Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

শঙ্করপুরে সমুদ্রসৈকতে একদিন - ঘুরে আসার গাইদ লাইন

 চলুন শঙ্করপুরে একদিন, ঘুরতে ভালো লাগবে ঃ-


পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বেনফিশ-এর অতিথিনিবাস কিনারা। কলকাতা থেকেই অনলাইনে এ. সি. ঘর বুক করা ছিল। ছিমছাম, আপাত জীবাণুমুক্ত ঘরে খানিক বিশ্রাম নিয়ে গুটি গুটি পায়ে প্রকৃতিকে নিরীক্ষণ করা। সবুজের মধ্যে দিয়ে আঁকা বাঁকা রাস্তায় যেতে যেতে মন চলে গেল ছোট্টবেলার দিনগুলোতে। রাস্তার দুপাশে প্রজাপতি, মথ শরীর ছুঁয়ে অভিবাদন জানাচ্ছে। তাদের কত রং, কী বাহার! গাছের ডালে নাম না জানা পাখির কূজন মনকে নিয়ে যাচ্ছে কল্পলোকে। এরই মধ্যে হঠাৎ পায়ের সামনে কাঠবেড়ালি এসে প্রণাম ঠুকল, দূরে ভোঁ বাজিয়ে ট্রলারেরা পাড়ি দিচ্ছে অতল সমুদ্রে। অন্বেষণ শেষ হলে ফিরে আসবে রুপোলি মাছের ডালি নিয়ে। স্থানীয় জেলেদের সারল্য মন কেড়ে নিল। এবার সমুদ্র অবগাহন। মনে হলো কত যুগ পর আবার হারিয়ে যাব অতলান্ত গভীরে। গা ভেজানোর আগে সবুজ ডাবের মিষ্টি জল তৃষ্ণাকে আরও বাড়িয়ে দেবে। সাগরবেলায় ছোটদের বালিয়াড়ি আর ঝিনুক সংগ্রহ মনকে সত্যিই নিয়ে গেল শৈশবে। বালির ওপর অতি যত্নে লেখা নিজের নামকে সমুদ্র ভরিয়ে দিয়ে যাবে  ওষ্ঠের চুম্বনে। গায়ের ওপর সমুদ্রের মুহূর্মুহূ আলিঙ্গন উপলব্ধি করতে করতে হারিয়ে যেতে হবে অন্যলোকে। সমুদ্রগাহনে পায়ের তলায় ছোট্ট ছোট্ট নুড়িগুলো এঁকে দিল আদরের রেখা। আদুল গায়ে লেগে রইল নোনতা তরল আর সাক্ষী রইল উন্মুক্ত নীল আকাশ আর একরাশ ঝাউ।   কর্মব্যস্ততা, দুপুর রোদে মাঠের ধারে জেলেদের জালবোনা কিংবা সমুদ্রে নৌকা বাওয়া আর জাল টেনে তটে তোলা –সে যেন এক অন্য জগৎ। কুলিং টাওয়ারের অবিরাম জলধারায় সূর্যের আলোয় তৈরি রামধনু থেকে চোখ ফেরানো ভার। সময় গড়াতে লাগল। পড়ন্ত বিকেলে লাল পাথরের ওপর বসে সাদা ক্যানভাসে পেন্সিল ড্রয়িং আর ডায়েরির পাতায় দুকলম কবিতা লিখতে মন্দ লাগল না। রঙিন বিকেলে সূর্যের বাড়ি ফেরা তুলতে তুলতে ক্যামেরার স্টোরেজ ফুল। ঝাউয়ের দোলায় দোল খেতে খেতে নির্জন সৈকতে ভ্রমণকালে গলায় গুনগুন করে উঠল "আমি দূর হতে তোমারে দেখেছি, আর মুগ্ধ হয়ে শুধু চেয়ে থেকেছি।"

সন্ধ্যার আলোঝলমল সমুদ্রতটে উষ্ণ চায়ের ভাঁড়ে চুমুক দিতে দিতে সান্ধ্যভ্রমণ স্মৃতিপটে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। অবশেষে ক্লান্ত হয়ে সমুদ্রের পাড়ে বসে শুক্লপক্ষের চাঁদের আলোয় রুপোলি ঢেউয়ের অবিরাম আস্ফালন অবলোকন করতে লাগলাম। বেশ কিছু সময় কাটিয়ে ফিরলাম অতিথি নিবাসে। সমুদ্রে এলাম অথচ আমার মতো মেছো মাছ খাব না তা কি করে হয় যেখানে মৎস্যবিলাসীদের রসনায় সামুদ্রিক জীবেরা সদা দন্ডায়মান। চিংড়ি ও ভেটকি সহযোগে রাতের আহার এবং রাতের রূপ পর্যবেক্ষণে। নৈশআহারের পর নির্জন সমুদ্রসৈকতে সমুদ্র গর্জন সে এক অন্য অভিজ্ঞতা। নির্জন, শান্ত আর গভীর। ঝাউয়ের বনে শুধু ঝিঁঝিঁদের শব্দ। প্রকৃতি যেন তার সবরকম নৈবেদ্য নিয়ে হাজির।

পরদিন সকালে আবছা আলোআঁধারিতে ধীরে ধীরে সূর্যদেবের আবার প্রত্যাগমন। সত্যি জীবনের জাঁতাকলে আর অজানা ভাইরাসের আক্রমণ ! ক্যামেরার শাটার চলতেই থাকল। বন্দী হতে থাকল প্রকৃতির নানা রূপ। সমুদ্রের তটে বসে দেখতে থাকলাম দিনের শুরু, জেলেদের কর্মব্যস্ততা। দুপাশের বুনোফুলগুলো ধীরে ধীরে পাপড়ি মেলছে, নাম-না-জানা পাখির দল গাছে গাছে আড়মোড়া ভাঙছে। প্রকৃতি তার রূপের ডালি আবার ধীরে ধীরে মেলে ধরছে। শুধু ভোজনে ইলিশ আর পারসের আগমন। অনেকটা সময় বারান্দার অলিন্দে দাঁড়িয়ে প্রকৃতিরানিকে আস্বাদন করলাম। স্থানীয় মানুষদের সারল্য আর আন্তরিকতায় কেটে যাবে। এবার ঘরে ফেরার পালা। অমৃত না উঠলেও এ ভ্রমণের স্বাদ মিটিয়ে দিল মনের তৃষ্ণা। স্বাদ আর সাধ্যের মধ্যে শঙ্করপুর ভ্রমণ স্মৃতির ক্যানভাসে বন্দি হয়ে রইল।
কীভাবে পৌঁছাবেন ঃ- দক্ষিণ-পূর্ব লোকাল ট্রেনে হাওড়া থেকে মেচেদা। বাসে চৌদ্দ মাইল নেমে টোটো বা ট্রকারে, রিক্সায় শংকরপুর চলে আসা যাবে। বাসে ধর্মতলা থেকে দীঘা গামী বাসে মেচেদা তারপর টোটো বা অটোয় শংকরপুর।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ