছে এক অসানারণ জায়গা ফুটিয়ারি।
বাঁধের কাছে দেখা যাবে খোপে খোপে টিয়া পাখির আস্তানা। পাশে গাছগুলিও টিয়া পাখির রঙে সবুজ হয়ে আছে। উড়চ্ছে, লাফাচ্ছে, কলরব করছে। জলাশয়ের অপর প্রান্তে সৃর্য অস্ত গমন দেখতে ভুলা যায়? রক্তিম অস্তরাগ ছড়িয়ে পড়ে আকাশে ও জলে।
ফুটিয়ারি বাঁধের পাশেই টুসু উৎসব ও মেলা। পৌষ সংক্রান্তির দিনে। গ্রামের মানুষ চৌডল বিসর্জন দেয় এই ফুটিয়ারির জলাশয়ে। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এপ্রিল মাস অবধি পুরুলিয়ায় পলাশ ফুটে লালে লাল, তেমনি টুসু উৎসবও আচার, অনুষ্ঠান, মেলায় মাতিয়ে রাখে গোটা জেলাকে। আদিবাসীদের নাচ-গানে আন্দোলিত হয় চারিদিক। কিন্তু এই উৎসবই নয় পুরুলিয়ায় পর্যটকরা ভরে থাকে সারা বছর। বছরের এক এক সময় চিত্তাকর্ষক রূপ ধারন করে।
ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস অবধি ফুটিয়ারিতে পাখির মেলা বসে যায়। অধিকংশ পরিযায়ি পাখি।
ফুটিয়ারীর বিপরীত প্রান্তে কলাবনি গ্রাম, এখানেই বিশাল আম বাগান চোখে পড়বে। অনেকগুলি বাগান আছে । খানিকটা দূরে দেখা যাবে উঁচু টিলা। তারপর হীরা গ্রাম, মূলত সাঁওতাল আদিবাসীদের গ্রাম। এদের বিখ্যৎ উৎসব হচ্ছে সহারায় উৎসব।
গ্রামের অপরূপ দৃশ্য দেখতে দেখতে পৌঁছে যান তিলাবনী পাহাড়ের ঢালে। পাহাড় না বলে বড় টিলা বলাই শ্রেয়। গ্রানাইট পাথরে মোড়া টিলটি সবুজ গাছপালায় ঢাকা। তবু সবুজের মধ্য দিয়ে ধবধবে সাদা গ্রানাইট উঁকি দেয়। সামনে সবুজ মাঠে অনেকগুলি তালগাছ নিজেদের মধ্যে দূরত্ব বজায় রেখে একপায়ে দাঁড়িয়ে আছে। সামনে দিয়ে একেবেক পিচ ঢালা রাস্তাটি চলে গেছে সামনের দিকে। আজ হাটবার, বহু মানুষ হাটে চলেছেন।
দ্বারেকশ্বর নদীর উৎপত্তি স্থল দুর্গাসিং ডাঙায়। প্রকৃত উৎস্য হচ্ছে তিলাবনি পাহাড়। এখানে অসংখ্য শালুক ফুটে আছে আর হাঁসেদের খুনসুটি। তিলাবন পাহাড় আর সিন্দুরপুর পাহাড়ের এখানে দেখা মিলবে এক বিরাট বট গাছের। বেশী উঁচু নয় তবে ডালপালা ছড়িয়েছে প্রচুর। অনেকটা ছাতার মত দেখতে।
একটা দিঘীর পাশে পাঞ্জনিয়া পাহাড়। পুরুলিয়ার তিন প্রান্তে তিনটি পাহাড় ১. তিলাবনি ২. পাঞ্জনিয়া ৩. সিন্দুরপুর। আকাশমণি, অর্জুন আর বাঁশ গাছের ছায়ায় আবিস্ট পথ বাকী পথ সব খাঁ খাঁ ধূ ধূ প্রান্তর।
এবার মানবাজার সাবডিভিসনের গন্তব্য পাকবিড়ারা। এখানে প্রাচির ঘেরা চত্বরে তিনটি পুরাতাত্বিক ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে জৈন্য মন্দিরগুলি। ক্লোরাইট পাথরে তৈরি এই মন্দির সব। খ্রিস্টপূর্ব ছয়শত বছর পূর্বে মহাবীর এখানে এসেছিলেন।
ঘন জঙ্গলে ঘেরা মারুভাস যেন লুকিয়ে আছে। চামটাবুরুর পিদদেশে মনোরম একটী জলাশয়। অযোধ্যা পাহাড়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ চামটাবুরু। উচ্চতা ২,৩৩৫ ফুট। আছে খয়েরাবেড়া ড্যাম।
কীভাবে যাবেনঃ- পুরুলিয়া স্টেশন থেকে ফুটিয়ারির দূরত্ব ২৭ কিলোমিটার। পুরুলিয়া গমী যেকোন টেনে পুরুলিয়ায় নেমে ফুটিয়ারি।
কোথায় থাকবেন ঃ- ফুটিয়ারি ড্যামের কাছেই আছে ফুটিয়ারি রিট্রট।
0 মন্তব্যসমূহ