প্রত্নতাত্বিক দেবলগ্রাম ঘুরতে চলুনঃ-
বাংলার পঞ্চম ও ষষ্ঠ শতাব্দীর নিদর্শন দেখতে হলে তুমি দেবলগড় জঙ্গলে যাও।
সেই
দেবলগড়ের কথা ভূলা যায়? এশিয়াটিক সোসাইটির মাসিক ম্যাগাজিনের ১৯১৮ সালের
জুলাই সংখ্যায় দেবলগড়কে বাংলার মানচিত্রে অন্যতম প্রাচীন প্রত্ন- পর্যটন
হিসাবে বর্ণনা করেছে।
মাঝে বড় রাস্তার মোড় থেকে ১২
নং জাতীয় সড়ক ধরে গাংনাপুর। রাণাঘাট মহাকুমার অন্তর্গত দেবগ্রাম বা
দেবলগ্রাম আজ অতীতের এক নীরব স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আজো
মাঠে চাষ করবার সময় হালে উঠে আসে পাল, সেন ও সুলতানি সময়ের খুবই মূল্যবান
শিল্প নিদর্শন। দেবলগড়ের উদ্ধারকৃত গুপ্ত সম্পদ দেখা যাবে রাণাঘাট
চাকদহে।
দেবগ্রামের প্রত্ন সামগ্রীর কথা উনবিংশ
শতাব্দির সময়ে "সমাচার দর্পণ" পত্রিকায় উল্লখিত আছে। উল্লেখ আছে এখানে একটি
দূর্গের মত প্রাসাদ ছিল। কুড়ি ফুট উঁচু প্রাচির ও গভীর খাদ, পোড়া ইটের
মূর্তি কথা। শুধু একটি মাটির নজরমিনার আজও ধ্বংশাবেশের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে।
এই নজরমিনার ঘিরে রয়েছে ৫০/৬০ মিটার চওড়া পরিখা। জানা যায় দেবগ্রামের নাম
প্রাচীন স্মৃতিস্তম্ভের তালিকায় আছে,যেখানে দূর্গের বাইরে বেশ কয়েকটি
ধ্বংসাবেশের উল্লেখ আছে। এদের আকার দেখে বুঝা যায় এটা প্রাক মুসলিম যুগের
ধ্বংসাবেশ। এছাড়া উল্লেখ করে গেছেন মহার্ণব নগেন্দ্রনাথ বসু, তাঁর বর্ণীত '
বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস' এর রাজন্য কান্ডে। এই দেবলগড়ে রাজত্ব করিতেন
বিক্রমপুর। বর্তমান দেবগ্রাম থেকে ৪ মাইল দূরে অবস্থিত। দেবগ্রামের
চতুঃপার্শ্বতী যে-ভূভাগকে ভাগিরথী ও ইছামতি চক্রাকারে বেস্টন করে আছে। এই
স্থান বালবলভী নামে পরিচিত ছিল।
দেবগ্রাম
গ্রামবাসীরাই তৈরী করেছেন দেবগ্রাম পুরাতত্ব সংগ্রহশালা। প্রাক্তন
ডাককর্মী চিত্ত বিশ্বাস এই সংগ্রহশালা গড়ে তুলতে নিজের জমি দান করেছেন।
দেবলগড়
কেন্দ্রিয় এলাকার অবস্থান মারালি নদীর প্যালিও চ্যানেলের কাছে। ইছামতি ও
মারিলি নদীর সঙ্গমস্থল এখান থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে।
দেবলগড়ের
আশেপাশে ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে বিস্তির্ণ এলাকা জুড়ে প্রচূর
নিদর্শন রয়ে গেছে। গ্রামবাসীরা সহযোগিতা করে এই ঐতিহ্য ও ইতিহাস ধরে
রেখেছেন।
কিছুদিন আগে চূর্ণী নদীর অতল থেকে একটি "
অ্যামফেরা" উদ্ধার করা হয়েছে। এই ধরনের মৃৎপাত্র প্রাচীনকালে গ্রীস, রোম ও
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মদ, অলিভ ওয়েল, আচার রাখা হতো এবং বাণিজ্যিক কাজে
ব্যবহার করা হতো।
গত শতাব্দিতেই চন্দ্রকেতুগড়,
হরিনারায়ণপুর প্রভৃতি প্রত্নতাত্বিক স্থান থেকে আমফেরা সহ বিভিন্ন বৈদেশিক
বাণিজ্যের তথ্য ও প্রমানাদি পাওয়া গেছে। কিন্তু নদীয়া জেলার এই ব-দ্বীপ
অঞ্চল থেকে এধরনের প্রত্নসামগ্রী সংগ্রহ করা সত্যিই একটি অভিনব ব্যাপার।
এখনো দেবলগড়ের খনন কার্য্য এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট মানুষ জানতে পারলো না, সভ্য সমাজের বিরাট এক ত্রুটি।
প্রত্ন সামগ্রী দেখলে বিস্মিত হয়ে পড়তে হবে অবশ্যই।
সংগ্রহশালায়
প্রত্ন সামগ্রী দেখে মুগ্ধ হতে হবে নিশন্দেহে। কী নেই এখানে আমফেরা,
মৃৎপাত্র, মাটির মূর্তি, টেরাকোটা পুঁতি, বৌদ্ধ স্তুপের ক্ষুদ্র সংস্করণ,
পাপড়ি যুক্ত পদ্ম, মাটির খঞ্জরি, মাটির ফুলদানি, পালযুগের ধূপকাঠি প্রভৃতি
সম্পদ সব। স্থানীয় মানুষেরা এগুলি গুছিয়ে রাখবার জন্য সুন্দর সুন্দর
আলমারি দান করেছেন।
মাটির প্রদীপগুলো সম্ভবত বৌদ্ধদের সময়ে নিরমিত তাদের উপাসনায় এগলি ব্যবহৃত হতো।
এখান
থেকে উদ্ধারকৃত মৎপাত্র বাংলার অজানা প্রত্নতাত্বিক উপাদান।
চন্দ্রকেতুগড় ও বাংলাদেশের মহাপ্রস্থানকালে খননকালে পাওয়া মৃৎপাত্রের সাথে
সামঞ্জস্যপূর্ণ।
দেবগ্রাম পুরতত্ব সংগ্রহশালা ২০১৭
সালে জুন মাসে রথযাত্রা উপলক্ষে " দেবগ্রাম দেবলগড় পুরাতত্ব ও লোকসংস্কৃতি
সংঘ " নামে একটি গোষ্ঠি প্রতিষ্ঠা করে। তখন নমুনা ছিল ২০ টি এখন প্রায়
১০০০ মত প্রত্নতাত্বিক নমুনা।
কি
ভাবে পৌঁছাবেন.ঃ--
কলকাতা স্টেশন বা শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে রাণাঘাট। বাসে বা
নিজের গাড়িতে রাণাঘাট। স্টেশন থেকে টোটো ধরে চলে আসা যাবে কুপার্স
ক্যাম্প। ক্যম্প থেকে দেবগ্রাম চলে আসা যাবে। চাকদা থেকে বাসে করে আসা
যাবে দেবগ্রামে।
কোথায় থাকবেন ঃ
রাণাঘাটে প্রচুর হোটেল এবং লজ পাওয়া যাবে।
0 মন্তব্যসমূহ