মন্দিরের দেশ কাম্বোডিয়া দেখতে চলুনঃ--
য়োন মন্দিরটি একেবারে সেন্ট্রাল আংকোর থোমে। এটিও বেশ বড়। মন্দিরটি আসলে অনেক মন্দিরের সমাহার। একই চত্বরে বেশ কতগুলি মন্দির আছে। এটি কিন্তু বিষ্ণুর নয়, শিবের মন্দির। অর্থাৎ দ্বিতীয় সূর্যবর্মণের আগে এখানের রাজারা শৈব ছিলেন। মন্দিরে একটি বড় চূড়া, অন্যগুলি সেটিকে ঘিরে। সব চূড়াতেই বিশাল শিবের মুখ, চারদিকে চারটি এবং মাথায় একটি গোল চক্র। শিবের মুখগুলি, যেখানে যত মুখ আছে (পরে অন্যান্য মন্দিরেও দেখেছি, একেবারে একইরকম মুখ) স্মিতহাস, স্নিগ্ধ সৌম্যভাবের নিমীলিত নয়নের মূর্তি।
মূর্তিগুলি, দেখেই বোঝা যায়, বড় বড় পাথরের খণ্ড জুড়ে করা। অত ভারী ভারী পাথর টুকরো টুকরো অবস্থায় জুড়ে কী করে অত ওপরে তোলা হয়েছিল, নাকি ওপরে তুলে জোড়া হয়েছিল তা ভাবলে আশ্চর্য হতে হয়। আজও তা এত ঝড়ঝঞ্ঝা সয়েও দাঁড়িয়ে আছে! তবে ঠিকমত যত্ন না হওয়ার ফলে এবং বোধহয় বেলেপাথরের কারণে মন্দিরগাত্র সবুজ মসে ভর্তি, যা মন্দিরের ক্ষয়কে দ্রুততর করছে। প্রধান দরজা পেরোলেই একটি উপবিষ্ট বুদ্ধের মূর্তি আছে,যা সম্ভবত পরিবর্তিত শিবমূর্তি। দেওয়ালের খোদাই কাজগুলি দেখার মত। একটি কাজ দেখে মনে হল নটরাজের মূর্তি, সেই একই মুদ্রা, একই ঢং। এখা্নে আমরা পরিষ্কার একটি শিবলিঙ্গ দেখেছি, যোনিপটের উপরে। এছাড়া অনেক উৎপাটিত শিবলিঙ্গের গর্ত দেখেছি।
চূড়ার ওই বড় বড় মুখগুলো শিবের কিনা এ নিয়ে অবশ্য মতভেদ আছে। কেউ বলেন ওগুলো রাজা দ্বিতীয় সূর্যবর্মণের, কেউ বলেন বোধিসত্ত্বের। এখানেও সেই একই ব্যাপার, অর্থাৎ বেশ উঁচু প্ল্যাটফর্মের ওপরে মন্দির এবং সেই খাড়াই উঁচু সিঁড়ি। ফলে এখানেও আলাদা কাঠের সিঁড়ির ব্যবস্থা করতে হয়েছে। তবে এখানে যে সমস্ত মন্দির রয়েছে সেগুলো মনে হল ঠিক গোছানো নয়। মন্দিরে ঢোকার মুখেই সিংহের মূর্তি হিন্দুত্বকেই প্রকাশ করে। কী করে আজকের বিজ্ঞানের সাহায্য ছাড়া সেকালের মানুষেরা এই সমস্ত কাজ করেছিলেন কে জানে! অথচ আজকের বিজ্ঞানের এত উন্নতি সত্বেও টাইটানিকও ডোবে আর বড় বড় সেতুও ভাঙে। তাহলে কী আমরা সত্যি বিজ্ঞানে এগিয়েছি না পিছিয়েছি সেই প্রশ্নই মাথায় ঘুরতে থাকে।
আংকোর থোম শহরে বা তার আশেপাশে অজস্র মন্দির - সব দেখা বোধ হয় কারোর পক্ষেই সম্ভব নয়। দেখতে দেখতে একঘেয়েমি এসে যাওয়াও বিচিত্র নয
'বিজয় দরজা' বা ভিকট্রি গেট। খমের রাজ কোনো যুদ্ধ জয় করে এই দ্বার তৈরি করেছিলেন। দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ৩ কিমি করে বর্গাকার আংকোর থোম শহরে প্রবেশের মোট পাঁচটি প্রধান দরজা আছে। বায়োন মন্দিরকে ঠিক মাঝখানে রেখে পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ চারদিকে চারটি ছাড়াও পূর্ব দিকে আছে আরো একটি। সেটি এই বিজয় দরজা। প্রত্যেকটি দরজাই মন্দিরের ঢংয়ে নির্মিত। বিশাল একটি শিবের (মতান্তরে বুদ্ধের) মুখসহ বেশ কয়েকটি হাতির মাথা আর পদ্মফুল এবং কয়েকটি চূড়াসহ বিরাটাকার পাথরের গেটগুলি প্রাচীনত্বের ছাপ নিয়ে আজও স্বমহিমায় বর্তমান।
বিশালাকায় এই স্তাপত্য একটি অসমাপ্ত শিবের মন্দির। এটি রাজা পঞ্চম জয়বর্মণ-এর রাজকীয় মন্দির ছিল। মন্দিরের কাজ অসমাপ্ত রেখে দেওয়ার সঠিক কারণ জানা যায় না। তবে এটি বহুদিন নানা সংস্কৃতির পীঠস্থান ছিল । এর চারধারে করিডরগুলি দেখার মতো। যদি সম্পূর্ণ হত তবে এটি আংকোর থোমের একটি অপরূপ অলংকার হত। এরও মাথায় মেরু পর্বতের অনুকরণে পাঁচটি চূড়া আছে।
প্রম মন্দিরটি ১৯৯২তে ইউনেস্কোর হেরিটেজ তালিকাভুক্ত পেয়েছে। ঢোকার মুখেই দেখি বড় বোর্ড লাগানো আছে যে ভারতের আর্কিওলোজিক্যাল সোসাইটি ও কাম্বোডিয়া সরকারের যৌথ প্রচেষ্টায় এখানে সংস্কারের কাজ চলছে। এটি সপ্তম জয়বর্মন দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতাব্দীতে তৈরি করেছিলেন মহাযান বুদ্ধ মন্দির ও বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে। মন্দিরটির বিশেষত্ব এই যে মূল অংশটি বৃক্ষের করালগ্রাসে এবং সেটি সেইভাবেই দর্শনীয় হয়ে আছে। দর্শনার্থীরা মন্দিরটিকে এইরকম বৃক্ষপরিবেষ্টিত বা শিকড়পরিবেষ্টিতরূপে দেখার জন্যই আসেন। হাঙর বা কুমির কোনো প্রিয়জনকে আক্রমণ করেছে এবং সেই নিদারুণ দৃশ্য নিশ্চেষ্ট হয়ে দেখতে হলে যে অনুভূতি হতে পারে, আমার অবস্থা তদ্রূপ। দুঃখে যন্ত্রণায় মন ভরে যাচ্ছে যে নিকট ভবিষ্যতের গর্ভেই হয়তো শেষ হয়ে যাবে এই অভূতপূর্ব স্থাপত্য। অথচ এই শিকড়ের গ্রাস থেকে মুক্ত করতে গেলে এখন যেটুকু দেখা যাচ্ছে তাও ধ্বংস হয়ে যাবে। উদ্ধারকারীর দল মন্দিরকে গাছের আগ্রাসন থেকে মুক্ত করার চেষ্টাও করেননি। গাছগুলি ঠিক বট বা অশ্বত্থ নয়, তবে ওই জাতীয়, গাছের গায়ে নাম লেখা দেখলাম 'ছম্বক'। বিশাল অজগর সাপের মত শিকড়ের চেহারা সত্যিই বিস্ময় জাগায়। মনে হল সভ্যতার অগ্রগতির পাশাপাশি বনরাজিকে নির্মূল করে মানুষ বসতি স্থাপন করেছে। আবার সুযোগ পেলেই যে প্রকৃতি মানবসভ্যতাকে ধূলোয় মিশিয়ে দিয়ে আপন অস্তিত্বকে যে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনবে এটাই তার প্রমাণ। বোধহয় এই অবস্থাকে প্রত্যক্ষ করার জন্যই অন্যান্য মন্দিরের তুলনায় বেশি ভিড় এখানে। চতুর্দিকে ছড়িয়েছিটিয়ে আছে প্রচুর পাথরের স্তুপ, যা এককালে মন্দিরের শোভাবর্ধন করেছিল।
যতদূর জানা যায় মন্দিরটি রাজা জয়বর্ধনের মাকে উৎসর্গ করা হয়েছিল। এককালে আশিহাজার মানুষের আশ্রয়স্থল ছিল এই মন্দির। প্রচুর করিডোর বা বারান্দা আছে, যেগুলি এখন প্রায় দুর্ভেদ্য এবং অপ্রবেশ্য। নানা বিদেশি সিনেমার শুটিংও হয়েছে এখানে। চতুর্দিকে গাছের পাতায় ঢাকা এই বিশাল মন্দিরে যেন এক দুঃখের সবুজ ছায়া একটা ভিজে ভিজে অশ্রুমাখা আবহাওয়ার সৃষ্টি করেছে। ঝোপঝাড়ের জঙ্গলটুকু সরিয়ে মন্দিরটিকে দর্শনীয় করে রাখা হয়েছে। এখানকার বড় গাছগুলিকে আর সরানো সম্ভবও নয়। মন্দিরের এক-এক টনেরও বেশি ওজনের পাথরের একটিও যদি পড়ে যায়, যে কোনো মুহূর্তে এক মারাত্মক কাণ্ড ঘটে যাবে।
মন্দিরের অদূরেই এক দিঘি, পাথর দিয়ে বাঁধানো স্নানের ঘাট। রাজকীয় স্নানের এই দিঘির নাম শ্রা শ্রাং। প্রায় ৭০০ মি লম্বা আর ৩৫০ মি চওড়া বিরাট দিঘিটির মাঝে একটি দ্বীপ। এটি দশম শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় বেশ সুন্দর দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। এখানে এসে মন কিছুটা তৃপ্ত হল। মন্দির দেখতে দেখতে খানিক ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলাম। বিশেষ কিছু দ্রষ্টব্য না থাকলেও বসলাম দিঘির কাকচক্ষু শান্ত জলের দিকে তাকিয়ে সেই যুগটাকে মনে করে নিজেকে একটু চাঙ্গা করে নিতে। বাঁধানো পাড়ে বসে মানসচক্ষে দেখছিলাম রাজা-রানিদের জলকেলির দৃশ্য আর মাঝে মাঝেই হারিয়ে ফেলছিলাম নিজেকে। এর কাছেই পাওয়া গেছে বেশ কিছু পারলৌকিক ক্রিয়ার কলস ও তাদের অবশিষ্টাংশ এবং একটি পারলৌকিক ক্রিয়ার স্থান। ভাবতে ভাবতে ভুলে যাচ্ছিলাম যে বেলা পড়ে এসেছে।
উলটোদিকেই আছে বান্তে কদেই। হারাদার বড় কড়া। বলল, সাড়ে পাঁচটা বেজে গেছে, আজকে আর ঢোকা যাবে না। সত্যি কখন যে সময় চলে গেছে বুঝতেই পারিনি। এখনও তো বন্ধ হতে দশ পনের মিনিট বাকী, একটু গিয়েই চলে আসব। কী যেন ভাবল। বুঝলাম ঈশ্বর সহায়। বরফ গলল। বলল, যান তাড়াতাড়ি ফিরে আসবেন। এখানেও মন্দিরের ঢোকার মুখে সেই বিশাল মুখসহ দরজা। বেশ কিছুটা গাছে ঢাকা মোরামের রাস্তায় যাওয়ার পর একইরকম বিশাল পুরানো ধ্বংসপ্রায় মন্দির। তবে একটা জিনিস বারংবার লক্ষ্যণীয়, যেখানে ভাঙ্গাচোরা যাই থাক মন্দিরের সবকিছু একেবারে পরিচ্ছন্ন। কোথাও এতটুকু আবর্জনা নেই যা দেখে গা ঘিন ঘিন করবে। এত পুরোনো সব স্থাপত্য ভগ্নপ্রায় হয়ে গিয়েও সারা বিশ্বের পর্যটককে আকর্ষণ করছে বোধহয় এইজন্যই। আর আমাদের দেশে অজস্র দ্রষ্টব্য থাকা সত্ত্বেও ভ্রমণপিপাসুদের বড় অংশই সেদেশে আসেন না।
বায়োন মন্দিরের ঢঙে দ্বাদশ শতাব্দীতে নির্মিত বান্তে কদেই একটি বৌদ্ধ মন্দির। সম্ভবতঃ বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের আবাস ছিল এটি। বেশ কিছু পাথরের সিংহ আজও এই স্থাপত্য পাহারা দিয়ে চলেছে। নিম্নমানের পাথর দিয়ে তৈরি বলে দ্রুত নষ্ট হয়ে আসছে। তবে এটি অপেক্ষাকৃত ছোট এবং বর্তমানে সংরক্ষণের কাজও চলছে।
সেই খালটির পথে ফিরলাম যার ওপর দিয়ে একসময় এই মন্দিরগুলি নির্মাণের পাথর বয়ে আনা হয়েছিল। খালের ধার বরাবর গাছ বা বসার জায়গা আছে অনেক জায়গাতেই। পারাপারের ছোট ছোট ব্রিজগুলিও বেশ সুদৃশ্য। শহরের এমাথা থেকে ওমাথা পর্যন্ত চলে গেছে এই খানে। কুলেন রেস্তোরাঁ থেকে ফেরার সময় দেখে এসেছিলাম পাশেই একটা রাস্তা আছে যেটা রাতকে প্রায় দিন করে ফেলেছে। তার নাম পাব স্ট্রিট। সেখানে ঝিং ঝ্যাং বিদেশি গান, নাচ আর পানীয়ের হুল্লোড়। প্রচুর ঠেলাগাড়িতে বিভিন্ন ধরণের আইসক্রিমের সম্ভার, ঠাণ্ডা পানীয়। খানাপিনার সঙ্গে রংবেরঙের আলোকসজ্জায় গোটা রাস্তাটাই যেন লাস্যময়ী হয়ে উঠেছে। নিউইয়র্ক-এর টাইম স্কোয়ারের কথা খুব মনে পড়ছিল। সারাদিন আংকোরভাটের ঘোরাঘুরির শ্রান্তির পর একটু মনের ক্লান্তি ঝরাতে পাবের, রেস্তোরাঁর কাম্বোডিয়ার সুন্দরীরাও ভীষণ তৎপর। স্পেশাল খমের ডিসের সঙ্গে বেশ সস্তা ঠাণ্ডা বিয়ার আর ককটেলে মনটাকে ভিজিয়ে একটু নেচে নিয়ে নিজেকে একটু আনন্দ দেওয়াই যায়। ঢুকলাম একটা নামী রেস্তোরাঁ, পেপার টাইগার ইটারি-তে। এখানকার সাজসজ্জা আর ট্রাডিশনাল খমের খাবারে মনোনিবেশ করলাম। বেশ ভাল লাগল রেস্তোরাঁটি, খাবারের দামও বিশাল কিছু নয়। সুন্দরীরা খাবার দিয়ে গেল কিছুক্ষণের মধ্যেই। এখানে নাচ-গানের ব্যবস্থা নেই্ তবে খমের খাবারের জন্য দোকানটি বিখ্যাত। শুকনো মাছ, শুকরের মাংস, নুডল খুব পছন্দের এখানের লোকজনের। ভাতও খায় তবে চালটা একটু আলাদা। মাছ এবং নারকেল দুধে তৈরি আমোক আর শুকরের মাংসভাজা লোক লাক এদের বিশেষ খাবার। নাম বান চোক বা খমের নুডল এক বিশেষ কাম্বোডিয়ান নুডল (এটার তৈরির পদ্ধতি পরে দেখেছিলাম), খেতে চমৎকার। নুডল সুপও বেশ ভালো। শুধু এই দোকান নয়, গোটা পাব স্ট্রিটটাই বেশ পরিচ্ছন্ন। নৈশবিনোদন শেষ হবে ভোর চারটেয়। পাশেই আছে নাইট মার্কেট। আমরা আর সেখানে যাইনি। তার বদলে হোটেল থেকে বেরিয়ে একটা কার্ট থেকে খেলাম ফ্রায়েড আইসক্রিম। নাম শুনে প্রথমে চমকে উঠেছিলাম। আইসক্রিম আবার ফ্রায়েড হয় কী করে? দেখে বেশ লাগল – তাওয়ার মত একটা পাত্রের উপরে দুধ আর ফলের কুচি দিয়ে নিপুণ এবং দক্ষ হাতে সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হচ্ছে এই আইসক্রিম। বেশ লাগল খেতে। কয়েকটি দোকানে কাচের বেশ বড় গামলায় ছোট ছোট মাছ ঘোরাঘুরি করছে। আর সেই পাত্রের জলে পা ডুবিয়ে বসে আছে দেশি-বিদেশি সুন্দরীরা। সকলের মুখে এক গা শিরশিরানি আনন্দের সুড়সুড়ির অভিব্যক্তি। কী ব্যাপার, কাছে গিয়ে দেখি, জলে ডোবানো পায়ের চেটোর চারপাশে মাছেরা ঠোকর দিচ্ছে। এই মাছগুলো নাকি চর্মভুক। পায়ের থেকে মরা চামড়া ঠুকরে খেয়ে নেয় এবং তার ফলে পা নাকি মসৃণ এবং সুন্দর হবে। এই ব্যবস্থা কয়েক বছর আগে তুরস্কে দেখেছিলাম। ভারতেও হয়তো আছে, তবে আমি কোথাও দেখিনি। রূপচর্চার কতরকমেরই কায়দা – দেখে আশ্চর্য।
পরদিন সকালে স্নান সেরে আবার ঠিক সাড়ে আটটায় নীচে নেমে দেখি হোটেলের সামনে হাজির আমাদের গতকালের সারথি। তাকে একটু অপেক্ষা করতে বলে তাড়াতাড়ি প্রাতঃরাশ সারি। ভেবেছিলাম স্থানীয় কিছু খাব - কিন্তু হোটেলে গতানুগতিক কন্টিনেন্টাল ব্রেকফাস্ট ছাড়া আর কিছু রাখে না। ওগুলো খেয়ে খেয়ে মুখে অরুচি ধরে গেছে। অগত্যা কী আর করা। বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় বেশ কয়েকটা মশলা দেওয়া পুরভরা পরোটা নিয়ে গিয়েছিলাম। গতকালও তাই দিয়ে দুপুরের খাওয়া সেরেছিলাম। যা আছে আজও হয়ে যাবে । অতএব ও ব্যাপারে নিশ্চিন্ত। খেয়েদেয়ে সওয়ার হলাম টুকটুকের। গাড়ি ছুটল সেই আগের রাস্তাতেই লোকালয় ছাড়িয়ে, খাল পেরিয়ে, বাজার ছাড়িয়ে। মনে হল যেন ছুটেছে মনপবনের নাও। সবুজের বন্যার মধ্যে দিয়ে ভেসে চলেছি আধো রোদ আধো ছায়াঘেরা ফাঁকা রাস্তায়, দু-একটি টুকটুক ছাড়া আর কিছু চলাচল করছে না। পাশে পড়ে রইল বিশাল দেহ আর সুউচ্চ চূড়া নিয়ে আংকোরভাট। আমাদের যাচ্ছি আংকোর থোমের ছোট বৃত্ত ছাড়িয়ে বড় বৃত্তের দিকে। সাউথ গেট ছাড়িয়ে বায়োন মন্দির পাশে রেখে উত্তরদ্বার দিয়ে বেরিয়ে পৌঁছলাম প্রিয়া খান-এ। নামিয়ে দিয়ে চালক বললেন, আপনারা এই গেট দিয়ে ঢুকে ওপাশের গেট দিয়ে বেরোবেন। আমি ওখানে থাকে।
0 মন্তব্যসমূহ