Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

শিউলিবনা আর শুশুনিয়া পাহাড়ের ঢালে মনরোম প্রকৃতি - ট্রাভেল গাইড

 শিউলিবনা শুশুনিয়া পাহাড়ের ঢালে ঃ-



রক ক্লাইবিং কোর্স শেখার জন্য বাংলায় সাধারণত দু'টি পাহাড়কে বেছে নেওয়া হয় -পুরুলিয়ার মাঠা আর বাঁকুড়ার শুশুনিয়া। শুশুনিয়া পাহাড়ের ঢালে শিউলিবনা।
বাঁকুড়ার পরের স্টেশন ছাতনা। ইতিহাস প্রসিদ্ধ গ্রাম। এই গ্রামেই জন্মেছিলেন শ্রী কৃষ্ণকীর্ত্তন-এর কবি বড়ু চন্ডিদাস। ছাতনা নাম নিয়ে নানা মুনির নানা মত। শ্রীক্ষেত্র তীর্থযাত্রী জনৈক রাজপুত ছাতনায় রাজধানী  স্থাপন করে রাজকার্য্য পরিচলনা করতেন। ক্ষত্রিয় অর্থাৎ ছত্রিদের নগর ছিল বলেই ছত্রীনগর। পরে তা "ছাতনা" নাম হয়েছে। আবার অনেকের মতে ছাতিম গাছের বনভূমি ছিল, সেই থেকে ছাতনা নাম।
ছাতনা ছাড়িয়ে দেখা যাবে পাহাড়ের গায়ে আবরণী। আশেপাশে আর কোন টিলা বা পাহাড় নেই, শুধু উঁচু নিচু রুক্ষ ভূমি। পাহাড়ের দক্ষিণ দিকে বইছে গন্ধেশ্বরী নদী।
নদী এখানে তির তির করে বইছে। নদীর উপর ব্রিজ পেরিয়ে বাসস্ট্যন্ড। পাশেই গ্রাম পঞ্চায়েত অতিথি ভবন এবং যুব আবাস। শিউলিবনা যেতে যেতে কিছু আদিবাসী গ্রাম চোখে পড়বে আর বা দিকে শুশুনিয়া পাহাড় দেখা যাবে।
ছাতনা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে শুশুনিয়া পাহাড়। পুরাতত্ব, নৃতত্ব ও জীবতত্বের দিক দিয়ে এই অঞ্চলের অনেক গুরুত্ব। শুশুনিয়াকে কেন্দ্র করে ১০০ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে তৈরী হয়েছে অসংখ্য প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী। প্রাগৈতিহাসিক পেলিয়োলোক্সোডন হাতির জীবশ্ম। 
এখানে পাওয়া যাবে শিউলিবনা উইক এন্ড স্টে। রয়েছে পাঁচটি কটেজ। বারান্দা থেকে দেখা যাবে দূরে শুশুনিয়া আর শাল, তমাল, পিয়াল, শিমূলের অসাধারন সমাহার। আছে ইউক্যালিপটাস আর সোনাঝুরির মেল বন্ধন।
শিউলিবনা একটা আদিবাসীদের গ্রাম। মূলত সাঁওতালদের বসতি। গ্রামে অসংখ্য পুকুর দেখা যাবে। ঘরের দেওয়াল জুড়ে গাছের পাতা আর ময়ূরের ছবি আঁকা। কাছেই ভরতপুর গ্রাম। এই গ্রামে বেশ কিছু শিল্পী আছে। এরা পট চিত্রের মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তোলেন রামায়ণ, মহাভারত কথা। এক নবীণ চিত্রকরের কাছে জানা যায় যে, ১৭ টি পরিবার -এর সদস্যরা এখনো ছবি আঁকেন তাঁরা। মেলা পার্বনে ছবি বিক্রি হয়। 
শুশুনিয়া পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা আছে রাজা চন্দ্রবর্মার শিলালিপি। ষোলশো বছর আগে এই পাহাড় ছিল পুষ্করণার অধিপতি চন্দ্রবর্মার দূর্গ। লিপির হরফ ব্রাহ্মী কিন্তু ভাষা সংস্কৃত। পুরাতাত্বিকরা লিপির পাঠোদ্ধার করছেন। বাংলায় অনুবাধ করলে দাঁড়ায়, " পুষ্করণার রাজা মহারাজ শ্রী সিংহবর্মার পুত্র মহারাজ শ্রী চন্দ্র বর্মণের  কীর্তি। চন্দ্রস্বামী বিষ্ণুর অগ্রদাসের দ্বারা সৃষ্টি।"
পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা আছে একটি চক্র। চক্রটিকে ঘিরে রয়েছে অগ্নিশিখার আদলে চৌদ্দটি রেখা। ঐতিহাসিকরা মনে করেন এটা বৌদ্ধ চক্র। 
শুশুনিয়া পাহাড়ের উত্তর পূর্ব দামোদর নদের তিরে পুষ্করনা। সেই পুষ্করনার রাজা ছিলেন চন্দ্রবর্মা। রাজস্থানের পুষ্করনা অধুনা পোখরানের অধিপতি রাজা চন্দ্রবর্মা শ্বাপদসঙ্কুল, দুর্গম শুশুনিয়ায় পাহাড় চূড়ায় তাঁর দূর্গ নির্মাণ করেন খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতকে। পরে গুপ্ত সম্রাট সমুদ্র গুপ্তের সাথে ভয়াবহ যুদ্ধে রাজা চন্দ্রবর্মার মৃত্যু হয়। শুশুনিয়ার নীচে শিউলিবনা। বাসস্ট্যান্ড থেকে ঝরণা পযর্ন্ত ছোট খাটো মেলা লেগে আছে। এই ঘটনা প্রতিদিনের। পৌষ সংক্রান্তির পূণ্য স্নান, চৈত্রের বারুণী স্নান, শীতের পর্যটক -- মানুষের আসা যাওয়ার বিরাম নেই কোন।
পাহাড়ের কোলে গোপীনাথ ভবতারিনী আশ্রম প্রতিষ্ঠত হয় ১৯৬২ সালে। ১৯৯৪ সাল থেকে সম্পৃর্ণ বৈদিক মতে দূর্গা পূজা হয়ে আসছে। এই পূজার অন্যতম আকর্ষণ নবমীর দিনে কুমারী পূজা হয়।
শুশুনিয়ার এক কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ প্রান্তে পারুলিয়া গ্রাম। এই গ্রামের লোকশিল্পীরা অপরূপ পাথর কুঁদে মূর্তি গড়ে। এদের শিল্প কর্মে এত নিখুঁত যে এক ইঞ্চি দূর্গা মূর্তি, আধ ইঞ্চি গণেশ মূর্তি।  

কীভাবে পৌঁছান যাবেঃ- কলকাতা থেকে বাসে অথবা ট্রেনে আসা যায় ছাতনা। ছাতনা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে শিউলিবনা। বাঁকুড়া স্টেশন থেকে শিউলিবনা আসা যায়। হাওড়া থেকে রাণীগঞ্জ, এখান থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে শিউলিবনা।
কোথায় থাকবেন ঃ- শিউলিবনায় থাকবার জায়গা একটাই -- শিউলিবনা উইকএন্ড হোমস্টে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ