জলপ্রপাতের দেশ চিত্রকূট তীরথগড় চলুনঃ--
বর্ষায় বেড়াতে দুবার ভাবতে হয়। কিন্তু জলপ্রপাত দেখতে হলে বর্ষাকালটাকে বেছে নেওয়ায় ভালো। ছত্তিশগড়ের জগদলপুর শহরের কাছে চিত্রকূট ভারতের প্রশস্ত জলপ্রপাত। তেলেঙ্গানা রাজ্যের বিশপত্তনম থেকে আরাকু উপত্যাকা, উড়িষার কোরাপুট শৈল শহর পেরিয়ে ছত্তিশগড় রাজ্যের জগদলপুরে রয়েছে ভারতের সর্বোচ্চ ব্রডগেজ রেলপথ। কিরুনডুলা প্যাসেঞ্জার প্রতিদিনই ভাইজাক বাইলাডোলা কয়লাক্ষেত্রে যাতায়াত করছে। সকাল সোয়া ৬ টায় ভাইজাক থেকে ছেড়ে বিকাল ৪ টায় জগদলপুর পৌঁছে দেয়। প্রচুর সুড়ঙ্গ পথ আর সুদীর্ঘ থামের উপর বসানো নয়নাভিরাম সেতূ। রেশপথ তৈরীর ক্ষেত্রেও কম বিস্ময়কর নয়।
জগদলপুর ছোট্ট স্টেশন, শান্ত নিরিবিলি। স্টেশনের বাইরে অটো বা প্রাইভেট ট্যক্সি। চিত্রকূট ও তিরথগড় জলপ্রপাত দেখতে যাওয়া যায়। দুটি জলপ্রপাত শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে।
ইংরাজী Y এর মত রাস্তা দু ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। বাদিকের পথ বান্দায়োন আর মাও অধ্যসিত কিছু রক্তাক্ত জায়গা। এখনো পুলিশি টহল রেয়েছে। বা দিকে কাঙ্গার ভ্যালি রিজার্ভ ফরেস্ট। সামনে সমতল প্রান্তর। কিছুটা এগিয়ে কমবেশী ৩০০ ফুট নীচে গড়িয়ে পড়ছে ঝাঁপিয়ে। এই হচ্ছে তিরথগড় জলপ্রপাত। জলপ্রপাতের পাশ দিয়ে পাদদেশে পর্যন্ত রয়েছে সিঁড়ি। উৎসাহিরা অবশ্যই এখানে নেমে পড়বেন। নীচ থেকেও সে এক অসাধরণ দৃশ্য।
তীরথগড় থেকে মাত্র ৪০ মিনিট পর জগদলপুরের পশ্চিম প্রান্ত ইরাবতীর কূলে। সামনে জলপ্রপাত দেখে কিছুক্ষণ মুগ্ধতায় কাটবে। প্রায় ১ কিলোমিটার চওড়া ইরাবতী নদী এখানে ঝপাং করে প্রায় ২০০ ফুট নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ছে অনর্গল। নদীর জল গেরুয়া। এমন চওড়া প্রপাত ভারতে আর দ্বিতীয় নেই। জলকণা বাতাসে উড়ছে, মেঘ রোদ্দুর এসে পড়লেই শুরু হবে রামধণুর খেলা।
আরকু স্টেশনে। ১৯০ কিলোমিটার দূরত্ব সময় লাগে সাড়ে ৪ ঘন্টা। পথে আরো শৈল শহর পড়ে উড়িষার কোরাপুট শহর। পাহাড়ের উপর জগন্নথ মন্দির ও কাছেই নদীবাঁধ।
ট্রেন ধরে ঘন্টা খানেকের মধ্যে পৌঁছনো যাবে আরাকু নদীর পাশে সবুজে ভরা উপত্যকায়। গড় উচ্চতা ৩০০০ ফুট। এখানে সারা বছরই পরিবেশ অত্যন্ত মনোরম।
এই অঞ্চলের উপজাতিদের জীবনধারা, প্রাত্যিহিক জীবন ধারার ছবি মডেল করে সাজিয়ে রাখা আছে।
আরাকু থেকে সরাসরি ভাইজাক আর পথে গুহালু দেখে নেওয়া যায়। দূলত্ব মাত্র ৩৮ কিলোমিটার। এখানে রেল স্টেশন বিদ্যমান।
বড়া গুহালুর ঢোকার পথে টিকিট ঘর তার পাশে নিরাপত্তা বেষ্টনি রয়েছে। ক্যামেরার জন্য আলাদা দর্শণী লাগে। চমৎকার রেলিং দেওয়া সিঁড়ি পথ দেড় পাক খেয়ে নেমে গেছে সুউচ্চ পূবমুখি গুহার ভিতর। বাইরে জায়গায় জায়গায় জোরালো আলোর ব্যবস্থা আছে। গুহার ভিতর থেকে চুঁইয়ে পড়া জলাধার পোস্তানী নাম নিয়ে নেমে গেছে ঘণ জঙ্গলের দিকে। চুনা পাথরে গড়া দেওয়াল। কয়েক লক্ষ বছর ধরে জল ও আবহাওয়ার নিরন্তর পরশে স্ট্যালাকমাইট ও স্ট্যালাকটাইট পাথরের নানা বদল ঘটেছে। পাথর ক্ষয়ে গিয়ে কখনও শিব পর্বতি, মা ও সন্তান, বাঘ কুমির কিংবা মানুষের মগজের মতো কিম্ভূত আকার নিয়ে গুহার ছাঁদ থেকে নেমে এসেছে বা দেওয়াল ফুটে বেরিয়েছে।
সমতল থেকে প্রায় ১৪০০ ফুট উচ্চতায় প্রকৃতির এক অপরূপ সৃষ্টি।
বড়া গুহালু থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে বিশাখাপত্তনামের বাকি পথ টুকু ক্রমশঃ নেমে এসেছে সমতলে। পাহাড়ি উচ্চতার মনোরম আবহাওয়া মিলিয়ে যায় এক সময়। আবাল উচ্চতায় ফিরে আসতে আসতে আরাকু উপত্যাকার জন্য খুবই মন খারাপ করে।
কী ভাবে যাবন ঃ- জেনে রাখা ভালো কলকাতা থেকে চেনাই বা বেঙ্গালুরু বা হায়দ্রাবাদ গামী প্রচুর ট্রেন পাওয়া যায়। ভাইজাক শহরে বিভিন্ন মানের হোটেল রয়েছে। প্রতিদিন ভোরে ৬-৫০ টার সময় কিরণডুল প্যাসেঞ্জার ছাড়ে। এছাড়া গাড়ি ভাড়া করে সরাসরি জগদলপুর পৌঁছান যায়। পরদিন দেখার জন্য রইল উড়িষ্যার শৈল শহর কোরাপুট, আরাচো ভ্যালি, বড়া গুহালু দেখে ভাইজ্যাক ফিরে আসলে ভালো। জলপ্রপাতের বাড়বাড়ন্ত বর্ষাকালে।
0 মন্তব্যসমূহ