ঘাটশিলা এখন কেমন আছে, দেখে আসি চলুন ঃ--
একটি পর্যটনকেন্দ্র হওয়ার নিরিখে ঘাটশিলা এখন নিঃস্ব, রিক্ত। যত দিন গড়ায়, কোনও পর্যটনকেন্দ্রের পরিকাঠামো উন্নত হয়। আর সেখানে দিনকে দিন ঘাটশিলার পরিকাঠামোই ভেঙে পড়েছে। রাস্তাঘাট এতই ভাঙাচোরা যে গাড়ি চললে ধুলো থেকে হাঁচি-সর্দি-কাশি ঠেকানো মুশকিল। ঘাটশিলায় পর্যটনের প্রসারে উদ্যোগী ও ‘গৌরীকুঞ্জ উন্নয়ন সমিতি’-র সভাপতি তাপস চট্টোপাধ্যায় বলছেন, “ঘাটশিলার রাস্তা এখানকার পর্যটনের প্রসারে বড় বাধা।” জুন মাসে তাপসবাবুদের উদ্যোগে গৌরীকুঞ্জে বসেছে সৌরশক্তির আলো, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবক্ষ মূর্তি। তার আগেই আমূল সংস্কার হয়েছে ওই বাড়ির, বিভূতিভূষণ যেখানে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন। কিন্তু পর্যটকেরাই যদি ঘাটশিলামুখী না হন, তা হলে কে দেখবে আলো ঝলমলে গৌরীকুঞ্জকে?
অথচ ঘাটশিলার মতো ‘পশ্চিমে’ এক সময়ে বাঙালি ফি বছর যেত স্বাস্থ্য ফেরাতে। যেমনটা যেত জোসিডি-মধুপুরে-দেওঘরে। সপ্তাহখানেক ঘাটশিলায় থেকে সেখানকার জল খেয়ে পেটরোগা বাঙালি বছরের বাকি সময়ের জন্য হজমশক্তি সঞ্চয় করে আসত। ঘাটশিলার জল এখনও খারাপ নয়, কিন্তু রাস্তার ধুলোর জন্য বাতাস ময়লা হয়ে গিয়েছে। আর সেই ভঙ্গুর পথে চলার মূল যান বলতে গেলে অটোরিকশা। গোটা অটোরিকশাই ভাড়া নিতে হবে। ফলে, অবধারিত টান পড়বে পকেটে। অথচ একদা ঘাটশিলায় ট্রেকারের কোনও অভাব ছিল না। অল্প খরচেই যাওয়া যেত কাছাকাছি জায়গাগুলোয়।
ঘাটশিলায় যাওয়ার প্রবল ইচ্ছে জন্মেছিল ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়ের ‘পাণ্ডব গোয়েন্দা’-র অভিযান পড়ে। বয়স তখন দশও নয়। ওই বয়সের ছেলের বোঝার মতো করে ঘাটশিলার যে অপূর্ব ছবি লেখক এঁকেছিলেন, তা মনে গেঁথে গিয়েছিল। সুবর্ণরেখা নদী, ফুলডুংরি টিলা, কপার মাইনস, বুরুডি জলাধার, ধারাগিরির নিসর্গ বর্ণনা তো ছিলই, সঙ্গে ছিল জিভে জল আনা রসমালাই-ল্যাংচা-লেডিকেনির কথা।
শেষমেশ ঘাটশিলা ভ্রমণের সেই স্বপ্ন পূরণ হল । ঘাটশিলার তখন রমরমা। গ্রীষ্মকালে মরসুম না হওয়া সত্ত্বেও পর্যটকদের ভিড় হোটেলে হোটেলে। ঘাটশিলা মেইন রোডের যে দিকে রেল লাইন সমান্তরাল ভাবে গিয়েছে, তার অন্য দিকে সার দিয়ে ছিল হোটেলগুলো। জাপানি লজ, সাফারি, শালিমার, আনন্দিতা। রেল লাইনের অন্য দিকে, কলেজ রোডে ওয়েসিস। একটি আর একটির ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে। শুধু আনন্দিতা ছিল অন্য সবগুলোর চেয়ে একটু এগিয়ে। কলকাতার চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক চৈতন্য ঘোষ সপরিবারে একটা সময়ে ফি বছর ঘাটশিলায় গিয়ে উঠতেন আনন্দিতায়। হোটেল থেকে বেরিয়ে বড় রাস্তায় উঠতে না উঠতেই হাঁকডাক করত সাইকেল রিকশা, ট্রেকার, অটোরিকশা। অপরিচিত বাঙালি পর্যটককে দেখে ঘাটশিলার অবাঙালি মানুষ এমন ভাবে হাসতেন, যেন কত দিনের পরিচিত।
0 মন্তব্যসমূহ