বর্ধমানের চুপি আর শিল্পপাড়া সফর ১-২দিনে ঘুরে আসতে পারেন বেশী দূরে নয় কাছেই। কলকাতার অনেক কাছেই পূর্ব বর্ধমানের চুপি। একদিনের ঘোরার পক্ষে আদর্শ জায়গা। আর যদি প্রকৃতির কোলে থেকে দেশি বিদেশি পাখির সঙ্গ পাওয়া যেতে পারে, তাহলে এক রাত চুপি গেষ্ট হাউস থেকে ভোর বেলায় চুপি জলাশয়ে পাখির বৈচিত্র দেখে অবশ্যই মোহিত হবেন। চুপি প্রকৃতির অপূর্ব দান যা দেখে অবাক না হয়ে পারা যায় না। একদম স্বচ্ছ জলাশয়, সেখানে পরিযায়ি পাখি সাথে নৌকা বিহারে জল বিহারে ঘুরা যায়। থাকার জন্য অবশ্যই চুপি গেষ্ট হাউস। যা অন আলাইনে গেষ্ট হাউস বুক করতে হয়। এখানে পিকনিকের ব্যবস্থা আছে তবে মাইক বা ডিজে একদমই নিষিদ্ধ। চুপিতে মোট ৪৭ টি ডিঙি আছে ঘাটের বাঁদিকে ৩০ টি আর ডান দিকে ১৭ টি বাঁদিকের ৩০ টি ডিঙি মালিকাধীন আর ডান দিকের ডিঙিগুলি সমাবায় ভিত্তিক পরিচালিত হয়। ডিঙিগুলি ঘন্টা ভিত্তিক চলে। ঘন্টা ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। পর্যটকেদর খাবার পাখিদের দেওয়া নিষেধ। এখানে পাখিরা জলজ অর্থাৎ জলের নীচের খাবার খায়। দেশ-বিদেশের পাখি যেমন- পিনটেল, সম্পেন, কটন ষ্টিল ( সাইবেরিয়ান ডাক) খঞ্জনা, কাস্তে ছড়া, পান্ডুবী, কাদাখোচা, পুহের, জলমুরগি, সবার দেখা এখানে মিলবে। এখানে ছবি তুলতে অনেক পর্যটক আসেন। সুন্দর সুন্দর ছবি তোলেন। মায়াপুর কাছেই। মায়াপুর দেখা থাকলে চলুন নতুন একটি শিল্পের জন্য প্রতিষ্ঠিত শিল্পগ্রামে। যা দেখে মনে হতে পারে এই ঘরণা কয়েক শতকের পুরনো। নতুন গ্রামতো নয় এক আবিস্কার বলা চলে--শিল্পীপিড়া। বিখাৎ হয়ে ওঠা ১০৮ টি কাটিয়াবাবার আশ্রম। কয়েক মিনিটে পৌঁছে যাওয়া যাবে এই আশ্রমে। গেট দেখেই অবাক হয়ে যেতে হবে। " ছায়া সুশীতল শান্তির নিড় " অপূর্ব শৈলীতে গড়া কাটিয়াবাবার আশ্রম। আধুনিকতার সথে পুরাতনের এক অপূর্ব মিল আর কি। তাই স্টেশন থেকে চলে আসুন শ্রী শ্রী প্রজ্ঞাদাস বাবাজীর এই কাটিয়াবাবার আশ্রমে। গেট অতিক্রম করে প্রায় ১০০ মিটার অতিক্রম করে কাটিয়েবাবার আশ্রম। বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বর থানার সিজনে আর ফুলগ্রামের জমিদার শিশিরকুমার ও প্রশান্ত ঘোষালের দান করা জমির উপর স্বামী প্রজ্ঞাদাসজী ১৯৯৪ সালে মন্দিরের গোড়াপত্তন করেন। পরে আরো ৩০ বিঘা জমি কিনে সুদৃশ্য এক মন্দির স্থাপন করেন। চাষের জমিও কিছু আছে সেখানে আশ্রমিকরা চাষাবদ করেন। আশ্রম বড় হওয়াতে মানুষের জীবনযাপনও উন্নত হয়েছে। আধুনিক স্থাপত্যের সাথে পুরতন স্থাপত্যের মেলবন্ধনের নিদর্শন এই মন্দির। গাছপালার মধ্যে আছে এক বিশাল পুকুর। কাটিয়াবাবার উদ্যোগে প্রতিষ্ঠত হয়েছে দুটি স্কুল। একটি বাংলা মিডিয়াম একটি ইংলিশ মিডিয়াম। আবার এদের পরিচালনায় একটি দাতব্য চিকিৎসালয় গড়ে উঠেছে। এই অজ পাড়া গায়ে এত সুন্দর স্থাপত্য ভাবাই যায়না। আগে এখানে মদ পাওয়া যেত এখন সেইসব মানুষেরা মদের নেশা ছেড়ে এখন সবাই চাষবাসে ব্যাস্ত। পরিবেশ পরিবর্তন করে মানুষই। তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ এই নতুন গ্রাম কাটিয়াবাবার আশ্রম। ১০৮ কাটিয়া আশ্রমে শেষ প্রদর্শনী স্থান নতুন গ্রামের " শিল্পীপাড়া"। একটা বাড়ি দিয়ে ঘেরা শিল্পপাড়া। ৪৪ টি বাড়ি নিয়ে ঘেরা এই শিল্পীপাড়া। গাছপালায় ঘেরা শিল্পীপাড়ার নানান হাতের কাজের এক অনবদ্য প্রতি ষ্ঠান। এখানে কাঠের তৈরি প্যাঁচার খুব বিখ্যাৎ। তিন কোনা কাঠের উপর নানা সাইজের প্যাঁচার খোদায়ের কাজের খুব কদর। এছাড়াও গৌর নিতাই, রাধাকৃষ্ণ, দূর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী গণেশ প্রভৃতির সঙ্গে রাজারানী অনেক রকমের পুতূল, পাখি খেলনা তৈরি হয়। এবংকী হাল ফ্যাসানের চেয়ার, টেবিল, খাট বা আরাম খেদারা সবই পাওয়া যায়। আর রং-এর ঔজ্জ্বল্য চোখে পড়ার মত। এখানে কাঠ হিসাবে ব্যবহার করা লম্বু. সোনাঝুরি, পিটুলি, আটা, শিমূল, মহানিম, পিয়ন, গামার, মেহগনি প্রভৃতি। স্থানীয় মানুষ জানান, আমাদের পূর্বপুরুষা নয়, আমরাও ভাবিনি যে আমাদের কাজের কদর বিশ্ব জোড়ি হবে।
|
0 মন্তব্যসমূহ