Header Ads Widget

Responsive Advertisement

গুই মনাস্ট্রী, হিমাচল


গুই মনাস্ট্রী, হিমাচল

আমরা কলকাতার যাদুঘরে যারা গিয়েছি তারা সবাই মমি দেখেছি । সেই মমিটি মিশরীয় পদ্ধতিতে বিভিন্ন রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরী । কিন্তু জাপান ও তিব্বতের বৌদ্ধ সন্নাসীরা এক প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে মমি বানানোর প্রক্রিয়া আবিস্কার করেছিলেন । বেঁচে থাকা অবস্থায় জীবনের শেষ দিকে তারা কম খেতে আরম্ভ করতেন এবং শেষের দিকে শুধু বার্লি, ভাত আর বীণ খেতেন । এভাবে তারা যখন কেউ মারা যেতেন তখন সারা শরীরে পুরু করে মোম মাখিয়ে তিন বছর মাটির নীচের ঠান্ডা ঘরে রেখে দেওয়া হত । ১৯৭৫ সালে হঠাৎ ভূমিকম্পে হিমাচলে এক পুরানো গম্বুজের মুখ খুলে গিয়ে বসা অবস্থায় এক মমির দেহ আবিস্কৃত হল । সেটা ছিল বৌদ্ধ সাধু সাংঘা তেনজিং এর । তারপর ২০০৪ সালে পুলিশ গিয়ে সেই মমিটি উদ্ধার করে স্থানীয় গুম্ফায় স্থাপন করলো সর্বসাধারণের দেখার জন্য । 
নাকোতে দুপুরের খাবার খেয়ে লেক দেখতে আমাদের প্রায় আড়াইটে বেজে গেল ৷ তারপর বেলা তিনটে নাগাদ আমরা পথে নেমে পড়লাম ৷ আমাদের পরবর্ত্তী গন্তব্য হল টাবো, যেখানে আজ রাতে আমরা থাকবো ৷ টাবোর ৫০ কিমি আগে ডানদিকে দু কিলোমিটার এগিয়ে গেলে রযেছে একটি মনাস্ট্রী,  গুই মনাস্ট্রি । সেখানেই কাঁচের আধারে রক্ষিত আছে সেই বৌদ্ধ সাধু সাংঘা তেনজিং এর বসা অবস্থার মমি । মনাস্ট্রীটা অদ্ভুত সুন্দর জায়গায় ৷ আমরা গিয়ে দেখলাম পাহাড়ের উপর মনাস্ট্রীটা মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে, আশেপাশে কেউ কোথায় নেই, আর মনাস্ট্রীর দরজা বন্ধ ৷ মনাস্ট্রীর বিপরীতে দেখলাম একটা ছোট আর্মি চেকপোষ্ট ৷ যিনি পাহারায় রয়েছেন তিনি তার মনের দুঃখ আমাদের  কাছে উজাড় করে দিলেন ৷ বললেন এই নির্জন জায়গায় ডিউটি করা এক ধরণের অভিশাপ ৷ মনাষ্ট্রী বন্ধ হলেও পাশেই আলাদা কাচের মন্দিরে মমিটি রাখা আছে ৷ মমির সামনে রয়েছে সাতটি বাটি ৷ বৌদ্ধ ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী সকালবেলায় সাতটি ধাতুর বাটিতে জল নিবেদন করা হয় ৷ সাতটি বাটি যথাক্রমে বোঝায় :- পানীয় জল, ধোয়ার জল, ফুল, ধূপ, আলো, সুগন্ধি এবং খাবার ৷  চুপ করে গিয়ে দাড়ালাম মমিটার সামনে, একদৃষ্টে কিছুক্ষণ তাকালে মনে হল যেন কিছু নড়ে উঠলো, আমার সারা শরীর শিহরিত হল ৷ তখন পাহাড়ের ওপাশে সূর্য্য প্রায় ঢলে পড়েছে, বুঝলাম আর কিছুক্ষণের মধ্যেই অন্ধকার এখানে গ্রাস করবে ৷ আর্মির গাড়ী এসে নিয়ে যাবে পাহারাদারকে ৷ আর বৌদ্ধ সাধু সাংঘা তেংজিঙের অতৃপ্ত আত্মা সারারাত এই নির্জন পাহাড়পুরীতে গুমরে গুমরে কাদবে কিনা তার খবর জানবার মত কেউ তখন এখানে আর থাকবে না ৷ আমরা বিষণ্ণ মনে এগিয়ে চললাম টাবোর দিকে, যেতে হয়ত আজ একটু রাত হয়ে যাবে ৷


 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ