Header Ads Widget

Responsive Advertisement

কলকাতার খুব কাছে দলমা পাহাড়, ঘুরে আসার গাইডলাইন

 দলমা পাহাড় ঘুরে আসি চলুনঃ-



অদ্ভুত নামটা। তাই না। হ্যাঁ, দলমা পাহাড়ে ঘেরা নির্জন, সুন্দর এই জায়গাটা এ নামেই পরিচিত। কলকাতার খুব কাছে অথচ একেবারেই অপরিচিত। পর্যটকদের ভিড়ের ক্লেদ এখনও স্পর্শ করেনি এবং স্নিগ্ধ পরিবেশকে। আর তাই, যারা নির্জনতা পছন্দ করেন, নৈঃশব্দের মধ্যে প্রকৃতির শব্দ শোনার চেষ্টা করেন, তাঁদের জন্য আদর্শ হতেই পারে এই শঙ্করদা। শীতের সকালের আলসেমি কাটিয়ে হাওড়া থেকে চেপে বসুন হাওড়া-বরবিল জনশতাব্দী এক্সপ্রেসে। মোটামুটি সাড়ে তিন ঘণ্টার মধ্যে আপনি পৌঁছে যাবেন টাটানগর স্টেশনে।

স্টেশনের বাইরে আপনার জন্যই অপেক্ষমাণ (রিসর্ট থেকে পাঠানো) গাড়িতে চেপে বসুন। কিছু ক্ষণের মধ্যেই শহুরে জনপদ ছেড়ে পৌঁছে যাবেন এক অপূর্ব প্রাকৃতিক পরিবেশের মাঝে। যে রাস্তা দিয়ে চলেছে আপনার গাড়ি, এটা চাইবাসা রোড। এই রাস্তাই দলমা পাহাড়শ্রেণিকে সঙ্গী করে সোজা চলে গেছে চাইবাসা, বাংরিপোশি পেরিয়ে বরবিল অবধি। তবে সে রাস্তায় নয়, আপনার গাড়ি কুদাদা গ্রামেই মূল সড়ক ছেড়ে ঢুকে পড়বে গ্রামের কাঁচা রাস্তায়। লাল মাটির রাস্তা এঁকেবেঁকে চলে গেছে ছোট ছোট গ্রামের মধ্য দিয়ে। ধানখেত, মাটির বাড়ি, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্কুল এই সব তো চোখে পড়বেই গাড়িতে যেতে যেতে, সঙ্গে সঙ্গে দলমার পাহাড়ি হাতছানি প্রলুব্ধ করবেই পর্যটক মনকে। অজস্র পুকুর। তাতে ফুটে আছে শাপলা, পদ্ম। ঝপাং ঝপাং করে জলে দেদার লাফাচ্ছে গ্রামের বাচ্চারা। এই সব দৃশ্য দেখতে দেখতে মাত্র আধ ঘণ্টার সংক্ষিপ্ত সফর শেষে গাড়ি আপনাকে পৌঁছে দেবে রিসর্টের আঙিনা।


রিসর্ট চত্বরটিও বেশ ভাল লেগে যাবে। আছে এক ছোট্ট পুকুর, তাতে মাছ তো আছেই, চরে বেড়াতে দেখবেন হাঁসের দলকেও। পাঁচ একর জমিতে বাচ্চাদের খেলার দোলনা, স্লিপ ইত্যাদি তো আছেই, দারুণ আকর্ষণ করবে বিভিন্ন ধরনের গাছসমৃদ্ধ এক সুন্দর বাগান। রিসর্ট চত্বর থেকেই দেখতে পাবেন দলমা পাহাড়ের দৃষ্টিনন্দন রূপ। কখনওসখনও আবার দলমার দামাল হাতির পালও নেমে আসে পাহাড়

সময় নষ্ট না করে স্নান-খাওয়া করেই একটা গাড়ি ভাড়া করে বেরিয়ে পড়ুন। এই অঞ্চলে মূলত সাঁওতালদের বাস। পর পর সাঁওতাল গ্রামই চোখে পড়বে। তবে গোপ গ্রামও আছে কিছু। রিসর্টের কাছেই সাঁওতাল গ্রাম কাসিডি। গাড়ি থেকে নেমে ঘুরে দেখতে পারেন সাঁওতাল গ্রামবাসীদের মাটির বাড়ি, সহজ-সরল জীবনযাত্রা। মাটির বাড়িগুলির সুন্দর অলঙ্করণ বেশ চোখ টানবে। পথের মোড়ে ইতিউতি দেখবেন কৌতূহলী গ্রামবাসী জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আপনার দিকে। কথা বলতে শুরু করলেই মুহূর্তে ভারি কাছের হয়ে যাবে এই মানুষগুলো। পৌষসংক্রান্তিতে এখানে ‘টুসু’ পরব উপলক্ষ্যে উৎসব হয়। আর ফাল্গুন মাসে ‘বাহা’ পরবে মেতে ওঠেন এই অঞ্চলের মানুষজন। সে সময়ে যদি উপস্থিত থাকতে পারেন, তবে তো সোনায় সোহাগা!


কাসিডি গ্রাম থেকে বেরিয়ে দামুডি গ্রাম হয়ে এ বারে পৌঁছে যান অপূর্ব প্রকৃতির কোলে। দলমা রেঞ্জের নারোয়া পাহাড়ের পাদদেশে এই জায়গাটার নাম পাথরভাঙা। সবুজ গাছপালায় মোড়া নারোয়া পাহাড় আর তার ঠিক নীচেই বড় বড় পাথরের সারিকে পাশ কাটিয়ে কুলুকুলু রবে বয়ে যাচ্ছে এক সুন্দর নদী যার নাম গড়া। নারোয়া পাহাড় পেরিয়ে এই গড়া নদী গালুডির কাছে মিশে যাচ্ছে সুবর্ণরেখা নদীতে। হঠাৎই আবিষ্কার করবেন, নদীর জলের শব্দ আর পাখির ডাক ছাড়া আর কোনও শব্দই নেই গোটা জায়গায়। আপনি ছাড়া অন্য কোনও জনমানবও নেই ত্রিসীমানায়।

এই নারোয়া পাহাড় উচ্চমানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ। খনিও তৈরি হয়েছে ইউরেনিয়াম উত্তোলনের। এ বারে গাড়ি নিয়েই গোল করে ঘুরে পৌঁছে যান নারোয়া পাহাড়ের অন্য প্রান্তে। লোয়াডি, ধিরোল, বাংগো গ্রাম পেরিয়ে বিখ্যাত রংকিনীমাতার মন্দির দর্শন করে (রাস্তার ওপরেই) জাদুগোড়া মোড় থেকে বাঁ দিকের (ডান দিকের রাস্তা চলে গেছে ঘাটশিলা অভিমুখে) রাস্তা ধরে চলে যান গড়া নদীর ওপর নির্মিত সেতুতে। এখান থেকে গড়া নদীর সর্পিল গতিপথ বেশ অনেকটাই দেখা যায়। ইচ্ছে করলে কিছুটা আগের এক বাঁ হাতি কাঁচা সড়ক দিয়ে ঢুকে চলে যেতে পারেন নদীর একদম কাছে এক পিকনিক স্পটে। এ বার ফেরার পালা। নারোয়া ইউরেনিয়াম খনির গেট পেরিয়ে শর্টকাট রাস্তায় খুব তাড়াতাড়িই ফিরে যেতে পারবেন রিসর্টে।

দিনটাও যদি হাতে থাকে তবে শঙ্করদার স্নিগ্ধ ভোরের গন্ধ গায়ে মেখে। প্রাতঃরাশ সেরে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন জামশেদপুরের দিকে। ডিমনা লেক, জুবিলি পার্ক, চান্ডিল ড্যাম এই সব নিয়ে সারা দিনের এক আনন্দসফরের অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে আসুন রিসর্টের নিরাপদ আশ্রয়ে।

শেষ দিন দুপুরের জনশতাব্দী ধরেই আবার ফিরুন কলকাতায়। একশো বছর আগে এই গোটা অঞ্চলটাই ছিল জঙ্গলে ঘেরা। গ্রামগুলির কোনও অস্তিত্বই ছিল না। শঙ্কর নামে এক ব্যক্তি প্রথম জঙ্গল কেটে বসতি, চাষবাস ইত্যাদি শুরু করেন এখানে, এমনটাই শোনা যায়। সাঁওতালরা তাঁকে শঙ্করদা বলে ডাকত। তার নাম থেকেই পরবর্তী কালে এ জায়গার নাম হয়ে যায় শঙ্করদা।

কী ভাবে যাবেন..ঃ হাওড়া থেকে টাটানগর। চাইবাসা রোড ধরে  দলমা পাহাড়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ