Header Ads Widget

Responsive Advertisement

সিমলিপাল ফরেস্ট কিভাবে যাবেন ? কি কি দেখবেন ? জেনে নিন



সিমলিপাল ফরেস্ট ঘুরতে ভালো লাগবে:- পাহাড়ি ঝর্ণা-- সীতাকুণ্ড। পৌঁছান গেল লূলুং। পাথর টপকে টপকে পলপলা নদী লুলুং-এর পাশ দিয়ে তির তির করে বহে চলেছে। এখানে অরণ্যের ভিতরে না যেয়েও জঙ্গলের ছোয়া টের পাওয়া যাবে-- এমনি জায়গা লুলুং।

সামনেই পিঠেভাটা চেকপোষ্ট। এটি সিমলিপলা টাইগার রিজার্ভের প্রবেশদ্বার। উল্টো পথে যশীপুর দিয়েও ঢোকা যায়। চেকপোষ্টে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখে নিয়ে ঢোকার অনুমতি দেন। তাড়াজোড়ি চেকপোস্টে পর্যটকদের ব্যাগ পত্তর পরিক্ষা করে। সিমলিপলে মদ্যপান সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ। কেউ মদ্যপানের বোতলাদি নিচ্ছে কিনা তারই চেকিং- এর ব্যবস্থা। 
এবার সিমলাপলে জঙ্গল সাফারি করা খুবই আকর্ষণীয়।
ওড়িষার ময়ূরজঞ্জ জেলার ১৭০০ বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত এই জঙ্গলের নাম এসেছে শিমূল ফুলের জন্য। বাঘ, হাতি, লেঙ্গুর, সম্বর, গাউর, বুনো সুয়োর ছাড়াও এই জঙ্গলে পাওয়া দেখা মিলবে অসংখ্য পাখির।  আদ্ভূত বৈচিত্র এখানকার প্রকৃতিতে। কোথাও দু'পাশে ঘন সবুজ জঙ্গলের মধ্য দিয়ে চলে গিয়েছে সড়ক। কোথাও লালমাটির উপর সোনালী ঘাসের বিস্তির্ণ প্রান্তরে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়ের সারি বা কোথাও রুক্ষ পাহাড়ের গা ঘেসে নেমে এসছে অপূর্ব ঝর্ণা। এর মধ্যে ছোট ছোট বসতি। খড়ের চাল দেওয়া মাটির ঘর।
জঙ্গলের রাস্তা পাক খেতে উপরে উঠে গেছে। উঠতে উঠতে পাওয়া যাবে জামুয়ানি ইকো ট্যুরিজিম রির্সট। 
কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা বেশ বড় চত্বরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কটেজগুলি। মাঝখানে ডাইনিং হল। পিছনে পাহাড়ের সারি। বিশাল এই এলাকায় কতগুলি গাছ। 
বাম্বু কটেজ আর সাঁওতাল কটেজ। 
দশ মিনিট চলার পর পাওয়া যাবে চাহালা। চাহালায় ময়ূরভঞ্জ মহারাজার হান্টিং লজ ছিল। পরে সেটাই ফরেষ্ট বাংলোয় রূপান্তরিত হয়। বাংলোর কম্পাউন্ডে বিরাট বিরাট ইউক্যালিপটাস গাছ। ইউক্যালিপটাসের সাদা কান্ডগুলি দেখলে মনে হয় একদল শ্বেতাঙ্গী বিদেশিনীরা নাচের শুরুর অপেক্ষায়। 
কোর এরিয়ার একদম কাছে বলে চাহলা বাংলো থেকে বন্যপ্রাণী দেখবার সম্ভাবনা বেশী। পরিখার ওপারে ঘাস জমিতে হরিণ গাউর এবং কি হাতিও চলে আসে। তার অন্যতম কারণ হচ্ছে বন দপ্তরের গড়ে দেওয়া সল্ট লিক বা নুনি। বাংলোর পাশেই একটা বড় ওয়াচটাওয়ার দেখা যাবে।
এবার আস্তে আস্তে পৌঁছে যাওয়া যাবে বরেহিপানি জলপ্রপাতের কাছে। মেঘাশুনি পাহাড়ের উপর দিয়ে উপর দিয়ে আসা বুধাবালাঙ্গা বা বুড়িবালাম নদী। এখান থেকে ১,৩০৯ ফুট উচ্চতা থেকে দুটি ধাপে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। এটি ভারতের উচ্চতম দ্বিতীয় জলপ্রপাত। বর্ষার সময় জলপ্রপাতটি গায় গতরে ফুলে ফেঁপে ওঠে। শীতকালে জলধারাটি শরু হয়ে যায়। চারপাশের ঘন সবুজের মাঝে এ যেন আলপনা আঁকা সুন্দর দৃশ্য এক। তারপর জোরান্ডা। জোরান্ডা বন বাংলো থেকেই দেখা যায় জোরান্ডা ফলস। পাহাড়ের উপর থেকে পাশের পাহাড়ের নীচের দিকে তাকালে চোখে পড়ে ৪৯০ ফুট নীচে ঝাঁপিয়ে পড়ছে জোরান্ডা জলপ্রপাত। চারিপাশে পাহাড়। কোন পাহাড় ন্যাড়া, কোনটা সবুজে সবুজে ছয়লাপ, তার মধ্যে অন্য রং ও দেখা যায়। দু তিনটে পাহাড় মিলে আড়াআড়ি ভাবে একটি অঞ্চল তৈরি করছে আর তার মধ্য দিয়ে বয়ে চলেছে ঝর্ণার জলধারা। একটা ডিপ পয়েন্ট এখানে রয়েছে কাছাকাছি। সেখান থেকে প্রপাতটা দেখা যায়। জোরন্ডার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য অসামান্য।
জঙ্গলের মধ্যে রয়েছে একটা নদী দেখা যাবে। পাথরের উপর দিয়ে তির তির করে বইছে। বড় পাথরের ফাঁকা দিয়ে বয়ে যাওয়ার সময় বেশ জোরে নামছে জল শ্রোত। একটু দূরে ভাঙ্গা ব্রিজের মত।
গহীন জঙ্গলের মেঠো রাস্তায় হেঁটে বেড়ানোর অনুভূতি অন্যরকমের। কানে আসবে অসংখ্য পাখির কলতান। অচেনা কোনও প্রাণীর কর্কশ ডাক, ভেসে আসে বুনো ফুলের ঝাঁঝালো গন্ধ। এবার পেয়ে যাবেন ওয়াচটাউর। এখানে উঠে দেখে নেওয়া যায় জঙ্গলের আদিম সৌন্দর্য্য। ফিরবার পথ, তুলসিবনি চেকপোষ্ট দিয়ে বাইরে যাবার সুন্দর ব্যবস্থা। সিমলিপাল ফরেষ্ট ছেড়ে যেতে মন চাইছিল না। 
যোশিপুরকে বাঁয়ে রেখে বাংরিপেসি স্টেশন, কিছুটা গলে সেই বুড়িবালাম।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ