বাঁকুড়া জেলার ঝিলিমিলি থেকে ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়ি। বাঁশপাহাড়ি থেকেই ঝাড়গ্রাম জেলা শুরু হলো। রাস্তার দুধারে ঘন জঙ্গল। এখানে টাটকা অক্সিজেনের নেই কোন বিকল্প। শিয়ারবিদা মোড় থেকে বাঁ দিকের রাস্তা দু-পাশে অরণ্যরাজি। শাল , কেন্দু, মহুয়া, ফেনাই, আসান, পলাশ ও অর্জুন গাছে ভরা এই জঙ্গলের নাম সিংলহাড়।
এরপর লালজল পাহাড়। স্থানীয় মানুষের কাছে এই পাহাড় ' দেবী পাহাড়' নামে খ্যাৎ। পাহাড়ের পাদদেশে সাধক রামস্বরূপ দেবশর্মার আশ্রম।১৯৫৮ সালে এই আশ্রমটি প্রতিষ্ঠিত। আশ্রমের বর্তমান কর্মাধ্যক্ষ হচ্ছেন পাতা মা। সাধক রামস্বরূপ দেববর্মা পর্বতের গুহায় সাধনা করতেন। নিঝুম গিরিকন্দরে একটা চিতা বাঘও থাকতো। তাঁর উদ্যোগে ১৯৮৩ সালে লালজলে বাসন্তী পূজার সূচনা হয়। পূজায় দূর দূরান্ত থেকে অনেক পূর্ণাথিগণ আসেন। মেলার আয়োজন চলে ৫ দিন যাবত। এবার আশ্রম ছেড়ে চড়াই উৎরাই ভেঙ্গে উপরের দিকে উঠলেই দেখা যাবে মানব গুহা। খুবই পিচ্ছিল পথ।
আদিম এই মানব গুহায় আদি মধ্য ও পস্তুর সময়ে তাম্র ও লৌহ যুগের নিদর্শন খুঁজে পাওয়া গেছে বলে মনে হয়। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের মধ্যে প্রাক ঐতিহাসিক গুহা দেখে সবাই বিস্মিত। গুহার ভিতর সজারু, বাদুর ও অন্য জন্তুও বিদ্যমান।
প্রত্নতাত্বিক গুহা ও আশ্রম দেখে এবার বারি ঘাটি টেলায়। মাটির সর্পিল পথ ধরে পৌঁছান যাবে খাঁদামারি ড্যামে ঘুরে আসা যাবে। খাঁদার কথার অর্থ উপেক্ষিতা। পাহাড়ের রানী খাঁদা সৌন্দর্যের মহিমা ছাড়িয়েও যেন প্রকৃতি অবহেলিত।
বোয়াল বেড়া থেকে জল এসে পড়ছে খাঁদামারিতে। এবার গড়ার সিনি পাহাড়ের কাছাকাছি। দেখা মিলবে শিবাজী পাহাড়, দেবী মা গুহা, জগানন্দ আশ্রম, সিদ্ধি গুহা আর বিষ্ণু মন্দির।
পাহাড়ের পাদদেশে ব্রহ্মর্ষি আশ্রম। অত্যন্ত শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ। আশ্রমের ভিতরে মহারাজ শ্রী মৎ স্বামী জগানন্দ নন্দ গিরি মহারাজের সমাধী ক্ষেত্র, যজ্ঞ কুন্ড। পাহাড় শীর্ষে একটি ছোট মন্দির ও গডারসিনি গুহা। পাহাড়ের চূড়া থেকে গোটা বেলপাহাড়ি দেখা যায়। অপূর্ব ল্যান্ডস্কেপ, দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড়, ধানজমি, গহিণ অরণ্য। এখানে আর একটি ড্যাম দেখা যায়, ড্যাম তারোফিন। বেলপাহাড়ি মোড় থেকে তারোফিন ড্যাম দূরত্ব মাত্র ৬ কিলোমিটার।
মুকুটমণিপুর ড্যামটি জল কিছুটা পুষ্ট, বর্ষার এর রূপ চোখ মেলে দেখতে হয়।
তারোফিন আদিবাসীদের গ্রাম পেরিয়ে লাল মাটির পথের দুপাশে সবুজের ক্ষেতি সব। এবার চলে আসুন ঘাগরা জলপ্রপাতের কাছে। এটি বেলপাহাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে। জনশ্রুতি বেলপাহাড়িতে অবস্থান কালে ইংরেজ সাহেব ফ্রেডারিক রাইজ ঘোড়ায় চড়ে অরণ্য পরিভ্রমণের সময় এই জল প্রপাতের সন্ধান পান। এই খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে সাহেব সুবোরা এখানে নিয়মিত পিকনিক করতে আসতো।
কৃষ্ণবর্ণ পাথরের উপর বেপরোয়া পড়ে স্বেত শুভ্র জলরাশি। ঘাগরা জলপ্রপাতের অন্যতম বৈশিষ্ট্য, এখানকার পাথুরে ভূমিরূপ এবড় থেবড়। প্রস্তর খন্ডের মাঝে মাঝে বিভিন্ন আকৃতির ছোট বড় অশ্ব ক্ষুরাকৃতি গহ্বর, যা অন্যত্র চোখে পড়ে না। প্রকৃতির স্নিগ্ধতা, পাখির কলতান আর নির্ঝরের অবিরাম শব্দ উপভোগ করতে করতে কখন যে সময় কেটে যাবে বোঝা কঠিন। সময় শেষ জঙ্গলমহলকে রেখে বাড়ি তো ফিরতেই হবে।
কীভাবে পৌঁছাবেন ঃ- ০২৮২৯ হাওড়া টাটানগর স্পেশাল ০২২৬০ হাওড়া C S M T স্পেশাল এবং ০২৮৯৫ হাওড়া রাচি স্পেশাল ( বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র )। ট্রেনে ঝাড়গ্রাম। এখান থেকে বেলপাহাড়ি ৩৮ কিলোমিটার পথ। সড়ক পথে এলে মুম্বাই হাই ওয়ে ধরে ঝাড়গ্রাম দূরত্ব ১৬৬ কিলোমিটার। গাড়িতে ৪/৫ ঘন্টা সময় লাগবে। ঝাড়গ্রাম থেকে ঝিলিমিলি ৬৫ কিলোমিটার। ঝিলিমিলি থেকে বেলপাহাড়ি ১৮ থেকে ২০ কিলোমিটার।
থাকার জায়গা ঃ ঝিলিমিলিতে রিমিক ইকো ট্যুরিজম ঝাড়গ্রামে - রাজবাড়ি ট্যুরিজম প্রজেক্ট। ঝাড়গ্রাম প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্র, পবিত্র হোমস্টে, হদহদি হোমস্টে, চারমূর্তি হোমস্টে, শালবাড়ি হোমস্টে, কাঁকরাঝোড় হোমস্টে, ঝাড়গ্রামে আছে অলণ্য সুন্দরি গেষ্ট হাউস, নির্মাল্য হোমস্টে, সোমানি ইন, আরণ্যক রিসর্ট, চেতনা ইকো ভিলেজ হোমস্টে, ওয়েসিস হোমস্টে।
0 মন্তব্যসমূহ