বনজ্যোৎস্নায় বিহারীনাথ
চারিদিকে তাকিয়ে দেখো
জ্বলছে ভালোবাসায়
পৃথিবীকে রেখেছে ধরে
স্বর্ণলী আলোর মায়ায়।
সত্যিই তাই। একবার যদি পূর্ণিমা তিথিতে বিহারীনাথ পাহাড়ে যাওয়া যায় তবে মোম জোৎস্নায় অঙ্গ ভিজিয়ে এক অপূর্ব মায়াময় জগতের খোঁজ পাওয়া যায়। মন প্রান অনাস্বাদিত পুলকে ভরে উঠবে।
টেরাকোটার শহর হচ্ছে বাঁকুড়া। এই জেলায় প্রচুর দর্শনীয় স্থান রয়েছে। ছোট্ট ছুটিতে ঘুরলে এক নতুন স্বাদ পাওয়া যাবে। তেমনি বিহারীনাথ পাহাড়। এখান থেকে অল্প দূরত্বে বাড়ন্তি, পঞ্চকোট, জয়জয়ন্তী পাহাড়, মাইথন ড্যাম, পাঞ্চেত বাঁধ, কল্যাণেশ্বরী ও শুশুনিয়া পাহাড় দেখে নেয়া যায়।
বিহারীনাথ পাহাড় হচ্ছে বাঁকুড়া জেলার সবচেয় উঁচু পাহাড়। উচ্চতা প্রায় ১৪৫০ ফুট। পূর্বঘাট পর্বত মালার অংশ। ঘন জঙ্গলে ঘেরা এই বিহারীনাথ পাহাড়। পূরাতাত্বিক মহলে বিহারী নাথের সমাদর রয়েছে যথেষ্ট। পাহাড়ের নীচে রয়েছে শিবমন্দির। বিহারী নাথ ধাম বলে এই মন্দির বাবাধাম পরিচিত। বিহারী নাথের শিবলিঙ্গ কাশীপুরের রাজা স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। বিহারী নামের যুক্তি হল দুই কিলোমিটার দূরে Biharo গ্রাম থেকে। সেখানে মন্দিরের পুরোহিতের বসবাস। তাঁদের পদবী হচ্ছে দেউগড়িয়া। বিহারী কথার আরেটি মানে যারা বিহার করেন অর্থাৎ ভ্রমণ যারা করতে ভালোবাসেন।
বিহারী নাথ ছাড়াও দূর্গা মন্দির, হনুমান মন্দির এখাে আছে।
এই অঞ্চল ঘুরলে দেখা যাবে নানা প্রজাতির গাছ ও বন্য প্রাণী। বনের পথে দেখা মিলবে শেয়াল, খরগোশ, বুনো শূয়োর, বনরুই, হায়না প্রভৃতি।
আদিবাসীদের গ্রাম দেখা যাবে। নাম- পাহাড়বেড়া। মাটির ঘর। দেওয়ালে অসম্ভব সুন্দর আলপনা। নিকানো ঘরগুলির চেহারায় অন্যরকম। শিব মন্দিরে পূজো অনুষ্ঠিত হয় শিবগাজনের মেলা, পুরো শ্রাবণ মাসকাল ও নবরাত্রির সময় দূর- দূরান্ত থেকে মানুষ আসে। তখন এই জায়গাটি তীর্থক্ষেত্রে পরিণত হয়। অনেকে এখানে ট্রেক করতে আসেন।
এবার বাড়ন্তি ও গড়পঞ্চকোট পাহাড় ঘুরে আসতে হবে। এখান থেকে কুড়ি কিলোমিটার দূরে। আর বাড়ন্তি থেকে বারো কিলোমিটার দূরে পঞ্চকোটগড়। বাড়ন্তি যেতে পথের দুপাশে দেখার জন্য খুবই আকর্ষণীয়। এরকম আর্কষণীয় পথে যেতে যেতে পেয়ে যাবেন পাহাড়, হৃদ দেখে নেওয়া যাবে। এ যেন প্রকৃতির স্বর্গ রাজ্য। এই রকম প্রিকৃতিক সৌন্দর্য্য দেখতে পৌঁছে যাওয়া যাবে আকর্ষণীয় রামচন্দ্রপুর জলাশয়ে। বাড়ন্তি নদীকে ঘিরে দেওয়া বাঁধ এবং জলাধার। এ এক অকল্পনীয় দৃশ্য।
এবার যাওয়া যাবে পঞ্চকোটগড়। ১২ কিলোমিটার অতিক্রম করে সবুজে সবুজে ছয়লাপ পঞ্চকোট গড়। পাহাড় ২১০০ ফুট উচু আর প্রায় ১৮ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে- ছিটিয়ে পঞ্চকোট। নানান প্রজাতির ভেসজ গাছের সমাহার, তেমনি নানান বন্য জন্তুর রাজত্ব এই পঞ্চকোটে। চোখে পড়বে নানান রঙের প্রজাপতি আর কানে ভেসে বেড়াবে পাখির সুমধুর কল কাকলি।
এক সময় পঞ্চকোট রাজাদের রাজধানী ছিল এই গড় পঞ্চকোট। পঞ্চকোট রাজা এবং বংশধরের অনেক মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। বর্গী আক্রমনের ফলে বহু মন্দির ধ্বংস হয়ে যায়। এখন চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মন্দিরের ভগ্নাশেষ। একটি মাত্র মন্দি পঞ্চরত্ন, পঞ্চতন্ত্র নামে মন্দির টিকে আছে জরাজির্ণ অবস্থায়। মন্দিরে কোন বিগ্রহ নেই। নিত্য পূজো একেবারে বন্ধ। বিহারীনাথ পাহাড়ের অনন্ত প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য ও সৌন্দর্যর মোহিনী রূপে আত্মহারা হয়ে যাওয়া। এ সব স্মৃতি ভোলার নয়।
কীভাবে যাবেন ঃ- বিহারীনাথ পাহাড়ে ট্রেনে বা গাড়িতে দু'ভাবেই যাওয়া যায়। গাড়ি করে গেলে পথের দূরত্ব ২৩০ কিলোমিটার। মধুকুন্ড রেলেপথের ক্রসিং পেরোনর পর প্রায় ১৬ কিলোমিটার সোজা আসার পর বিহারীনাথ। আর ট্রেনে এলে আসানসোল থেকে মধুকুন্ড রেল স্টেশান থেকে বা রানীগঞ্জ এসে গাড়ি ভাড়া করে বিহারীনাথ যেতে হবে।
কখন যাওয়া যায় ঃ অক্টোবর থেকে মার্চ মাস অবধি যে কোন সময়ে ভ
কোথায় থাকবেন ঃ ১, বিহারীনাথ ইকো ট্যুরজম রিসোর্ট। ২, পশ্চমবঙ্গ সরকারের ইকো ট্যুরিজম সেন্টার। ৩, বিহারীনাথ টুরিস্ট পয়েন্ট।
0 মন্তব্যসমূহ