Header Ads Widget

Responsive Advertisement

চলুন ঘুরে আসি ক্রোয়েশিয়ান এথেন্স, সুন্দরী রাণীর দেশ

ক্রোয়েশিয়ান এথেন্স, সুন্দরী রাণীর দেশ  ঃ-


ডুব্রভ্নিকের অবস্থান ক্রোয়েশিয়ার একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে অ‍্যাড্রিয়াটিক সমুদ্রের উপকুলে। ছোট্ট শহর ডুব্রভ্নিকের আয়তন ৮  বর্গ কিলোমিটার। ২০১১ সালে সরকারী হিসাব অনুযায়ী লোকসংখ‍্যা- ৪২,৬১৫ জন। এই শহরের দুটি ডাকনাম একটি হল "ক্রোয়েশিয়ান এথেন্স" আর একটি "অ‍্যাড্রয়টিক পার্ল "। আবার স্থানীয় মানুষের কাছে আদরনিয় নাম- " থেসরাম মুন্ডি"। বেশ কয়েক শতক জুড়ে শহরের নাম ছিল " রগুসা"। এই নামটি সরকারি নথিতে ব‍্যবহৃত হয়ে আসছে। ডুব্রভ্নিকের একদিকে সবুজ পাহাড়। অপর দিকে অসম্ভব নীলাভ অ‍্যাড্রয়টিক  সাগর। এই দুই অবস্থানের মধ‍্যে লিকা নদীর উপস্থিতি বাস্তবিকই শহরটিকে প্রাক‍ৃতিক সৌন্দর্য‍্যের দিক থেকে অনন‍্য করে তুলছে। প্রাক‍ৃতিক সৌন্দর্য‍্য উপভোগ করা ছাড়াও এই শহরের অন‍্যতম মূল আকর্ষণ হচ্ছে ওল্ড টাউন। ইউরোপে একক শহরে ওল্ড টাউনের স্বাদ একেক রকমের। কারণ সেখানে বনিয়াদ বাড়ির সঙ্গে খাঁজে খাঁজে আছে শতাব্দি প্রাচিন ইতিহাসের সাক্ষ‍্য। এখানকার ওল্ড টাউনের সৌন্দর্য্য বা বৈশিষ্ট্য হল এর অবস্থান। দেখলে মনে হবে সমুদ্রের কোলে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা পাহাড়ের প্রকৃতির খেয়ালে গড়ে উঠেছে এই টাউনশিপ। ১৯৯৩ থেকে ২০০৩ সাল অবধি ক্রোয়েশিয়ার ৫০ কোনার করেনসিতে শহরের ওল্ড টাউনের সুন্দরভাবে ছাপা হয়েছে। পুরাতন ডুব্রভ্নিকের জন্ম হয়েছিল সপ্তম শতাব্দিতে। ওল্ড টাউনে কোন গাড়িঘোড়া চলে না। শুধু মানুষের আনাগোনা। সাদা দেওয়াল আর লাল টালির ছাদের পাশ দিয়ে হেঁটে চলেছেন দেশ বিদেশের অসংখ‍্য মানুষেরা। ওল্ড টাউনেই আছে গির্জা, মানেস্ট্রি, রেলওয়ে টাওয়ার। শান্ত ধীর স্থির ডুব্রভ্নিক শহরকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে, সে এক সময় রক্তক্ষয়ি সংগ্রামের মধ‍্য দিয়ে অতিক্রান্ত হয়েছে। ১৯৯২  সাল অবধি প্রতিবেশী দেশগুলির সাথে যুদ্ধে প্রচন্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সৌন্দর্যের এই রাণী। ১৯৯১ সালে যুগোশ্লাভিয়া ভেঙ্গে যাওয়ার পর সার্বিয়া ও ম‍্যান্টিনেগ্রর সৈন‍্য বাহিনী  দখল করে রাখে সাত মাস। ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে সৌন্দর্যের রাণীকে তছনছ করে দিয়ে যায়। শহর খুঁজলে অবশ‍্যই সেই নির্মম পুরাতন ইতিহাসকে খোঁজ পাওয়া যাবে না। আজ ইউনোস্ক ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি পেয়ে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের সাইটের অলঙ্কারে ভূষিত হয়েছে। 
শহরের আরেক আকর্ষণ ডুব্রভ্নিক দূর্গ বা ক‍্যাসেল। সমুদ্রের গা ঘেষে উঠেছে দূর্গের প্রাচীর। দূর্গে ঢোকার মুখে অনফ্রিওর ঝর্ণা। গোল গম্বুজের মত এর গড়ন। সৃষ্টির সময়কাল ১৪৩৮ সাল। এই ঝর্ণা থেকেই বহুকাল জল সরবরাহ করা হয়েছে। এখন এটি আর ব‍্যাবহৃত হয়না। দূর্গে প্রবেশ মূল‍্য মাথাপিছু ১৫০ কুনার। সিঁড়ি দিয়ে পাঁচিলে উঠে দেখা যাবে চারিপাশের নীল সমুদ্র আর পাহাড়ের অপরূপ দ‍ৃশ‍্য। 
সমুদ্র বন্দর হিসাবে ডুব্রভ্নিক এক সময়ে ভেনিসকে চ‍্যালেঞ্জ জানিয়েছিল। সারা বিশ্বের সাহিত‍্যিক এই শহরের প্রেমে হাবুডুবু খেতেন। তাঁদের মধ‍্যে অবশ‍্যই উল্লেখযোগ‍্য হচ্ছেন বায়রন, বার্নার্ড শ, অগাথা ক্রিষ্টি প্রমুখ। জন বার্নার্ড শ ১৯২৯  সালে শহরটি দেখে মন্তব‍্য করেন যে, মর্তে স্বর্গ যদি থেকে থাকে তবে এই শহরকে বলা যায়। বাস্তবিকই শহরটির রূপ সৌন্দর্য এত মুগ্ধকর যে ভাষা দিয়ে বর্ণনা করা যাবে না। সূর্যাস্তের সময় এই শহর অস্ত গামী সূর্যের মিষ্টি আলোয় ডুব্রভ্নিক যেন রূপকথার শহর হয়ে ওঠে।
সড়ক পথে ইউরোপের সব শহরের সাথে যুক্ত। আভ‍্যন্তরিন বাস পরিষেবা খুবই আধুনিক ও উন্নত। স্থানীয় মানুষেরা ক্রোয়েশিয়ান ভাষায় কথা বল্লেও ইংরাজী টুকো তারা জানেন। সমুদ্র পথে ঘুরে আসা যাবে ইতালিতে।
বেড়াবার উৎকৃষ্ট সময় মে জুন  সেপ্টেম্বর  নভেম্বর। ডুব্রভনিক ইয়ারপোর্ট থেকে মূল শহর ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।  শহরে নানান ধরনের হোটেল পাওয়া যাবে। এছাড়া এপার্টমেন্ট ভাড়া নেওয়া যায়। 

কী ভাবে যাওয়া যায় ঃ-- দিল্লী অথবা মুম্বাই থেকে ফ্লাইটের টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। ক্রোয়েশিয়ার ভিসা সংগ্রহ করতে হবে দিল্লী থেকে। মোটামুটি সব জায়গাগুলি ঘুরতে ১৫ দিনের প‍্যাকেজ করে নেওয়া ভালো। 
ডুব্রভনিকে খাওয়া দাওয়া বিখ‍্যাৎ সমুদ্রেরর খাবার। যে কোন রেষ্টুরেন্টে সমুদ্রের মাছ ও শামুক দিয়ে খাবার পাওয়া যায়। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ