Header Ads Widget

Responsive Advertisement

শান্তিনিকেতন থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে বল্লভপুর অভয়ারণ‍্য ঘুরে আসি চলুন

 বল্লভপুর অভয়ারণ‍্যে বেড়িতে চলুন ঃ 


বল্লভপুর কোথা জায়গাটি কোথায়? এরকম প্রশ্ন যদি কোন পর্যটকদের করা যায় তবে তার উত্তর পাওয়া কঠিন। শান্তিনিকেতন থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে একটি গ্রাম আছে। নাম বল্লভপুর। অনেকেই এর খবর রাখেন না। এই বল্লভপুরে ৭০০ একর জমিতে গড়ে উঠেছে বল্লভপুর অভয়ারণ‍্য। বন বিভাগের তৎপরতায় এই অভয়ারণ‍্যে প্রচুর হরিণ দেখতে পাওয়া যাবে।
১৯১৭ সালে কথা। দীনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটা পোষ‍্য হরিণ ছিল। শান্তিনিকতনে ছেড়ে দিলে হরিণটি দ্রুত পালিয়ে যায়। গ্রামবাসী তাকে বন‍্য বলে হত‍্যা করে। দীনেন্দ্রনাথ ও তার পত্নি কমলাদেবী হরিণটির শোকে-দুঃখে বিহ্বল হয়ে পড়ে। সেদিনের সেই শোকস্তব্ধ সময়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গান লেখেন " সে কোন বনের হরিণ ছিল আমার মনে " 
এই গানটি রচনার ৫০ বছর পরে এই বল্লভপুরে বন বিভাগ থেকে একটি অভয়ারণ‍্য গড়ে  তোলার উদ‍্যোগ নেওয়া হয়। হয়ত গানটির প্রথম দিকের কথায় বা শেষের দিকের কথায় বন বিভাগের কর্মকর্তারা প্রেরণা পেয়ে ছিলো। ষাটের দশকে এই জায়গাটি বা অঞ্চলটি ছিলো খোয়ায় অঞ্চল। উঁচু নিচু লাল রুক্ষ মাটির পর ছিল সবুজের সমারোহ। 
এখানকার মাটিতে উপযুক্ত গাছপালা শুরু হয়। শাল, পিয়াল, হরতকি, আমলকি, শিশু, কাজু, শিরিষ, জাম, মেহগনি, আকাশমণি, মহূয়া ও সোনাঝুরির মত অসংখ‍্য গাছ। আতনের দিক থেকে বল্লভপুর হয়ত বিশালাকার নয়, কিন্তু অন‍্যান‍্য অভয়ারণ‍্যের মত নয়, কিন্তু সল্প পরিসরে এই অভায়ারণ‍্য হলেও সফলতা নিয়ে অভয়ারণ‍্যের দাবি করা যেতে পারে। কারণ, বন সৃজনের সফলতা এবং বন‍্য প্রাণী সংরক্ষণ অনেকাংশে সফলতা এনে দিয়েছে।
মৃগ উদ‍্যান তখন মৃগ অর্থাৎ হরিণ না থেকে পারে? আজ এই অভয়ারণ‍্যে হরিণের সংখ‍্যা ১০০ -র উপর। সাধারণ চিতল হরিণ ছাড়ায় আরো এক বিরল প্রজাতির হরিণ অভয়ারণ‍্যের অন‍্য বিশলতা এনে দিয়েছে। হরিণের নাম কৃষ্ণসার হরিণ। চিতল হরিণ, কৃষ্ণসার হরিণের পাশাপাশি অন‍্য জীব জন্তূ, প্রাণীদের দেখা মিলবে। খরগোশ, ময়ূর, বেজি, শেয়াল, সাপ ও অসংখ‍্য পাখি। 
এই অভয়ারণ‍্যের একপ্রান্তে রয়েছে প্রকান্ড এক পুকূর বা ঝিল। দূর-দূরান্ত এলাকা থেকে উড়ে আসা পরিযায়ি পাখিরা আসে দেখবার মত। শীতকালে ঝিলের জলে বসে পাখির মেলা। বালিহাঁস, মরাল, হাঁস, পানকৌড়ি, তিতির, জলপিপি, মাছরাঙা সবাইকে দেখা যায় এখনে। এছাড়া হর্নবিল, পোকার্ড, গাডওয়াল, শোভেনাল, পিনটেল, ইগ্রেট পাখির দল। এমন অনেক পাখি আছে যারা সকালবেলায় উড়ে আসে আবার সারিদিন ঝিলে থাকার পর সন্ধ‍্যের দিকে রেখা চিত্র আঁকতে আঁকতে ফিরে যায় আপন বাসায়। কোথায় যাও পাখি, কবি জীবনান্দের ভাষায় --
 
" তারপর চলে যায় কোন এক ক্ষেতে 
তাহার প্রিয়ের সাথে আকাশের পথে যেতে যেতে 
সে কি কথা কয়?
তাদের প্রথম ডিম জন্মিবার এসেছে সময় 
অথবা হঠাৎ তাহারে বনের হিজল গাছ ডাক 
দিয়ে নিয়ে যায় হৃদয়ের পাশে।"
জলের পাখি ছাড়াও আছে গাছের পাখি আছে অনেক।এই সব পরিযায়ী পাখীরা উড়ে আসে উত্তারাঞ্চল থেকে উড়ে আসে। অস্থায়ী আবাসস্থল হিসাবে শীতের দেশের পাখিরা এই ঝিলে সংসার পাতে। গ্রীষ্মে পড়ার সাথে সাথে তারা উড়ে যায় নিজেদের দেশে। 
কি ভাবে যাওয়া যায় ঃ-  যে কোন সকালে হওড়া স্টেশন থেকে গণদেবতা এক্স, শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস ট্রেন ধরে বোলপুর স্টেশন। আরো ট্রেন আছে যেমন- হাওড়া মুজ্ ফরপুর প‍্যাসেন্জার, দানাপুর ফাস্ট প‍্যাসেঞ্জার। এছাড়া শিয়ালদহ থেকে কাঞ্চনজংঘা এক্স ও দার্জিলিং মেল। বোলপুর স্টেশন থেকে রিক্সা বা টোটোয় তিন কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে বল্লভপুর অভয়ারণ‍্যে আসুন।
কোথায় থাকবেন ঃ অভয়ারণ‍্যে থাকবার কোন জায়গা নেই। শান্তিনিকেতনকে জুড়ে পরিকল্পনা করতে হবে এবং শান্তিনিকেতন সরকারি লজ, অন‍্যান‍্য প্রচুর হোটেল রয়েছে। তবে প্রকৃতি প্রমীরা রাঢ় বাংলায় যারা পর্যটক হিসাবে যেতে চান, তারা বল্লভপুরের পাশের গ্রামগুলিতে থাকতে পারনে। গ্রামের মধ‍্যে মাটির বাড়িগূলি পেয়ে যাবেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ