বৈষ্ণোদেবী দর্শন এখন আর কষ্টসাধ্য নয় ঃ
টার্মিনাল থেকে জম্বু তাওয়াই ট্রেনে তিনদিন পর জম্বুতে পৌঁছান যায়।
স্টেশানের আশেপাশে একটু সময় নিয়ে টোটো ভাড়া করে ঘুরা যাবে ১) চাওয়াই নদীর পাড়ের বাহুদূর্গ ২) রামনগর দূর্গ ৩) অমর মহল প্রাসাদ ৪) 'বাগ হি বাহু'। জম্বু স্টশান থেকে এইসব জায়গা গুলির দূরত্ব ৪/৫ কিলোমিটার।
কথিত আছে বীর হনুমান অর্থাৎ জাম্বুমানের নাম অনুসারে এই নগরীর নামকরণ।
জম্বু শহর থেকে বাস ৪৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বৈষ্ণোদেবীর মন্দির। বাস নিয়ে যাবে কাটরাতে। এখানে বেষ্ণোদেবীর মন্দিরের পাশ কাটতে হয়। এখান থেকে উধমপুর ৫০ কিলোমিটার। শ্রীনগর ২০০ কিলোমিটার। ১৭৫ কিলোমিটার পহেলগাঁও। কাটরা শহরটা খুবই জমজমাট, হোটেল,ধর্মশালা, বাজার সবসময়ই গমগম করছে। কাটরায় দিন রাত বলে কিছু নেই, কেননা সব সময় মন্দিরে সমাগম। দর্শনার্থীদের ভীড়ের দিক থেকে তীরুপতির পরেই বৈষ্ণোদেবীর দর্শনার্থীদের ভীড়।
মন্দিরে হেঁটেই চলেন তবে ডুলির ব্যবস্থা আছে। বর্তমানে হেলিক্যপ্টারের ব্যবস্থা হয়েছে। প্রকৃতির আঁচলে ডাকা পাহাড়ের সারি আর অসম্ভব রকমের সবুজ।
কাটরা শহরে শ্রী ধর নামে এক ধার্মিক মানুষ ছিলেন। নিজের পুত্র সন্তান না থাকায় দেবী দূর্গার আরাধনার সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চা ছেলে মেয়েদের দেবী জ্ঞানে পূজো করতেন। একদিন ছদ্মবেশে বালিকারূপি দেবী এই ব্রাহ্মণকে দেখা দিয়ে গ্রামের ভান্ডারায় সবাইকে নিমন্ত্রণ করতে অনুরোধ করেন। সেই নিমন্ত্রণে অসংখ্য শিষ্য সহ ভৈরবনাথ আসেন। নিমন্ত্রণের আসরে ভৈরবনাথের সাথে কন্যারূপী মাতার তীব্র বাদানুবাদ হয়। ক্রুদ্ধ ভৈরবনাথ দেবীকে আক্রমণ করেন। এই সময় দেবী আপন মহিমায় অর্ন্তহিত হয়ে বায়ূবেগে চললেনস ত্রিকূট পাহাড়ে। এই পথই দেবী বৈষ্ণোদেবীর মন্দিরের যাত্রা পথ।
দর্শনীদওয়াজ, চরণপাদুকা, আধিকুঁয়ারি পেরিয়ে দেবী এক গুহায় আশ্রয় নেয়। ভৈরবনাথ দেবীকে অনুসরণ করে সেই গুহার সামনে হাজির হন। সেখানেই দেবী স্বমূর্তি ধারন করে খড়্গের আঘাতে শিরচ্ছেদ করে। তারা মুন্ডু ছিটকে পড়লো পাহাড়ের মাথায়। বৈষ্ণোদেবীর গুহা থেকে ২ কিলোমিটার দূরে। এই জায়গাটির নাম ভৈরবঘাটি নামে প্রসিদ্ধ। সেখানও একটি মন্দির আছে। পূর্ণাথিরা অনেক কষ্ট করে এই মন্দির দর্শন করেন।
২৮০০ ফুট উঁচুতে কাটরা থেকে চড়াই উৎরাই পথ উঠে গেছে ৬৫০০ ফুট উঁচু বৈষ্ণোদেবীর মন্দির। দেবীকে পূজো দিতে সারা ভারতের লোক যেন এক সাথে পথে নেমেছে। মুখে একটাই ধ্বনি - জয়মাতাদি। ১৪ কিলোমিটার পথের সৌন্দর্য্য অপরিসীম।
সারা দিনরাত, সপ্তাহ, মাস, বছরে ঘড়ির কাঁটার মত চলে এই দেবভূমের যাত্রা। এ যেন অনন্ত যাত্রা, জনশ্রোতের শেষ নাই। রাতের অন্ধকারে বিন্দু বিন্দু আলোর ঝলমালানি। গুহার সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে পাহাড়ের কোলে দৈত্যাকৃতি কালোপাহাড়ের দেওয়াল চারিদিকে। তারই মাঝে শ্বেতশুভ্র মাতমূর্তি। -অষ্টভূজা, সিংহবাহিনী সালঙ্কার। যথার্থ নাম - মাতারাণী, রাণী বেশে মা। চরিদিকে আলোর বন্যা। স্মিতহাস্য দেবীরূপ। প্রকৃতির এক বিস্ময়কর সৃষ্টি।
ফিরতেও একই সময় লাগে। শেষমেশ আবার ফিরতে হবে কাটরায়।
১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত অনন্তনাগ জেলায় ঘুরতে। উধমপুর হয়ে বানিহাল। অন্যতম শ্রেষ্ঠ গিরিপথ। ব্যবসা - বানজ্য, যুদ্ধ অভিবাসন, সামরিক সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই গিরিপথের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
বানিহালে ১৯৫৬ সালে তৈরী হওয়া জাতীয় সড়ক NH 44 আধুনিক প্রযুক্তির বিস্মকর দৃষ্টান্ত। সামরিক অসামরিক যোগাযোগ ব্যবস্থার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে অনন্তনাগ ও ডোডো জেলার এই গিরিপথ। এই পথ জওহর ট্যানেল নামে পরিচিত। ভারতের দীর্ঘ ও এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহতম সুড়ঙ্গ পথ। ২০১৩ সালে আর একটি সুড়ঙ্গ পথ তৈরী হয়েছে। শ্রীনগর থেকে দূরত্ব কমেছে প্রায় ৪০ কিলোমিটার। সুড়ঙ্গ পথ তৈরী করতে সময় লেগেছে তিন বছর। এই সুড়ঙ্গ পথ ২৪ ঘন্টা CRPF - এর নজরদারি রয়েছে। ÇÇTV দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে ঘেরা।
তীর্থভূমি, হিমালয়ের পথে, গভীর অরণ্যে জীবনের উত্তর খুঁজে চলেছে মানুষ।
ফেরার ট্রেন হিমগিরী এক্সপ্রেস।
কি ভাবে যাবেন ঃ কলকাতা স্টেশান থেকে জম্বু তাওয়াই এক্সপ্রেস। জম্বু থেকে কাটারা বাস ও ট্রেকার পাওয়া যাবে।
0 মন্তব্যসমূহ