Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

ঘুরে আসতে পারেন - সাহিত‍্যিক বিমল মিত্রের বাড়ি

সাহিত‍্যিক বিমল মিত্রের বাড়িঃ-



বিমল মিত্র ভীড় এড়িয়ে থাকতে ভালোবাসতেন। কোন সভা বা আড্ডাস্থলে তাঁকে দেখা যেত না। নিজের বাড়ি ছিল তাঁর প্রথম পছন্দের জায়গা। যাঁরা বিমল মিত্রের বাড়িটা চিনতেন তাঁরাই চলে আসতেন সাক্ষাৎ করবার জন‍্য। একদিন গুণমুগ্ধ তাঁকে ফোন করলেন, যে কয়টা লেখা নিয়ে আলোচনা করতে চান। ভদ্র  মহিলার নাম শুনে বিমলবাবু আঁতকে উঠলেন। তিনি বললেন, "তিনি বাড়তে এলে পুলিশ আসতে পারে।" তাই আসা নাকচ। বরঞ্চ বিমলবাবু ওনার বাসায় চলে যাবেন কোন একদিন। সে পাঠিকাকে আটকানো গিয়েছিল।
একদিন ফোন না করেই সোজা মিত্র মশাই-এর লালবাড়িতে চলে এলেন, ইচ্ছে " কড়ি দিয়ে কিনলাম" উপন‍্যাস নিয়ে একটা সিনেমা করার। মিত্রমশাই বলেছিন, হ‍্যাঁ আর কিছুদিন পরে হলে ভালো হবে, কারণ ঐ পাঠক যদি সিনেমা করে তো বই পড়া পাঠকতো কমে যাবে। সেদিনের পাঠিকা ছিলেন সুচিত্রা সেন আর পাঠক ছিল স্বয়ং উত্তম কুমার।
সুচিত্রা সেন ও উত্তম কুমার তাঁর বাড়িতে আসলেও বিমলবাবু কিন্তু কোন আমলই দিলেন না। 
বর্তমান সময়ে লালবাড়িতে ঢুকতেই চোখে পড়বে বিমল মিত্রের এক আবক্ষ মূর্ত্তি। আবরন উন্মোচন করেছিলেন তৎকালিন রাজ‍্যপাল মাননীয় কেশরিনাথ ত্রিপ্তাঠি মহাশয়। উপরের হলঘরে সাজান রয়েছে বিমল মিত্রের উপন‍্যাসের বিভিন্ন চরিত্রের কাল্পনিক পেইন্টিং। ছবি একেছেন সুব্রত চৌধুরী, করুণাময় শূর, শ‍্যামলী বসুর মত চিত্রকরেরা। এই ঘরে বসে ১৯৫৬  সালের পরবর্তী লেখাগুলি লিখেছেন বিমল মিত্র মহাশয়। লেখকের পৈত্রিক বাড়ি ছিল ১৫ নং সব্জি বাগান লেনে। সেটি এখন নীমপীঠ রামকৃষ্ণ মিশন পরিচালিত ছাত্রালয়। বিমল মিত্রের  দেশের বাড়ি ছিল নদীয়া জেলার গাজনা অঞ্চলে কৃষ্ণগঞ্জ থানার অন্তর্গত ফতেপুর গ্রামে। 
১৯১২ সালে ১৮ মার্চ বিমল মিত্রের জন্ম। বাবার নাম শতীস চন্দ্র মিত্র আর মায়ের নাম সুরঞ্জনা দেবী। বিমলবাবুর পড়াশুনা কলকাতাতেই। ১৯২৯ সালে তিনি বয়েজ স্কুলে পড়াশুনা করে আশুতোষ কলেজে থেকে I.A. ও বিদ‍্যাসাগর কলেজ থেকে B.A. পাশ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে M.A. পাশ করেন। M.A. পাশ করার পর তিনি  ভারতীয় রেলওয়েতে যোগদান করেন। দক্ষিণ - পূর্ব রেলে চাকুরিতে বিলাসপুর ও চক্রধরপুরে পোষ্টিং হন। তখন থেকেই তাঁর লেখা লেখিতে খুবই সুনাম। ১৯৫০ সালে রেলের কাজ ছেড়ে দিয়ে পুরোপোরি লেখার জগতে মনোনিবেশ করলেন। তারপর থেকে তাঁর উপন‍্যাসগুলি জনপ্রিয় হতে থাকে। ১৯৬৪ সালে " কড়ি দিয়ে কিনলাম" উপন‍্যাসটি " রবীন্দ্র পুরস্কার" পান। যে ঘরে তিনি লিখতেন সেখানে একটি চেয়ার ও একটি টেবিলে সোনার নিব আর পারকার পেনে লিখে যেতেন। লেখার সময় এতটায় নিমগ্ন থাকতেন যে সারা রাত ধরেই লিখে যেতেন। লিখতে লিখতে আঙ্গুলে কড়া পড়ে যেতো। তা এড়াতে আঙ্গুলে ভিজে কাপড় জড়িয়ে রাখতেন। ঘরের শোফায়, বিছানায় বই- এর স্তুপ জমে থাকতো। সব‍্যসাচী লেখক তিনি একসাথে ১০/১২ টি উপন‍্যাস লেখার বিস্ময় প্রতিভা তাঁর ছিল। প্রতিদিন বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা দিতেন। আর চিরকূটে লিখে রাখতেন কাকে কোন লেখা দিলেন। তাঁর জন‍্য ন‍্যাশনাল লাইব্ররিতে একটি ঘর রাখা ছিল। বেলা ১০ টায় কিছু খেয়ে বেরিয়ে যেতেন। সারাদিন কাজ করার পর অর্থাৎ লেখালেখির কাজ শেষ করে বিকালে স্ত্রীকে নিয়ে গড়ের মাঠ, ভিক্টোরিয়ায় আড্ডা শেষ করে রাতে বাড়ি ফিরতেন। কোন কোন দিন স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে অনুজ শংকরকে নিয়ে আড্ডা চলত। হাঁটতে হাঁটতে হাজরা মোড় অবধি চলে আসতেন। 
১৯৫৬ সালে মাসুদ সাহেবের এই লালবাড়িটা কিনে নিয়ে বসবাস শুরু করেন বিমলবাবু।

কী ভাবে যাবেন.ঃ-- বাসে দক্ষিণ কলকাতার রাসবিহারী আসতে হবে। মেট্রোয় আসলে কালিঘাটে নামতে হবে। তবে গেটের বাইরে আসতে হবে রাসবিহারি মোড়ের গেট দিয়ে বাইরে আসতে হবে। টোটোয় চেতলা বয়েজ স্কুল স্টপে নামতে হবে। কেওড়াতলা শ্মশান বায়ে রেখে চেতলা সেতু অতিক্রম করে ডান দিকে বিমল মিত্রের বাড়ি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ