Header Ads Widget

Responsive Advertisement

রবরফে ঢাকা সাংলা ঘোরার গাইডলাইন

 রবরফে ঢাকা সাংলা চলুন



 একদিন সিমলা-কালকা মেলে পৌঁছান গেলো কালকায়। কালকা স্টেশন থেকে টয় ট্রেনে সিমলা। কালকা থেকে সিমলা টয় ট্রেনে ভ্রমণ কী অপূর্ব , ভাষায় বর্ণনা করা অসম্ভব। বেলা ১০ টায় কালকা থেকে সিমলা পৌঁছে সোজা বাঙালি কালীবাড়ি গেষ্ট হাউস উঠলো রথীনরা। আগে থেকে রুম বুক করা ছিল। হাউসে উঠেই বিশ্রাম। রথিনের পরিবার কেনাকাটা করল। পরেরদিন একটা প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে ২৪০ কিলোমিটার সাংলা। পেঁজা তুলার মত বরফ দিয়ে 
মনের আনন্দে আমরা মাতোয়াঝরা। 
তিব্বতী ভাষায় সাংলা কথার অর্থ ' পাস অব লাইট'। অর্থাৎ আলোককোজ্জ্বল গিরিবর্গ। সাংলা উপত‍্যকাকে ভারতের সুইজারল‍্যান্ড বলা হয়। কিন্নর জেলার এই জায়গা প্রাকৃতিক সৌন্ধর্য‍্যের স্বর্গরাজ‍্য। বৃহত্তর হিমালয় পর্বতশ্রেণীতে থাকা সাংলা উপত‍্যকা দৈর্ঘ‍্য ৯৫ কিলোমিটার ।
অনেকে সাংলাকে বলেন দেবভূমি। এই উপতক‍্যার উত্তরে কিন্নর কৈলাশ আর দক্ষিণে গাড়োয়াল  হিমালয় পর্ব্বতমালা। এই উপত‍্যাকার উচ্চতা ৮৭০০ ফুট। সাংলা যেন স্বপ্নের দেশ। প্রকৃতি তার আপন খেয়ালে সাংলার ক‍্যানভাস। 
হিমাচল প্রদেশের অনন‍্য সুন্দর উপত‍্যকা। পাহাড়ের বূক চিরে উপল বিক্ষত হয়ে বয়ে চলেছে বসপা নদী।
রথীনদের হোমস্টে। পাহাড়ের আশেপাশে কোন জঙ্গল নেই। জানলা খূললেই উঁকি দেয় স্বেতশুভ্র পাহাড়। কনকনে ঠান্ডা, জানলা খোলায় চলে না। 
ডিনার সেরে লেপের তলায়।

কলিং বেলেয় ঘুম ভাঙে রথীনদের। চারিদিক সূর্য‍্যের ঝকঝকে রোদ্দুর। রৌদ্রের সাথে দারুন সখ‍্যতা। যেদিকে তাকান যাবে প্রকৃতির অফুরন্ত সৌন্দর্য্য। সব গাছপালা ন‍্যাড়া ন‍্যাড়া। বসপা নদীর দিকে রথীনরা সদলে এগুতে থাকে। তবে চারিদিকে বরফে বরফে ছয়লাপ।
বপসা নদীর এক কিলোমিটার দূরে উজানে দিয়ে করছামে শতদ্রু নদীতে মিশেছে। রুপিন পাশ উত্তরখন্ডের এক ঐতিহ‍্যবাহি পথ, যা ধৌলি থেকে শুরু করে উত্তরপ্রদেশের সাংলায় এসে শেষ হয়। 
সাংলা হয়ে ট্রেক করা খুব ভালো। ট্রেক করার চেষ্টা না করে হোমস্টে রথীনরা ফিরছে এখন। আপেল, ন‍্যাজপাতি, অ‍্যাপ্রিকট গাছে ভরা পথ। লেখা আছে গাছে দেবেন না। ডাল ভর্তি আপেল দেখে ভাল লাগল।
    বাগানের মালিক গাছ থেকে একটা আপেল পেড়ে রথীনের নাতনীকে দিলেন। আন্তরিকতায় সবার মন ভরে গেলো। 
সাংলায় নানান রকমের বিনোদনের ব‍্যবস্থা আছে। এখানে সাংলায় বসপা নদীর পাড়ে ক‍্যাম্পে থাকার ব‍্যবস্থা আছে। দু রকমের ক‍্যাম্প আছে তাঁবু ও কটেজ। 
ট‍্যুর অপারেটারদের সাথে যোগাযোগ করে থাকার জায়গা বুক করতে হবে। তাঁরা নানান ধরনের অ‍্যাডভাঞ্চার গ্রুপের কার্য‍্যক্রমের ব‍্যবস্থা করে দেন। তার মধ‍্যে ট্রেকিং -এর ব‍্যবস্থাতো আছেই। এ ছাড়া রয়েছে রক ক্লাম্বিং,  রিভার ক্রসিং যোগ ব‍্যায়াম। বসপা নদী বড় মাছের জন‍্য খুবই বিখ‍্যাৎ। এখানে অ‍্যাঙলিং অর্থাৎ মাছ ধরবার  ব‍্যবস্থা আছে যথেষ্ট। যারা মাছ ধরতে চান তাদের খুবই ভালো লাগবে।
হোস্টেতে ফিরে রথীনরা কাকস্নান সেরে এবং দুপুরের লাঞ্চ সেরে সবাই ছাদের রোদ পোহাতে গেলো। এখানে চেয়ার টেবিলের ব‍্যবস্থা আছে। শীতের মিঠে কড়া রোদ ভালো লাগে সবারই। আর এখান থেকে সাদা সাদা পাহাড়ের সমারোহ দেখা যায়। অপৃর্ব সব পাহাড়ের সৃঙ্গগুলি। দেখেশুনে মনে হবে টুকর স্বর্গতে আমরা সবাই। 
আস্তে আস্তে দুপুর অতিক্রম করে বিকালের রঙিন লালচে আভা ফুটে উঠছে চারিদিক। বিকেল ও সন্ধ‍্যার প্রাক মুহূর্তে পশ্চিমের বরফ ডাকা সব পাহাড়ের মাথা, দিনের শেষে গোধূলি আভায় ঝলমলিয়ে গেল। এই দৃশ‍্য দেখে রথীনদের আনন্দের শিহরণ আর ধরে না। এ  স্মৃতি ভোলার নয়। 
এবার ফেরার পালা। রাত পোহালেই রূপসী সাংলাকে বিদায় জানিয়ে ঘরের পথে পা। 
যতক্ষণ চোখ পড়ে কিন্নরের বিউটি স্পট দেখি। মনের মাঝে বেজে ওঠে বিদায় রাগিণী। 

কিভাবে পৌঁছাবন ঃ হাওড়া থেকে কালকা এক্সপ্রেসে কালকা। কালকা থেকে টয় ট্রেনে সিমলা। সিমলা থেকে ৩২০ কিলোমিটার দূরে যেতে হবে গাড়ি ভাড়া করে সাংলায়। বাসেও আসা যায়। 
কোথায় থাকবেন।ঃ সরকারি কোন আবাসন নেই সবই বেসরকারি হোটেল।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ