Header Ads Widget

Responsive Advertisement

ফেলুদার গল্পের রাজারাপ্পা ভ্রমণের সম্পূর্ণ গাইড জেনে নিন

raj rappa

"প্রকৃতির একটা সুর আছে 

অনেকেই তা শুনতে পায়।"
                -উইলিয়াম সেক্সপিয়ার।

প্রকৃতি বৈচিত্র্যময়। তার রূপ না না রকমের। কোথাও সে মনমোহিনী অপরূপা, আবার কোথাও রুক্ষ কঠিন অনুর্বরা। বিশ্ব প্রকৃতির মাঝে মানুষ খুঁজে পায় তার অরূপরতনকে। যে অরূপরতনের খোঁজ সে কোনদিনই পায় না। তাই আজও মানুষের পথ চলার বিরাম নেই । 
ঝাড়খন্ড রাজ‍্যেকে অরণ‍্য সুন্দরী বললে কম বলা হবে। কী নেই এই রাজ‍্যে। সরস সবুজ বনাঞ্চল, পাহাড়, নদী, ঝরণা সবকিছুর মেল বন্ধনে গড়ে ওঠা প্রকৃতির এই অনন‍্য রাজ‍্যে সব পাওয়া যাবে। 
ঝাড়খন্ড রাজ‍্যের রাজধানী রাঁচি থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে দুটি নদির সঙ্গম স্থলে অবস্থিত রাজারাপ্পার "ছিন্নমস্তা" মন্দির, এক সিদ্ধ পীঠ। এই মন্দিরে পৌঁছাতে গেলে নদী সঙ্গমের হাঁটু জল অতিক্রম করে যেতে হয়। 
এই মন্দিরকে ঘিরে অনেক লোকগাঁথা প্রচলিত। এখানে দেবী মহামায়া ছিন্নমস্তা হিসাবে পূজিত হয়। যাঁরা প্রকৃতিপ্রমী তাঁরা দুই নদীর সঙ্গম আর পাহাড়-ঝর্ণার যুগোল বন্দিতে গড়ে ওঠা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য‍্যে অবগাহন করছেন।
মা ছিন্নমস্তা হিন্দু দেবী, যিনি ছিন্নমস্তিকা বা প্রচন্ডিকা নামেও পরিচিত। তবে এই দেবীর পূজা খুবই কম হয়ে থাকে। 
৫১ পীঠের অন‍্যতম পীঠ মা ছিন্নমস্তার মন্দির। 
রাজারাপ্পার ছিন্নমস্তার মন্দিরের গঠন শৈলী খুবই সুন্দর। তান্ত্রিক রীতিতে তৈরি। উন্মত্ত জননী নিজের রক্ত পান করছে।
যে শীলাখন্ডের উপর ছিন্নমস্তার মন্দির প্রতিষ্ঠিত, কথিত আছে রামগড়ের সামন্ত রাজকন‍্যা রম্ভাবাঈ সেখানে তাঁর শেষ ছোঁয়া রেখেছিলেন। 
রামগড় ছিল পুরো জঙ্গলে ভরা ও হিংস্র বন‍্য জন্তুর বিচরণ ভূমি। রামগড়ের সামন্ত বসুরার মেয়ে রম্ভাবাঈয়ের রূপের খ‍্যাতি চারিদিক ছড়িয়ে পড়েছে। লোহারদাগার ডাকাত সর্দার অর্জুন সিং রামনবমীর দিন রামজীর মন্দিরে আরাধনারত রম্ভাবাঈকে মুগ্ধ হন। রম্ভাবাঈয়ের পাণি গ্রহন করতে চেয়ে অর্জুন দশরথ বাসোরাকে প্রস্তাব পাঠান। দশরথ প্রস্তাব প্রত‍্যাখান করায় অর্জুনের চক্রান্তে দশরথ ছুরিকাঘাতে খুন হন। অর্জুন রম্ভাবাঈকে চুরি করে রামগড় ছেড়ে নিজের এলাকায় গার্ন্ধব‍্য মতে বিয়ে করেন। অর্জুন রম্ভাবাঈয়ের নারিত্ব লুঠ করে কাম প্রব‍ৃত্তি মেটান। রম্ভাবাঈয়ের বন্ধুর ছেলে মোহনলাল অর্জুনের হাত থেকে উদ্ধার করে রামগড়ে ফেরত নিয়ে আসে। মোহনলাল ছিলেন আমত‍্যদের মধ‍্যে অন‍্যতম। তিনি রম্ভাবাঈয়ের বন্ধু ছিলেন। রম্ভাকে তিনি খুব ভালোবাসতেন এবং তাকে বিয়ে করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন। রম্ভার রাজ প্রসাদে ঠাঁই হলো না। দস্যু তার দেহ কুলষিত করায় রাজ পরিবারে কেউ আশ্রয় দিলো না। ফলে রামগড়ের সিমান্ত পর্ণকুটিরে রম্ভাকে রাখা হলো। মোহনলাল উদারচেতা হলেও রম্ভাবাঈ তাঁর কুলষিত দেহ মোহনলালকে দিতে রাজি হলেন না। তাই রম্ভা পালিয়ে এলেন আজকের রাজারাপ্পায়। এখানে রম্ভা হারিয়ে যায়। বন‍্য জন্তু জানোয়ার তার দেহটাকে ছিঁড়ে খায়। 
উইলিয়াম সেক্সপিয়ার বলেছেন -প্রকৃতির সুর যারা শুনতে পান, তাঁরা বারেবার ছুটে আসেন এই রূপময় রাজ‍্যে। শুধুমাত্র বৈচিত্রের টানে। 
দামোদরে নৌকা বিহার করা যায়। নদী তীরে চড়ুইভাতি হামেশায় হয়ে থাকে। সন্ধ‍্যায় সূর্যাস্ত উপভোগ‍্য। আর রাজারাপ্পা রাত্রির চাদরে ঢেকে যায়। 
ছিন্নমস্তার দর্শনে যারা আসেন তাঁরা অনেকেই ওঠেন হাজারিবাগ অথবা রাচিঁর কোন হোটেলে। কাছে পীঠে দু একটা জায়গা দেখে নিতে পারেন। ৭২ কিলোমিটার দূরে বারকাঠিয়া উষ্ণ প্রস্রবন। ৫৫ কিলোমিটার দূরে সুন্দরী তিলাইয়ার বাঁধ। ৫১ কিলোমিটার দূরে আছে কোনার বাঁধ।
হাজারিবাগ থেকে রাচিঁর কাছাকাছি এই সব জায়গাগুলি। আছে আদিবাসী অধ‍্যষিত আরণ‍্যক পরিবেশে COCODIE FARM.

কী ভাবে যাবেন ঃ-- প্রথমে রাঁচি বা হাজারীবাগ আসতে হবে ট্রেনে বা নিজস্ব গাড়িতে। এখান থেকে বাসে রামগড় এবং রাজারাপ্পায় পৌঁছান যাবে। বাস অনিয়মিত ও কষ্টকর। রাঁচি থেকে প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে নেওয়া ভালো। হাজারীবাগ থেকে ৭৫ কিলোমিটার দূরে রাজারাপ্পা। মাঝপথে রামগড় পড়বে। ৩২ কিলোমিটার দূরে। রাঁচি, হাজারীবাগ, রামগড়ে হোটেল লজ রয়েছে।
বর্ষকাল বাদ দিলে যে কোন সময়ই রাজারাপ্পায় ঘুরতে যাওয়া যায় । 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ