Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

অন্যরকম পাহাড় ভ্রমন- রুখুসুখু জঙ্গল, দলমা পাহাড়,ডিমনা লেক, মাটগোদা

 ঘুরে আসি চলুন রুখুসুখু জঙ্গল, দলমা পাহাড়,ডিমনা লেক, মাটগোদা ঃ-



গল্প, উপন্যাসে বহু বার সাক্ষাৎ হয়েছে দলমা পাহাড়ের সঙ্গে। যেখানে দামাল হাতিদের রাজত্ব,  টাটানগরে পৌঁছে রওনা দিলাম যেতে হবে আসানবনিতে । সেখানেই এক রিসর্টে থাকা যাবে। রাতটুকু থেকে  পর দিন দলমা পাহাড়ের দিকে। বড় রুখু জায়গা, জনমনিষ্যি চোখে পড়ে না সে রাস্তায়। লাল মাটির পথ। দলমা ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারির , প্রবেশপথে হাতির মূর্তি শুঁড় তুলে স্বাগত জানাচ্ছে। তার ঠিক বাঁ পাশেই মোটা লোহার শিকল।  হাতি ধরা পড়লে এখানে চিকিৎসা করা হয়। তাই শিকলের ব্যবস্থা। স্যাংচুয়ারির প্রবেশপথ দিয়ে গাড়ি ঢুকতেই জঙ্গলের গা-ছমছমে ভাবটা মালুম হবে। কিছু দূর এগোতে বাঁ দিকে ডিয়ার রেসকিউ সেন্টার। দরজার পাশে বিশাল শিংওয়ালা দু’টি হরিণ-মূর্তি। পশুপাখির দেখা না পেলে এই স্ট্যাচুর সঙ্গেই ছবি তুলা যায়।
 
এগিতে হবে জঙ্গুলে পাহাড়িয়া রাস্তা ধরে। সে পথে একটা গাড়িও চোখে পড়বে না। ফাঁকা রাস্তা। ‘পিন ড্রপ সাইলেন্স’ কাকে বলে সেটা এখানে এলে বোঝা যায়। মাঝেমাঝে সেই নীরবতা ভেদ করে শোনা যাবে হাতির ডাক। হিমেল হাওয়ায় গা ছমছমানি টের পাওয়া যাবে  আবার। এবার এগিয়ে উঠতে হবে পাহাড়ের শীর্ষে। সেখানে পৌঁছেও রক্ষে নেই। সামনে পর্বতসমান সিঁড়ি। এই সিঁড়ি বেয়ে শিব ও হনুমান মন্দিরে পৌঁছতে হবে। এক-একটা সিঁড়ির উচ্চতা শহুরে বাড়ির তিন সিঁড়ি সমান। হনুমান মন্দির পর্যন্ত পৌঁছতেই কষ্ট হবে। মন্দির ছাড়িয়ে পাহাড়ের শীর্ষে ফাঁকা জায়গা। চারপাশের সবুজে পাহাড়।সামনে কম্পোজ়িট প্রোফাইলে।  নদী-নালা, জনবসতি ধরা দেবে চোখে।

 পাহাড়িয়া: দলমার উপর থেকে
নামার সময়ে আবার ডিয়ার রেসকিউ সেন্টারের দরজায়। এবার দেখা যাবে হরিণমূর্তি ভ্যানিশ!  মূর্তি নয়, মূর্তিবৎ দাঁড়িয়েছিল তারা আস্ত হরিণ। রেসকিউ সেন্টারের ঘেরাটোপের ধার ধরে এগোতেই দেখা মিলবে  চিতল হরিণের যেন মেলা বসেছে।  ভিতরে এক বিশাল শিংওয়ালা হরিণ দেখা যাবে। সে গম্ভীর ভাবে আপনাকেও  দেখে ভিতরে চলে যাবে। পিছু নিয়ে তার ডেরায় পৌঁছন যাবে । হাথ-পা নড়ানোর সাহস থাকবে না। বিশাল শিংওয়ালা সম্বর হরিণ বসে আছে বাঘের মতো। ক্যামেরা বার করে তাক করতেই ক্লিক। ভাল যে হাতির দর্শন পাইনি। দিনকয়েক আগে তাঁর বন্ধু এসেছিলেন।  দলমার হাতি যেমন দামাল, তেমনই ভয়ঙ্কর। তাই অসুস্থ হলেও ওদের শিকলে বেঁধে রাখতে হয়।
অবগাহন: ডিমনা লেক
পাহাড় থেকে নেমে পৌঁছাতে হবে  ডিমনা লেকে। সূর্য ঢলে পড়ছে লেকের জলে। কিন্তু একটাও রেস্তরাঁ নেই এই চত্বরে। ডিমনা লেকের আয়তন খুব কম নয়। কিন্তু পর্যটক প্রায় নেই, রেস্তরাঁ তো দূরস্থান। বাইকে করে ঘুরতে আসা কিছু জুটি চোখে পড়বে শুধু ইতিউতি। এ জায়গার সৌন্দর্যই বুঝি এই রুক্ষ নির্জনতা। ডিমনার লেকে তখন অবগাহনে ব্যস্ত শহুরে ক্লান্ত মন। লেকের ধারে গাছের তলায় পা ছড়িয়ে বসে অজান্তেই গুনগুনিয়ে উঠা যাবে, ‘সূর্য ডোবার পালা আসে যদি আসুক, বেশ তো!’
মাটগোদা জংগলে ঃ-
হাওড়া থেকে ঝাড়গ্রাম। ঝাড়গ্রাম থেকে বাসে মাটগোদা। এখন এখানে মানুষের বসতি বেড়েয় চলেছে। তবু প্রাচীর ঘেরা বন বাংলোটি স্বাচ্ছন্দে ভরপুর। বাংলোর সামনে মহুয়া গাছটির স্বাচ্ছন্দ ভরিয়ে দেয়। সামনের বারান্দায় ফুলের গন্ধে ম ম করছে। চারিদিকের সবুজ, ছায়ায় মায়াময় করে রেখেছে। পিছনের সাপের মত লাট খাওয়া সাপের মত রাস্তা চলে গেছে রাইপুরে। জঙ্গল নিয়ে পথ বেয়ে শ্যামসুন্দরপুর সৌন্দর্যের মজুত ভান্ডার। বাংলো থেকে দু পা দূরত্বে গাছের সমারোহ, পাখপাখালি আর সন্ধ্যায় ঘন কালো জোব্বায় মুস্কিল আসান গাজি। সে ঘুরে ঘুরে চামর নাচায়। আকাশে এক ছটাক মেঘ নেই, চাঁদও নেই। অজস্র রূপর   তবক। নক্ষত্রের অজস্র চমক। প্রতিটি ঝুপসি গাছে গাজির সাহেবের কালো চামর। শুধু রাতের আধাঁরে অবাধ্য বাতাসে মাথা দোলায় আর কি। এভাবেই মাটগোদাকে দেখতে হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ