ডুয়ার্সের কাছাকাছি ঘুরলে মন ভরে যায় ঃ
দু'পাশে বাগানের মাঝ দিয় হাঁটলে পৌঁছানো যায় মাদারি হাটের দিকে। বায়ে কাছাকাছি চলে আসে রেল লাইন আবার দূরে চলে যায়। এভাবেই পৌঁছে যাওয়া বীরপাড়া। বেশ ঘন বসতিপূর্ণ এলাকা। রেল স্টশনের নাম দলগাঁও। চা বাগানের জন্য খুবই রমরমা। বীরপাড়া থেকে একটি রাস্তা গেছে গরুচিরা। পাহাড়ের কোলে বনের আঁচলে বাঁধা ডুয়ার্সের বিউটি স্পট। পর্যটকদের থাকবার জন্য গ্রামবাসীদের কো-অপরেটিভ সিস্টেমে গড়ে তুলেছে থাকবার জায়গা।
বীরপাড়া থেকে জাতীয় সড়ক মুজনাই নদী অতিক্রম করে মাদারিহাটের দিকে গেছে। জলদাপাড়া অভয়ারণ্যের গেটওয়ে হচ্ছে এই শহর। কিন্তু এখান পৌঁছাবার আগে ডানদিকে ঘুরে বনের পাশে কয়েক কিলোমিটার গেলে পাওয়া যাবে খয়েরবাড়ি লেপার্ড রেসকুউ সেন্টার। বিশাল এলাকা জুড়ে বিশাল খাচা চিতা বাঘের জন্য।পাশ দিয়ে বহে চলেছে রূপবতী তোর্সা। তোর্সার বাকে বাকে যৌবনের বিহঙ্গ। পাশেই ওয়াচ টাওয়ারে উঠে নদীর যৌবন আর অরণ্যের সৌন্দর্য্য অতি লোভনীয়।
খয়েরবাড়ি বেড়িয়ে হাইওয়েতে ওঠার পর উল্টো দিকের শাখা রাস্তা ধরে জলদাপাড়া অভয়ারণ্যের ধুমচি বিট পেরিয় আসার সুযোগ আছে। বাঁয়ে খানিক দূরে পড়ে থাকবে গোপালপুর চা বাগান। গ্রামের মধ্যে ধুমচি বিট অফিস অতিক্রম করলেই দেখা যাবে বড় বড় ঘণ অরণ্য। বনের গভীরে হাতিদের রাজত্ব। ধুমচির গভীর জঙ্গলে হস্তি প্রসবের সুরক্ষিত জায়গা আছে। ওদিক যাওয়া বাপদজনক। বরং নদীর উৎসস্থল দেখে নেওয়া যায়। ভুটানের পাহাড় থেকে নেমে সুগভীর বনের ভিতর দিয়ে এসে লাজুক মুখ লুকিয়েছে।
কয়েক কিলোমিটার যাওয়ার পর বীরপাড়া থেকে মাদারিহাট যেতে হাইওয়ের পাশ দিয়ে বহে চলা নদী সেই একই নদী। এখানে একতির উপর সেতু আছে, কিন্তু সেটা কাঠের তৈরী।
কিছুদূর গেলে চোখে পড়বে রাভাদের গ্রাম। আরো কিছুদূর গেলে পাওয়া যাবে রাঙালিয় বাজনা, সম্পর জনপদ ও ডুয়ার্সের আদিবাসী সংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র। এখান থেকে আধ কিলোমিটার দূরে মাদারিহাট। বাঁদিকে ধুমচির সমান্তরাল মুজনাই চাবাগান।য়য় বাগানের একই প্রান্তে তরাই-য়ের ধারের রাস্তায় হাতি চলাচলের একটি রাস্তা। একটি ওয়াচ টাওয়ার এবং লগ হাট তৈরী করা হয়েছে। টাওয়ার থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা বরফ শরীরে সুর্যাস্ত রং বাহারি আল্পনা মনে দাগ কেটে রাখবে।
হাইওয়ের উপর মাদারিহাট জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের দরজা। রাজার অঞ্চল পার হলেই প্রকৃতির প্রসারিত জঙ্গল। হলং নদীর ওপারে রাজ্য পর্যটনের মাদারিহাট ট্যুরিষ্ট লজের অবস্থান চমৎকার। সামনে বাগান প্রশস্ত, বন্য জন্তুদের মূর্তি শোভিত।
৭ কিলোমিটার আরো ভিতরে অর্থাৎ বনের মধ্যে প্রবেশ করলে পাওয়া যাবে হলং ফরেষ্ট লজ। পাশেই হাতি পয়েন্ট থেকে হাতির পিঠে উঠে ভোরবেলায় দেখা যাবে এক শৃঙ্গ গন্ডারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়া যাবে।
ডুয়ার্সের সব জাতীয় উদ্যানগুলি জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস বন্ধ থাকে। জঙ্গল সাফারির জন্য শুধু হাতি রাইড আছে। এখানে অন্যত্র জিপসিতে জঙ্গল সাফারির ব্যাবস্থা আছে, মধ্যপ্রদেশের কানহার আদলে।
মাদারিহাট লেভেল ক্রসিং পার হলে রাস্তা গিয়েছে ডুয়ার্সের আর এক স্বর্গীয় লীলাভূমিতে। হান্টাপাড়া চা বাগান। হান্টাপাড়া চা বাগান থেকে হেলান দেওয়া কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য অপৃর্ব। তারপর তিতি নদী। তিতি নামের মতই সুন্দরি। শরতে তিতির পাড়ে কাশ ফুল ফুটে উঠলে মনে হয় এক স্বর্গের আগের স্টেশন। নদীর উপরে গভীর জঙ্গল। একটা জন মানবহীন টিলার মাথায় লঙ্কাপাড়া ফরেষ্ট রেষ্ট হাউস। দূরে তোর্সা নদী বহে যাওয়া ছাড়া আর কোন সভ্য জগতের লেশমাত্র নেই। হাতি হানার সম্ভাবনা এত প্রবল যে সন্ধ্যা লাগলেই কাঁটাতারের বেড়ায় ইলেক্ট্রিসিটি চালনা করা হয়। অরণ্যে হাঁটা নিষেধ। অজ্ঞাতবাসের এমন ঠিকানা পাওয়া কঠিন।
কী ভাবে যাওয়া যায় ঃ-
কলকাতা থেকে নিউ জলপাইগুড়ি। এখান থেকে জলদাপাড়া জঙ্গল ক্যাম্প। মাদারহাট, বীরপাড়া, হান্টাপাড়া ইত্যাদি জায়গা ঘুরে দেখা যায়।
থাকবার জায়গা.ঃ জঙ্গল ক্যাম্প, কটেছ, কেক সপ, সুভেনির সপ।
জিভে জল আনা সামগ্রী নিয়ে অবকাশ কেন্দ্র জগত বিখ্যাৎ।
0 মন্তব্যসমূহ