মানুষ বরাবর যাযাবর। ধমনি থাকে ভ্রমণের নেশা। তাই সুযোগ পেলেয় পথে পথে পা বাড়ায়, কাছে বা দূরে। ৪ দেওয়ালের বাঁধন ছিড়ে বেরিয়ে পড়ার নাম জীবন।
প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে একবার সবুজে ঢাকা ছোট্ট রাবাংলায় ঘুরতে যেতে হবেই।
এখানে সারা দিন ধরে চলে মেঘ রদ্দুরের খেলা। কুশায় ঢাকা পরিবেশে সোনালী সূর্য কণার প্রতিফলন আপনাকে এক মায়াবী জগতে নিয়ে যাবে। সবুজ প্রকৃতির অবুজ মন আপনাকে দিশেহারা করে রাখবে। বনে ঘেরা মৈনাম পাহাড়ের দক্ষিণ দিকে সিকিমের ছোট্ট শৈল শহর রাবাংলা। উচ্চতা প্রায় ৭০০০ ফুট। এখানে বসতি খুব কম। অধিবাসীদের মধ্যে নেপালী, ভূটিয়া আর তিব্বতীদের বসবাসের আধিক্য। থাকা খাওয়ার অনেক হোটেল আছে।
ট্রেনে শিলিগুড়ি পৌঁছে গাড়ি ভাড়ায় সিকিম। এখানকার সব জায়গা মনমুগ্ধকর।
গ্যাঙটক, পেলিঙ, ছাঙ্গু, নাথুলা পাশ, ইয়াঙ থাম, চুঙথাম, লাচেন, গুরুদোঙমার লেক, লাচুঙ-- এসব হয়তো অনকেরই ঘোর। এবারের ঠিকানা হোক সিকিমের আরেক প্রান্তে রাবাংলাতে। যেখানে সবুজ সরস প্রকৃতি ও নির্জনতার ফাঁকে আপনি দু চোখ ভরে শ্বেতশুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘাকে দেখতে পাবেন। আকাশ পরিস্কার থাকলে আরো কিছু হিম শৈল দেখা যাবে।
রাবাংলার সবুজের ছোঁয়া মনে এক অনাস্বদিত অনুভূতি এনে দেবে। শৈল শহরের কোলে বসে ছুটির ক'টা দিন পরম নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দেওয়া যাবে। এরই মাঝে রালং মনাস্ট্রি দেখে নেওয়া যাবে, রাবাংলা থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরত্বে।
রালং মনাস্ট্রি প্রথম দর্শনেই তার কারুকাজ ও সৌন্দর্য্যের জন্য নজর টেনে নেবে এটা বৌদ্ধ সংস্কৃতির পীঠস্থান।
এই মনাস্ট্রি ১৭৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখান বৌদ্ধ ধর্ম নিয়ে লেখা পড়া হয়। বৌদ্ধ ধর্মের অনেক গোপন তথ্য এখানে রাখা আছে।
এই প্রসঙ্গে বৌদ্ধ ধর্মের কিছু কথা মনে পড়ে। বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন বৌদ্ধদের কাছে খুব পবিত্র দিন। তাঁদের পবিত্রতম উৎসব এখানে পালিত হয়। এই দিনের সাথে ৩ টি স্মৃতি জড়িয়ে আছে। এই পবিত্র দিন হচ্ছে বুদ্ধদেবের জন্মদিন। এই দিন তিনি বোধিসত্ব লাভ করেন এবং এই তিথিতেই তিনি মহা পরিনির্মান লাভ করেন বা মৃত্যু হয়। বৌদ্ধ ধর্মলম্বিরা স্নান করে শুদ্ধ বস্ত্র পরে উচ্চারণ করেন -- " বুদ্ধং শরনম্ গচ্ছামি / ধর্ম শরনম্ গচ্ছামি / সংঘং শরনম্ গচ্ছামি ।'
তারপর তারা বুদ্ধ মন্দিরে পূজা দেন। বৌদ্ধ লামা শিক্ষার্থীদের দেখলে চোখ জুড়িয় যায়।
প্রতিদিন যে চা আমরা পান করি। সেই চায়ের উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণ দেখতে এখানে আসতেই হবে।
রাবাংলা থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে সিকিমের এক চা বাগান টেমি টি গার্ডেন। বাগানে ডুকতে আপনাকে দারুন ভাবে সাড়া দেবে। চা প্রসেসিং দেখতে ভাল লাগবে।
৫ কিলোমিটার দূরে রয়েছে বুদ্ধ পার্ক আর তথাগত ট্যাসেল। এখানে হাঁটা পথে গেলে পাহাড়ি সৌন্দর্য্য নিবিড় ভাবে কাছে পাওয়া যাবে পথের ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে। সিকিম সরকার আর পাবলিক মিলে যৌথ উদ্যোগে ২০০৬ থেকে ২০১৩ সাল অবধি এই পার্ক তৈরি হয়। পার্কের ঠিক মাঝখানে গৌতম বুদ্ধের ১৪ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন মূর্তি অধিষ্ঠান করছে। গৌতম বুদ্ধের ২৫৫০ তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে এই মূর্তি গড়া হয়েছে। দূর থেকে বুদ্ধ পার্ক দেখলে মনে হবে কোন শিল্পর পটে আঁকা ছবি একটা।
রাবাংলায় এসে দু টি জায়গা না দেখলে মন খারাপ হবে। একটি মাংব্রু গোম্ফা ভিউ পয়েন্ট আর অন্যটি মেনাম। এখান থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে মাব্রু ভিউ পয়েন্ট। ১২ কিলোমিটার দূরে সানরাইজ ও সান সেট ভিউ পয়েন্ট। ২৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে পাহাড়ের মাথায় ১৩৫ ফুট উচূতে গুরু পদ্ম সম্ভারের মূর্তি। ধর্মগুরু দালাই লামা ১৯৯৭ সালের ২২ শে জুলাই এই মূর্তির ভিত্ত প্রস্তর স্থাপন করেন।
দু' দিনের ছুটিতে রাবাংলাকে দেখা যাবে।
কীভাবে পৌঁছাবেন ঃ শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন। স্টেশন থেকে শেয়ার জিপে ১১০ কিলোমিটার দূরে রাবাংলা।
কোথায় থাকবেন ঃ প্রচুর হোটেল ও হোমস্টে রয়েছে।
রাভাংলা ভ্রমণের উপর আমাদের এই ভিডিওটি দেখতে পারেন - ভিডিও লিঙ্ক
0 মন্তব্যসমূহ