ভুলে যাওয়া স্বাধীনতা সংগ্রামী - বসন্ত বিশ্বাসের বাড়ি আর সোনারুন্দি মিরমদনের সমাধি দেখে আসি
শহীদ বসন্ত বিশ্বাসের গ্রাম পোড়াগাছা এখন শুধু ইতিহাস। বাড়ীটার জীর্ণ চেহারা দেখলে খুব খারাপ লাগে। কোন রক্ষণাবেক্ষণ হয় না।
বসন্ত বিশ্বাস ইংরেজ দুর্ধর্ষ ব্রিটিশের বিরুদ্ধে বোমা বর্ষণ করেন। ১৯১৪ সালে বাবার অন্তষ্টি ক্রিয়ায় সময় পুলিশ তাকে গ্রফতার করে। আম্বলা জেলে তারা বিচার জাবতজীবন কারাবাস হয়। তখন ওর বয়স ১৯ বছর। তাই ব্রিটিশ প্রশাসন বয়স বাড়িয়ে ২০ বছর করে যথেষ্ট কারচুপি করে। তারপর বসন্তের ফাঁসি হয় ১৯১৫ সালের ১১ ই মে। ভারতবাসী এখনো এই কারচুপির হদিশ করেনি কেউ। ও ভাবেই পড়ে আছে বিপ্লবীর অর্ধ সত্য ইতিহাস।
বসন্তের ফটো পাওয়া যাইনি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর পাওয়া যায় বসন্তের ফটো। এখন পোড়াগার ঝাউতলায় দেখা যাবে বসন্ত বিশ্বাসের মর্মর মূর্তি। প্রতি বছরের ১১ ই মে মাল্যদান হয় আর শীতকাল তিন দিন ধরে বসন্ত মেলা হয়। স্বাধিনতা সংগ্রামীরা আসেন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ৫-৭ ই ফেব্রুয়ারী, স্থানীয় মানুষারই উদ্যোক্তা।
বসন্তর জরাজির্ন বাড়ি ঘুরা যায়। বসন্ত বিশ্বাসের থাকবার ঘর, পড়ার ডেক্স।
এবার একটু এগিয়ে গেলে একটি নিরিবিল বিল দেখা যাবে। বিলটার দৈর্ঘ তিন কিলোমিটার। দুটি পানসি আছে। কথা বলে জল বিহার করা যায়। ইচ্ছে হলে তাজা মাছ পাওয়া যায়। খেপলা মেরে ধরে দেবে।
কৃষ্ণনগর থেকে অটৌ বা টোটৌয় ১২ কিলোমিটার গেলেয় ঝাউতলা বাজার। এখান থেকে শহীদ বিপ্লবী বসন্ত বিশ্বাসের বাড়ি।
ইতিহাসের তালাশে সোনারুন্দি
একটাই উপায়, পালাতে হবে। পালানোতেই সাময়িক স্বস্তি। টাকা নিয়ে একঘেয়ে কচকচানি আর একই নেতাদের নাগাড়ে মুণ্ডপাত করতে করতে রণক্লান্ত।
গন্তব্য বর্ধমানের কেতুগ্রাম। বেলডাঙা থেকে মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়ে সোনারুদ্দি পড়ালো সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ। সঙ্গে অনুগত ছাত্র ওয়াসিম। দেখব, নবাব সিরাজের সহ-সেনাপতি মীরমদনের সমাধি, নবাবি ফৌজের হাতিশালা দাদপুর ও পিলখানা অঞ্চল, বাবলা নদী, অট্রহাস এবং অবশ্যই সোনারুন্দি রাজবাড়ি। সফরের মূল আকর্ষণ সেটাই।
ভাগিরথী পেরোলাম নারকেলবাড়ি ঘাটে। এ ঘাটেই একবার পারাপারের সময় যাত্রীভর্তি একটি টাটা সুমো তলিয়ে গিয়েছিল। গিয়েছিল আটটি প্রাণ।
নদী পারাপারের আগে দেখে নিয়েছিলাম মীরমদনের কবর। পলাশীর যুদ্ধে প্রধান সেনাপতি মীরজাফর লড়াই করতে অস্বীকৃত হলে, মীরমদন তাঁর নিয়ন্ত্রিত বাহিনী নিয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। আহত, ক্ষতবিক্ষত সেই অনুগত বীর যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফেরার পথে, এখানেই মারা যান। মৃত্যু হয় তাঁর ঘোড়াটিরও।
মধ্যবাংলার মাঠেঘাটে সবুজের অভাব নেই। সঙ্গে মিঠে সোনারোদ আর আপাত ঠান্ডা বাতাস। মোটরবাইকে মিল্কি, ঘোল্লা পেরিয়ে বাবলা নদীর দিকে যেতে যেতে দেখলাম প্রত্যন্ত গ্রামের রাস্তার ধারেও ডিজিটাল ইন্ডিয়া হাজির। মোটা কেবল পোঁতার কাজ চলছে। বাবলা নদীর তীরে বাবলা গ্রাম। এই গ্রামেরই আবুল বরকত বাংলাদেশের মাতৃভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ। সে সময় তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
সালার থেকে পাঁচুন্দির পথে মসৃণ রাস্তার পাশেই একটি খেঁজুর গুড়ের আখড়া চোখে পড়ল। গুড়ের কারখানা। টাটকা, খাঁটি, সুস্বাদু গুড় মাত্র ৭৫ টাকা কিলো। ছোট বাজারটাকে ছাড়িয়ে ভাঙা দরজার মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করলাম বনয়ারিবাদ বা সোনারুন্দি রাজবাড়ি চত্বরে। এ হল বর্ধমানের রাজাদের বাড়ি। দেখেই বোঝা যায়, ভগ্নপ্রায় প্রাসাদটি পড়ে রয়েছে অযত্নে। অবহেলায় পড়ে দু’টি কামানও। কেন যে সংরক্ষণ করা হয় না? মনটা ভারী হয়ে ওঠে এমন অসংখ্য প্রশ্নে। বাড়ি সংরক্ষণ করা সম্ভব না হলেও, কামান দু’টিকে অন্তত কোনও মিউজিয়ামে রাখাই যেত। দিনের পর দিন ওখানে ও ভাবেই পড়ে রয়েছে।
বছর চারেক আগেও শুনেছিলাম, এখনও শুনলাম ছোট রাণীমা নাকি এখানেই বাস করেন। সেবারও তাঁর হদিস পাইনি, এ বারও পেলাম না।
রাজবাড়ি সংলগ্ন দীঘিটির মাছগুলি দিব্যি আছে। এক সময় নাকি এখানে সোনার নথ পড়া মাছের দেখা মিলত। এখানে এ মাছ নাকি কেউ ছাড়েনি, কেউ ধরেও না। লোকমুখে নানা গল্প শোনা যায়।
0 মন্তব্যসমূহ