Header Ads Widget

Responsive Advertisement

চলুন ঘুরে আসি কমলালেবুর দেশ সিটং - সাথে আরো অল্পচেনা পাহাড়ী গ্রাম

সিটং ঘুরতে দু- দিন আর সিকসিন একদিন বেড়াতে ভালো লাগবেঃ--



সিটং কোথায় ? কিভাবে যাবেন ? 

কমলালেবুর দেশ সিটং

শহর জলপাইগুড়ি থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে মংপু। রবি ঠাকুরের পদধূলি দেওয়া মৈত্রেয়ীদেবীর বাড়ি দেখতেই মংপুতে আসা যাবে। এবার নতুন পাহাড়পুরের পথে। জরিবোনা রোদ্দুর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পাহাড়ের ঢাল বরবর। নীল আকাশকে স্বাক্ষী রেখে দেখা মিলবে সব অচেনা গ্রামগুলি। রিয়াং, টরবুখোলা, বংখোলা প্রভৃতি গ্রাম। আকাশের সীমান্তে পাহাড় ছবি আঁকে। পাহাড়ের ঢালে ঘন সবুজ চাষ জমি। অপরূপ এই পাহাড়ি গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে কমলালেবুর বাগান। উতঙ্গু পাহাড়ের মাথায় সুন্দর গির্জা একটি। তবে এখানে হোটেল নেই আছে হোমস্টে। এখানে লেপচাদের আতিথেয়তায় বড়ই মধুর। গ্রামের আঁকাবাকা পথ পেরিয়ে আসতে হবে ' সিটং ভিউপয়েন্টে'। পাইন, ধুপির জঙ্গলের ফাঁক দিয়ে দেখা যাবে কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ। অনবদ‍্য ও অসাধারণ। আকাশের প্রান্ত জুড়ে শুধুই রঙের রায়ট। পাহাড়ের হ‍্দয় থেকে তুলে আনা কমলালেবু ঝুড়ি মাথায় করে ক্ষেত ফেরৎ আদিবাসীদের ঘরে ফেরার গান। এভাবে সিটং- দুরাত কাটিয়ে দেওয়া যায়।

মেঘের চাদরে মোড়া সিকসিন

তুষারধবল: সিকসিন থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা
উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং জেলার অন্তর্ভুক্ত ‘সিকসিন’ একটি ছোট্ট গ্রাম। জায়গাটি মংপু থেকে ছ’কিলোমিটার উপরে অবস্থিত। এখানে সকালের ঘুম ভাঙে পাখির মিষ্টি ডাকে। প্রকৃতি ও পাখির ছবি তোলার জন্য আদর্শ জায়গা।
সকালের গরম চায়ের পেয়ালা হাতে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালে চোখের সামনে কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য মন ভরিয়ে তোলে। সূর্য অস্ত যাওয়ার পরে মনে হয়, আকাশ যেন কালো চাদরে চার দিক থেকে আমাদের জড়িয়ে আছে। আর নীচের ছোট ছোট গ্রামগুলির আলো দেখে মনে হয় আকাশের তারাগুলো পৃথিবীর বুকে নেমে এসেছে। এই দৃশ্য নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায়।
এখানকার মানুষের আতিথেয়তা এতটাই মনকে ছুঁয়ে যায় যে, বারবার আসতে ইচ্ছে করে। এখান থেকে দার্জিলিং নয়তো লামাহাটা তিনচুলের দিক থেকেও সারা দিনের জন্য ঘুরে আসতে পারেন। সিকসিন জায়গাটি সেঞ্চল ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারির অন্তর্ভুক্ত। এখানে একটি জাঙ্গল ট্রেক। 
এনজেপিতে নেমে গাড়ি করে সিকসিনের উদ্দেশে, যাওয়ার পথে সেবক । সাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগে সিকসিন পৌঁছতে। মংপু থেকে যত উপরে উঠছি, ঘন মেঘ ততই যেন  ঘিরে থাকবে। চারদিকে শুধু মেঘ আর মেঘ। তার সঙ্গে কনকনে ঠান্ডা হাওয়া। ওখানে দুপুরের খাবার খেয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বেরুতে হবে সেঞ্চল ওয়াইল্ড লাইফের সফরে। প্রায় দেড় ঘণ্টা মতো এই ট্রেকিং -পথ। এক দিকে পাহাড়ের জঙ্গল, অন্য দিকে খাদ আর মাঝখানে সরু মাটির রাস্তা ধরে  এগিয়ে যেতে হবে। বেশ গা ছমছমে ভাব আর রোমাঞ্চকর অনুভূতি হতে লাগবে। যখন জঙ্গলের মাঝামাঝি, তখন মনে হল, মেঘ যেন পুরো রাস্তাটা ঘিরে আটকে রেখেছে। সামনে-পিছনে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না, তবুও না থেমে গাইডের সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। এই জঙ্গলে রয়েছে চিতা বাঘ, ভল্লুক, বন্য শূকর ইত্যাদি।  ট্রেকিং যখন শেষ হবে ঘড়িতে  বিকেল পাঁচটা বেজে যাবে। হেঁটে হোমস্টেতে ফিরতে আরও প্রায় ১৫-২০ মিনিট মতো লাগবে। পুরো রাস্তা মেঘে ঢাকা। কোনও রকমে ধীরে ধীরে রাস্তার ধার দিয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরতে হবে।
উঁকিঝুঁকি: এমন অনেক পাখির দেখা মিলবে লামাহাটা পার্কের উদ্দেশে। সুন্দর সাজানো এই পার্কটি। বেশ কিছুক্ষণ কাটিয়ে  পরের গন্তব্য লাভার্স পয়েন্ট এবং তার সঙ্গে তিস্তা ও রঙ্গিত নদীর সঙ্গমস্থল দেখতে। এর পর পেশক চা বাগান এবং তিনচুলে দেখা হল। ফিরে আসার দিন বেরোনোর আগে বাড়ির মালকিন সকলকে উত্তরীয় পরিয়ে সম্মান জানালেন। এই সফরে এটা পর্যটকদের কাছে সব চেয়ে বড় পাওনা। ওখান থেকে বেরিয়ে  মংপুতে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ি। খুব সুন্দর ছোট বাড়িটি, অজানা ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখা। এর পর যোগীঘাট হয়ে  সিটং-এর কমলালেবুর বাগানে। জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ অবধি সিটং-এ গাছভর্তি কমলালেবু বাহার।
দার্জিলিং তো কত বার যাওয়া হয়! ঝটিকা সফরে সিকসিন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা কিন্তু একেবারে খুবই ভালো।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ