বেলুন গ্রাম ও করঞ্জলী গ্রাম দেখতে যাই চলুন
বর্ধমানের ছোট্ট অপরূপ সবুজে ঘেরা গ্রাম বেলুন দেখতে চলুন। পাশ দিয়ে বহে গেছে শিবাই নদী। প্রায় ৩০ বিঘা জমির উপর তৈরি হয়েছে ঘন জঙ্গল। জঙ্গলে ঘেরা এই প্রকৃতিবিক্ষণ কেন্দ্রটির বিস্তির্ণ জমিতে ফুল ও ফলের গাছ। চারিদিক পাখীর কলকাকলী
নানা প্রজাতির পাখীর দেখা মেলে এখানে। সিভেট, মাঙ্গূজ, জঙ্গল ক্যাট ছাড়াও রয়েছে বেশ কিছু স্তন্যপায়ী, সরিসৃপ ও উভচর প্রাণী। চাইলে নদীর বুকে ভেসে বেড়ান যাবে। ঘন্টায় নৌকা ভ্রমণের জন্য ভাড়া লাগবে ৩০০ টাকা। একটি নৌকায় চার জন সাওয়ারি হতে পারে। এছাড় কাছে পীঠে ঘুরা যাবে। যেমন-- ডলফিন পয়েন্ট, বাহুলক্ষ্মী সীতা পীঠ মন্দির ও সোনারুম্ভী রাজবাড়ী। শান্ত ও ধীর স্থির প্রকৃতিকে উপভোগ করতে দুদিন কাটাবার জায়গা হচ্ছে বেলুন গ্রাম।
কী ভাবে পৌঁছাবন বেলুন গ্রামে ?
কলকাতা থেকে গাড়িতে গেলে দৃর্গপুর এক্সপ্রেস ওয়ে হয়ে বর্ধমান শহর পেরিয়ে ভাতার হয়ে চলে আসতে হবে বেলুন বাইয়ো ডাইভারসিটি রিসার্চ সেন্টারে। কলকাতা থেকে সড়ক পথে দূরত্ব ১৭৫ কিলোমিটার। গাড়তে সাড়ে তিন ঘন্টা মত। ট্রেনে হাওড়া অথবা শিয়ালদহ থেকে বর্ধমান। বর্ধমান থেকে ট্রেকারে বেলুন।
কোথায় থাকা যাবে ?
- বেলুন ইকোস্টে, এখানে চার তিন শয্যার ঘর আছে। মাথা পিছু ভাড়া দৈনিক ৩০০০ টাকা। এই টাকার মধ্যে একজন গাইড আছে। যিনি পুরো জঙ্গলটা ঘুরিয়ে দেবে। গাইডটি প্রকৃতি বিষারদ। এছাড়া হোমস্টে পাওয়া যাবে।
জমিদারি গন্ধমাখা করঞ্জলী
কাকভোরের মৃদু আদর গায়ে মেখে অসংখ্য নৌকা ভাসছে গঙ্গার জলে। নদী অনেকটাই প্রশস্ত এখানে। ভোঁ বাজিয়ে চলাচল করছে অতিকায় মালবাহী জাহাজ। তার ঢেউয়ের ধাক্কায় দূরে সরে যাচ্ছে জেলে নৌকাগুলি। চলতে চলতে হঠাৎই পাড় ভেঙে ছোট্ট একটা বাঁকের মধ্যে ঢুকে গিয়েছে নদীর জল। ছোট খাঁড়িটা থেকে নৌকা বের করছিলেন মাঝি। তাঁর নৌকার গলুইয়ে উঠে পড়েছে স্তূপীকৃত মাছ। নরম রোদে চকচক করছে রুপোলি আঁশ। সব মিলিয়ে জমজমাট গঙ্গাপারের করঞ্জলী গ্রামের ট্যাংরার চর।
কলকাতা থেকে গাড়িতে ডায়মন্ড হারবারকে পিছনে ফেলে ন্যাশনাল হাইওয়ে ১১৭ ধরে কাকদ্বীপের দিকে মিনিট চল্লিশ যেতেই করঞ্জলী গ্রাম। জাতীয় সড়ক ছেড়ে বাঁ দিকে করঞ্জলী রেল স্টেশনের লেভেল ক্রসিং পেরিয়ে হাঁটা পথে ঘোষেদের জমিদার বাড়ি। আদি জমিদারবাড়ির মাত্র দু’-এক শতাংশ এখনও রয়েছে। তবে এই চত্বরের মন্দির আর মূর্তির সঙ্গে জড়িয়ে ইতিহাস। কষ্টিপাথরে নির্মিত শ্যাম ও অষ্টধাতুর রাধা মূর্তিটির দিক থেকে চোখ ফেরানো দায়।
করঞ্জলী দেখতে সকালেই পৌঁছান ট্যাংরার চরে। পারের অস্থায়ী দোকানের টাটকা খেজুর রসের লোভ ছাড়া মুশকিল। ঘুগনির সঙ্গে নরম তুলতুলে পেটাই পরোটার স্বাদও ছাড়া যাবে না। এখানে থাকার জায়গা বলতে সরকারের পথের সাথী আর হোমস্টে। শুধু মনোরম সৌন্দর্যই নয়, করঞ্জলীর ইতিহাসও বর্ণময়। খনন করে পাওয়া জৈন পার্শ্বনাথের নিখুঁত মূর্তিই এখানে পঞ্চানন বা বাসুদেব রূপে পূজিত হয়। প্রতি বছর বৈশাখ মাসে এখানে বসে গোষ্ঠমেলা। কৃষ্ণ ও বলরাম গোচারণে গোষ্ঠে গিয়েছিলেন মেনে নিয়েই আশপাশের মন্দির থেকে রাধা-কৃষ্ণের বিগ্রহ শোভাযাত্রা সহকারে মেলা প্রাঙ্গণে আনা হয়। শোভাযাত্রা ও ৫০-৬০টি থালায় ভোগ সাজানো দেখতে ভিড় জমে।
গ্রামীণ: করঞ্জলীর সাদামাঠা জীবন কিছু দূরেই আর এক অচেনা গ্রাম কাঁটাবেনিয়া। এখানকার বিশালাক্ষীতলায় মন্দিরের দ্বারফলক ও বিশাল প্রস্তরখণ্ডগুলো ফেলে আসা অতীতের স্মৃতি। বিষ্ণু ও বাসুদেবের মূর্তি খুবই সুন্দর। স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায় বিশালক্ষীদেবীকে কোনও মাঝি নদীর পার থেকে খুঁজে পান। সময় নেই তাই কাঁটাবেনিয়ায় যাওয়া যায়। ফিরতি পথে চোখে পড়ে ভাঙা রাসমেলা। মেলার আনাচকানাচ ঘুরে অজান্তেই সওদার বোঝাটা বেশ ভারী হয়ে উঠল। সূর্য তখন পশ্চিমে ঢলছে।
কী ভাবে যাবেন করঞ্জলী ?
শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখা হতে নামখানা। এখান থেকে কাকদ্বীপ পাশেই করঞ্জলী গ্রাম।
0 মন্তব্যসমূহ