Header Ads Widget

Responsive Advertisement

পুজোর ছুটি কাটাতে চলুন লাটাপাঞ্চার - মনকাড়া প্রকৃতি , পাখি আর পাহাড় - জেনে নিন বিস্তারিত

 পুজোয় পাখি দেখতে লাটাপাঞ্চার চলুন ঃ





৪২০০ ফুট উঁচু দার্জিলিংএর পাহাড় ঘেরা গ্রাম লাটাপঞ্চার। লেপচা ঊপজাতি জনজাতি অধিবাসীদের গ্রাম। লাটা শব্দের বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায় 'বেত' আর নেপালি শব্দ হচ্ছে 'পাঞ্চার' আর বাংলয় 'বন' অর্থাৎ বেতের বন। এর চারিদিকে নানান প্রজাতির পাখির আবাস। বাতাসের ফিসফিসানির সাথে লেপটে আছে অচেনা পাখির ফিসফিসানি। লাটা পাঞ্চার হচ্ছে পক্ষী প্রেমীদের স্বর্গরাজ‍্য। পাখি দেখার যাদের নেশা বা পাখির ছবি তুলতে যাদের খূব ইচ্ছে তারা পাড়ি জমায় এই লাটাপাঞ্চরে। পর্যটকরা A Bird watcher's Paradise বিশেষণে ভূষিত করেছেন।
৩১ নং জাতীয় সড়ক শালুগোড়া, সেবক, বাঘপুল, লোয়ার তিস্তা ড‍্যাম পেরিয়ে জাতীয় সড়কের সঙ্গ ছেড়ে কালিঝোরা থেকে বায়ে বাঁক নিয়ে ১৩ কিলোমিটার  দূরে লাটাপাঞ্চার। পাইন ও শালে ছাওয়া নির্জন পথশোভা। পাহাড়ের চড়াই কিছুটা ভাঙতেই নীচে পাখির নজরে কালিঝোরা ও তিস্তার চাপল‍্য। করমাট ছ'মাইল বাদে করমট নামের একফালি জনপদ। মাঝপথে চোখে পড়বে দু চারটে ঝরণা। রদ্দুরের ওম নিয়ে দৃশ‍্যমান নবরঙ্গখোলা, জোরসোরখোলা। পাহাড়ের এইসব অন্তরঙ্গতার পাক খেতে খেতে পথ উঠে গেছে লাটাপাঞ্চারের দিকে। দ'পাশে একবগ্গা শাল, ধুপি, পাইন গাছ আকাশ ছোঁয়ার অপেক্ষায়। কোন অঙ্কিকার না রেখেই ঋজু হয়ে আছে চির হরিৎ অরণ‍্য। দূর পাহাড়ের নজর ছড়িয়ে দিতে দেখা যাবে ছোট ছোট পাহাড়ের গায়ে কাঠের ঘরবাড়ি নিয়ে পাইনে ছাওয়া এক নিরিবিলি জনপদ। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে এই লাটাপাঞ্চার। পাহাড়ের ঢাল দিয়ে লাটাপাঞ্চারে পৌঁছান যায়। এই গ্রামে রয়েছে দূর্গা মন্দির আর গির্জা ও বৌদ্ধ মনেষ্ট্রি। 



ব্রিটিশরা যখন এখানে সিঙ্কনা চাষের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে, তখন অনেক খ্রিষ্টান শ্রমিকও কাজে যোগ দেন। তাই সেই সময়কাল থেকে এখানে লেপচা, বৌদ্ধ, হিন্দু, খ্রিষ্ট ধর্মের সমন্ময় গড়ে ওঠে। এখন ১৪০০ একর জমিতে সিঙ্কনার চাষ হয়। সিঙ্কনা গাছের ছাল থেকে ম‍্যালিরিয়া রোগের প্রতিশেধক ক‍্যুইনাইন  তৈরি হয়। 
অরণ‍্যের স্থানিক নিস্তব্ধতাকে খানখান করে প্রায় পাখিদের আসর বসে লাটাপাঞ্চারে। এখানে বিশেষ ধরনের ধনেশ পাখির দেখা মেলে। প্রায় সাড়ে তিন ফুট লম্বা এই পাখি। বিশাল বড়সড় বিপন্ন প্রজাতির পাখি ধনেশ, ইংরেজিতে 'রুফার্স - নেকড হর্ণবিল '। উত্তর - পূর্ব ভারতে এদের দেখা মেলে। এছাড়া অর্ধেক জানা ও শোনা পাখিদের রোচনামচা। রুফাস সিঁথিয়া,  টিটি, লং-টেইলড ব্রডবিল অলিভ সানবোর্ড,ডুঙ্গো, ব্লু পাহাড়ি বুলবল, গ্রেক‍্যাপ পিগমি কাঠঠোকরা, গ্রে টিপাই, লেসার ইয়োলো নেপ, ব্লাক রাজা, ওরিয়ান্টাল টারলেট ডাভ, বার্ন সোয়ালো, পাহাড়ে তিতির, ফ‍্যালকান ঈগল লেসার শর্ট উইং, হিমালয়ান ত্রাস,  ফ্লাই ক‍্যাচার, স্কারলেট মিনিভেট, ওরিওল, স্ক‍্যালি থ্রাস, গ্রেট বারবেট, সুলতান টিট, ব্লু থ্রোটেড, ষ্ট‍্যালিং প্রভৃতি পাহাড়ি ও যাযাবর পাখির আতুড়ঘর হচ্ছে লাটাপাঞ্চার। লাটাপাঞ্চারের বিখ‍্যাৎ হর্নবিল বা ধনেশ পাখি দেখতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা আসেন। তুখোড় লেন্স জুম সহ ফটোগ্রাফারও এখানে পাড়ি জমায়। 
মহানন্দার অভয়ারণ‍্যের শীর্ষে এই লাটাপাঞ্চার। এখানে ৩৬ প্রজাতির পশু, হগ ডিয়ার, কৃষ্ণসার, রেডপন্ডা,  হিমালয়ান ব্লাক ডিয়ার, চিতা, সজারু, দৈতকায় কাঠবিড়ালি, লেঙ্গুর, বুন হাতি, হনুমান প্রভৃতি। 
গাছ দেখা যাবে চিকরাসী, শাল- সেগুন - পাইন - লূসনি - লামপাতে - কাটুস - ধুপি - চিলাওনি প্রভৃতি।
লাটাপাঞ্চার থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে জঙ্গলপথ উচিয়ে প্রকৃতি প্রমীদের কাছে মনোরম একটি জায়গা লাটকোঠি।
লাটকাঠিতে দেখা মেলে অসংখ‍্য চেনা অচেনা পাখপাখালির। লাটকোঠির অনতি দূরে 'কুহি' নামের এক বনাঞ্চল রয়েছে। আছে দেখের জায়গা  গুলমা। নেপালিদের কাছে গুলমা অত‍্যন্ত পবিত্র স্থান। এখান থেকে বেশ খানিকটা দূরে চড়াই টপকে পাহাড়ে নীচে মগ্নতা নিয়ে আছে ' সরসরি দারা' নামে এক ভিউ পয়েন্ট।

কী ভাবে যাবেনঃ- নিউ জলপাইগুড়ি থেকে লাটাপাঞ্চারের দূরত্ব ৪৫ কিলোমিটার।  ঘন্টা দুয়েকের পথ। সরাসরি গাড়ি ভাড়া করে চলে আসা যাবে। শেয়ার জিপেও আসা যাবে।
 
থাকা খাওয়া.ঃ এখানে হোমস্টেই ভরসা, তাদের ব‍্যবস্থাপনায় খাওয়া দাওয়া।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ