চলুন ডেনমার্কের কোপেনহেগেন ঘুরে আসি ঃ--
রাষ্ট্রসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ ফিনল্যান্ড। আর দ্বিতীয় স্থানে ডেনমার্ক। সেই ডেনমার্কের রাজধানী হচ্ছে কোপেনহেগেন। স্বাভাবিক ভাবেই পৃথিবীর সুখী শহরের তালিকায় উপরের দিকেই আছে কোপনহেগেন। জীবন যাত্রার না না ক্ষেত্রে সেখানের মানুষেরা কতটা সন্তুষ্ট তার ভিত্তিতে সুখী দেশ ও শহরের স্থান বাছা হয়। ডেনমার্ক অথানৈতিক ভাবে উন্নত দেশ। জনপ্রতি মোট দেশীয় পণ্যের নিরিখে এগিয়ে থাকার সব দেশের মধ্যে অন্যতম। নাগরিকদের সামাজিক সুরক্ষার ব্যাবস্থা খুব উন্নত মানের। ৬৫ বছর চাকুরির মেয়াদ। তারপর সরকার থেকে ভালো ভাতা পান। বাচ্চা জন্মের পর মা ও বাবা এক বছর সবেতন ছুটি পান।
প্রায় ৮ লক্ষ মানুষের বসবাস ডেনমার্কের ঘণ বসতির শহর। দেশের দক্ষিণ প্রান্তে জীল্যান্ড নামের এক দ্বীপের উপর রয়েছে কোপেনহেগেন।
বাল্টিক সাগরের মাঝে এক উপদ্বীপ আর দ্বীপ নিয়ে গড়ে উঠেছে ডেনমার্ক দেশ। ৬৭ কিলোমিটার বিস্তৃত দেশের যে কোন জায়গা থেকে ঘুরে নেওয়া যায়। সাগর দিয়ে ঘেরা এই শহর কিন্তু সমতল ভূমি নিয়ে গঠিত।
কোপেনহেগেন নানা করণে পর্যটকদের কাছে বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্র। সাগর থেকে শহরে একাধিক খাল ঢুকে গেছে যার চারিপাশ ঘিরে শতাধিক বছরের পুরনো রঙিন কাঠের বাড়ি, পৃথিবীর প্রাচীনতম প্রমোদ উদ্যান। আর রয়েছে ছোট মৎস্য কন্যা। রূপকথার লেখক হ্যান্ড আন্ডারসনের এই শহর। কেক ও বিয়ারের জন্যও বিখ্যাৎ। ডেনমার্কের রাজতন্ত্র পৃথিবীর প্রাচীনতম। গত ১২০০ বছর ধরে একই রাজ পরিবারের মানুষজন ডেনমার্কের রাজা রাণীর আসনে রয়েছেন। শহরের পথে ঘাটে নতুন ও পুরনো রাজপ্রাসাদ দেখা যায়। রাজকীয় শিল্পকর্মও ছড়িয়ে আছে। আধুনিক শহরের মিলে মিশে এক ঐক্য স্থাপন করেছে। ডেনমার্কের শাষন ব্যাবস্থা অবশ্য আইন সভা নিয়ন্ত্রিত। বিধিবদ্ধ গণতন্ত্র। ছুটির দিনে দরকারে না লাগা দ্রব্য বিক্রি করেন, এখান থেকে অনেক সুন্দর অথচ সস্তা জিনিস কিনতে অনেক আসেন। এ শহর সাইকেল প্রীতিতে মশগুল। নিজস্ব গাড়ি থাকতেও সাইকেলে চড়তে খুব উৎসাহী। স্কুল কলেজ এবং কি সাইকেলে অফিস করেন। শহর পোড়া ডিজেলের দূষণ থেকে মুক্ত।
এমেলিওনবর্গ রাজপ্রাসাদ দেখে বোঝা যাবে (বর্গ কথার অর্থ দূর্গ বা সুরক্ষিত) অঞ্চল। পাথরে বাঁধানো এক অষ্টভূজ চত্বরের চারিধার ঘিরে ৪ টি প্রাসাদ। একটিতে ডেনমার্কের রাজ পরিবার বাস করেন। এখন রাজ বংশের প্রধান রানি দ্বিতীয় মার্গারেট। ১৯৬০ সালে রাজা পঞ্চম ফ্রাডারিকের সময়ে রাজ প্রসাদ তৈরী হয়। একটা প্রাসাদকে মিউজয়াম করা হয়। কোপেনহেগেনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দেখার জিনিস হচ্ছে মৎস্য কন্যা।
এবার গন্তব্যের স্থান নাইহাবন naihaban ড্যানিস ভাষায় এর অর্থ নতুন বন্দর। সতের শতকে একটি খাল কাটা হয়। খালের দইধারে হাজার বছরের পুরতন বাড়ির সারি,পসরার মেলা, দোকান,খেলাধূলা ও প্রমোদ ভ্রমণের আয়োজন। খালের জলে পর্যটকদের নিয়ে নৌকা অভিসার করেন মানুষেরা।
কোপেনহেগেনের প্রচীন এলাকা। চারিদিকে পুরাতন অট্টলিকা তার মধ্যে গীর্জা, ন্যায়ালয়, ও রাজকীয় সভাগৃহ। সিটি হলের পাশে রয়েছে পৃথিবী বিখ্যাৎ প্রমোদ উদ্যান 'টিভোলি গার্ডেন' ১৮৪৩ সালে তৈরী জনসাধারণের জন্য সবচেয়ে পুরাতন প্রমোদ উদ্যান। আট হেক্টর জমির উপর গড়ে ওঠা এই প্রোমদ উদ্যানের প্রবেশ মূল্য ১৪৫ ক্রোন অর্থাৎ ( ১৭৪০ টাকা)।
এবার ফ্রেডেরিখবর্গ রাজপ্রাসাদ। লাল পাথর দিয়ে তৈরি বিশাল এই প্রাসাদ দূর্গ তৈরি করেন রাজা চতুর্থ খ্রিষ্টয়ান। পাশাপাশি তিনটি দ্বীপ নিয়ে জলের মধ্যে অপূর্ব সুন্দর বাগানে ঘেরা এই রাজপ্রাসাদ ডেনমার্কের সবচেয়ে সুন্দর। এখানে পাওয়া যাবে ইতিহাসের মিউজিয়াম, অসাধারণ সব স্থাপত্য, ও ভাস্কর্যের নিদর্শন ও কারুকাজে সাজান গোছানো।
একটু উত্তর দিকে ক্রোনবর্গ দূর্গ। হেলসিনের নামে জায়গায় সমুদ্রের ধারে পনের শতকে তৈরী এই দূর্গ। ভিতরে "হোলগার" এর মর্মর মূর্তি। এই হোলগারই বিপদে রক্ষা করে ডেনমার্ককে। এই দূর্গকে কেন্দ্র করে সেক্সপেয়ার তাঁর বিখ্যাৎ নাটক হেমলেট লেখেন।
কী ভাবে যাবেনঃ-- দিল্লী থেকে টার্কিশ বিমানে ইস্তাম্বুল টাচ করে কোপেনহেগেনে যাওয়া যাবে।।
0 মন্তব্যসমূহ