উত্তর সিকিম ভ্রমণ
আজ আমাদের গন্তব্য জিরো পয়েন্ট ও ইয়ামথাং ভ্যালি। সকাল ৭ টা আমরা লাচুং থেকে বেরোলাম।
LACHUNG থেকে 51 k.m. দূরত্বে খাড়া সঙ্কুল পথ বেয়ে পৌঁছাতে হয় ZERO POINT (15,300 ft) উচ্চতায়। রাস্তার দুই ধার দিয়ে রডোডেনড্রন ফুলের শোভা দেখতে দেখতে ইয়ামথাং ভ্যালি পৌছালাম। কিন্তু আমরা আগে যাব জিরো পয়েন্টে এর । ইয়ামথাং থাকে জিরো পয়েন্টের রাস্তায় যা দেখলাম আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠলাম। আগের দিন রাতে প্রচুর বরফ বৃষ্টি হয়েছে এখানে তাই প্রত্যেকটা গাছের পাতায় বরফ জমে আছে রাস্তার দু'ধারে। মনে হচ্ছে আমরা স্বর্গের দুয়ারে এসে হাজির হয়েছি। ড্রাইভার দা বলল তোমাদের ভাগ্য খুব ভাল এত সুন্দর আবহাওয়া পেয়েছো আজ। কিছুটা দূর যাওয়ার পরেই দেখলাম সব গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে আর বলছে এখান থেকে গাড়ি ওপরে যাবে না বরফের জন্য। সব পর্যটকরা এখান থেকে জিরো পয়েন্টের view দেখছে ড্রাইভার রা ওপরে নিয়ে যাচ্ছে না। কিন্তু এখান থেকে জিরো পয়েন্টে এখনও 5 কিলোমিটার রাস্তা। আমাদের ড্রাইভার দা আর একটু আগে গেল। সামনে army এসে বলল বেশি দূর যাবে না একটু গিয়ে ঘুরে আসবে । যাওয়ার জন্য আমাদের ড্রাইভার দা কে কোন request করতে হয়নি. আমাদেরকে নিয়ে গেল জিরো পয়েন্টের Top এ। সে এক অসাধারণ দৃশ্য দেখলাম।চীন-ভারত সীমান্তে নাগরিক জীবনের শেষ সীমা।
একপাশে ধূসর পাহাড়ের গায়ে বিছিয়ে ফুটে রয়েছে খুব ছোট্ট ছোট্ট লাল-সোনালী রঙের ঘাসফুল। দূর থেকে মনে হচ্ছে যেন শিল্পীর তুলির টানে আঁকা কোনো ছবি। আর একদিকে চূড়ায় তুষারাবৃত শৈলশ্রেণী।প্রকৃতির এই রূপ শুধু মনপ্রাণ দিয়ে অনুভব করা যায।--"কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা মনে মনে"।
আমার ছেলের একটু problem হয়েছিল সাতে গাড়িতে আরো দুজনের অসুবিধা হয়েছিল higt altitude জায়গা তো।প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যেও ফিরে আসতে চায় না অবুঝ এ মন। তবুও ফিরতে তো হবেই। তাই, প্রকৃতির ওই রূপময়তাকে অন্তরের মণিকোঠায় রেখে রওনা দিলাম ইয়ামথাং ভ্যালি' র উদ্দেশ্যে।
YUMTHANG VALLEY-
১২১০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত ইউমথাং-এর আর এক নাম হল ‘ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার’। বিভিন্ন প্রজাতির রডোডেনড্রন, প্রিমুলা ও আরও নানা ধরনের ফুলের সমারোহে সত্যিই নন্দনকানন হয়ে আছে এই উপত্যকা। গগনচুম্বী পাহাড়শ্রেণীর বরফাবৃত চূড়ায় রোদের আলো পড়ে ঝলমল করছে। পাহাড়ের কোল বেয়ে নেমে আসছে নানা ঝরণাধারা। অনেক নীচে 'তিস্তা' তার শীতল স্রোতধারায় বয়ে চলেছে আপন আনন্দে। পাশে নানা আকৃতির পাথর সম্ভার। ভ্যালিতে চড়ে বেড়াচ্ছে ইয়াকের দল। সাদা-রঙিন নানা পবিত্র পতাকায় সজ্জিত তিস্তার চারিধার। ওখানে গেলে সময়ের কোন হিসেব থাকে না। অনন্তের মাঝে মন গেয়ে উঠতে চায়, "সীমার মাঝে অসীম তুমি বাজাও আপন সুর"।
রাস্তায় যেতে যেতে দেখলাম মিলিটারিদের যুদ্ধ প্রস্তূতির নানা কলাকৌশল।পাহাড়ের কোলে ছোটো ছোটো পাথরের বাঙ্কার। কত কষ্ট করে রোদ, জল-,ঝড়, তুষারপাত সহ্য করে সেনারা ওই বাঙ্কারে থেকে আমাদের দেশকে রক্ষা করছেন, তা অনুভবে শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে এলো। রডোডেনড্রন আর পকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে আমরা চলেছি রাস্তা ধরে লাচুং এ পৌছালাম ৩ টে বেজে গেলো । লাচুং এর kalden residence(এই হোটেল এর সব কিছু ভালো ছিল) লাঞ্চ করে আমরা ৪ টে বেরিয়ে পড়লাম আমাদের পৌঁছাতে হবে লাচেন। প্রকৃতির শোভা দেখতে দেখতে ৬ টা লাচেন পৌছালাম।খুব সুন্দর পাহাড় দিয়ে সাজানো গ্রাম ৯২০০ ফুট উচ্চতায় কিন্তূ লাচুং এর মতো লাচেন খুব বড় গ্রাম না।আমরা ছিলাম Blue poppy hotel এ এটা একদম লাচেন মনাস্ট্রি পাশে অবস্থিত। মনাস্ট্রি আদলে তৈরি খুব সুন্দর view আর সব কিছু ভালো ছিল।
আমাদের ঘোরানোর দায়িত্ব ছিল সিকিমের লোকাল ছেলে Pranay Pradhan আর আমাদের ড্রাইভার দা Vivek Rai গাড়ি চালানোর দক্ষতা খুব ভালো। খুব ভালো আমরা ঘুরছি । দু জনা কে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
0 মন্তব্যসমূহ