তুঙ্গনাথ - চন্দ্রশীলা - দেউরিতাল বেড়াবার সম্পূর্ণ গাইড ঃ-
চোপতা আর দোগলভিটার সৌন্দর্য্য বর্ণনা করা কঠিন। পৃথিবীর উচ্চতম শিবালয় ও পঞ্চকেদারের অন্যতম তুঙ্গনাথ ( ১২০৭৩ ফুট) আরো দেড় কিলোমিটার দূরে চন্দ্রশীলা টপ ( প্রায় ১৩০০০ ফুট)। তুঙ্গনাথের রাস্তা খুবই ভয়ঙ্কর। খাড়া পথ। হিমালয়ের কাছে পৌঁছান এভাবেই সম্ভব। হরিদ্বারা হয়ে উখিমঠ। এখানের সৌন্দর্য্য সত্যিই অপূর্ব। এবার এগিয়ে যাওয়া মঙ্গল সিংজির চটি। শুধুমাত্র তীর্থযাত্রীদের সেবা করার উদ্দেশ্যে এই চেটি নির্মাণ। নির্মাতা মঙ্গলজী। ৮০ বছর বয়স্ক মানষ। এখন চটি সামলাচ্ছেন তার ছেলে,জামাই। তুঙ্গনাথ যেতে হয় খচ্চরে। হাঁটতে হাঁটতে এবার সিমেন্ট বাঁধানো রাস্তার পাশে সবুজের ছড়াছড়ি অসংখ্য ভালোলাগার গাছ গাছালি। বিস্তির্ণ সবুজ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বুগিয়াল। বরফ সাদা পাহাড়মালা। ঝকঝকে নীল আকাশের নীচে বুগিয়ালের মধ্য দিয়ে উঠে গেছে সকীর্ণ পথ। ওপরের দিকে গাছের সংখ্যা কম। নীচে মাউন্টেন ফক্সের এলাকা। নীচে হাই অলটিটিউট প্লান্ট অব ফিজিওলজি রিসার্স সেন্টার। পাশেই গণেশ মন্দির। লোককথা অনুযায়ী কিছু রাস্তা পেরিয়ে বেঁধে যাবে নন্দিরূপী শিবের বাহু পড়া স্থান। মন্দিরটি যথেষ্ট প্রাচীন। এছাড়াও আশে পাশে দেখা যাবে পার্বতী মন্দির ও অন্যান্য মন্দির সব এবং পুরনো মূর্তি অনেক দেখা যাবে। মূর্তির স্থাপত্যে নানান শৈল্পিক মিশেল। মন্দিরের পুরোহিত সব গাড়োয়ালের স্থানীয়। এরা সব মাকুর বাসিন্দা। শীতকালে নীচে মূর্তি মাকুনাথে নিয়ে যাওয়া হয়।
এবার পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে গেলে বাঁধবে অলটিটিউট প্লান্ট অ্যান্ড ফিজিওলজি রিসার্চ ইন্সটিটিউট। তুষারপাতে বরফ মেখে নতুন উৎসবে মেতে উঠা যাবে।
এবার হাঁটতে হাঁটতে চন্দ্রশীলা টপের দিকে। সান রাইজ দেখতে ধীরে ধীরে উপর। এদিকের রাস্তা একদম বাঁধানো নয়, এবড় খেবড়। তবে মানুষের চলাচলে পথ খুব স্পষ্ট। কয়েক জায়গায় পথ নেই আন্দাজ মত হাঁটতে হয়। কিছুটা হাঁটলে পৌঁছান যাবে গোপেশ্বরের দিকে আধ ঘন্টার মধ্যে পৌঁছান যাবে টপে। এখানে গঙ্গা মায়ের ছোট্ট একটা মন্দির দেখা যাবে। এখানে বিচিত্র সব ভিউ দেখা যাবে। চৌখাম্বা, ত্রিশুল,নন্দাদেবী ইত্যাদি শৃঙ্গ সামনে থেকে দেখা যাবে। চারিদিক খোলা, হাওয়ার প্রচন্ড দাপট। এখানে মঙ্গলজীর চেটিতে হালুয়া পরোটা জগত বিখ্যৎ। এবার সারি থেকে দেওরিতালের জন্য হাঁটা শুরু। মুটামুটি তিন কিলোমিটার। গাছ পালার মধ্য দিয়ে চড়াই। দেউরিতালে থাকবার ব্যবস্থা তাঁবু। চারিদিক জঙ্গলের মধ্যে একটি বড় হ্রদ বা তাল। সামনে চৌখাম্বা, নীলকন্ঠ এবং কেদার রেঞ্জের বিস্তির্ণ পর্বত শ্রেণী। সামনে বাজার, দোকান বসেছে। চিৎকার চেচামেচি করে প্রকৃতি ও সুন্দর বহির্ভূত যাবতীয় গল্প চলে এখানে। এখানে পাওয়া যাবে সারি গ্রামের উধমভাইকে। ওর স্ত্রী ও বাবা নিয়ে এখানেই থাকে। শীতকালে বরফে ঢেকে যায় এই তাল। তবু পর্যটকরা এখানে আসে ঘুরতে। এই জঙ্গলের মধ্য দিয়ে একটি রাস্তা আছে, অসাধারণ রুট যাতে করে চোপতা যাওয়া যায়। দূরত্ব ১৮ / ১৯ কিলোমিটার মত। শীতকাল না হলে একদিনে পৌঁছানো যায়। অথবা মাঝে একদিন থানে বা তাঁবুতে থেকে পৌঁছান যায়। জঙ্গলের মধ্য দিয়ে পায়ে চলা মাটির রাস্তা। দেড় / দু কিলোমিটার মত। মাঝে মাঝে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে দেখা যাবে তুষারশ্রেণী। রাতে উধমভাই - এর তাঁবুতে কাটানোই শ্রেয়।
বনের উপর অত্যাচারও সমানে চলছে। যেমন- ক্যাম্প ফায়ার, চুটল হিন্দী গানের গ্যাঞ্জাম।
অন্ধকার থাকতে থাকতে হ্রদের জলে সূর্য্যোদয় দেখার জমায়েত।
দেউরিতালে পানীয় জল পাওয়া যায় না। সারি থেকে জল সংগ্রহ করতে হয়। টুরিষ্টদের বোতলের জল ভরষা। উধমভাই - এর টানে বারে বার এখানে আসতে হবে।
কীভাবে পৌঁছাবেন ঃ- কলকাতা থেকে দুন অথবা উপাসনা এক্সপ্রেসে হরিদ্বার।হরিদ্বার থেকে বাসে উখিমঠ। বাস সবই সকাল আটটায় ছেড়ে যায়। উখিমঠ থেকে ভোরবেলায় চোপতা বাস ছাড়ে। এছাড়া হরিদ্বার থেকে গোপেশ্বর হয়ে চোপতায় যাওয়া যায়। তুঙ্গনাথ - চন্দ্রশীলা যাওয়ার জন্য চোপতা থেকে হাঁটা পথে যেতে হবে।
0 মন্তব্যসমূহ