ছাড়াও আরেকটি বিশেষ পরিচিতি আছে সিলেটের গোলাপগঞ্জের ঢাকা দক্ষিণের।
বিশ্বের প্রথম নারী ভাষাশহীদ কমলা ভট্টাচার্যের জন্ম এই ঢাকা দক্ষিণে। এছাড়াও বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ ভাষা শহীদও সম্ভবত এই কমলা ভট্টাচার্য ।
নারী ভাষা শহীদ বিশ্বে আছেন আর মাত্র একজন - সুদেষ্ণা সিংহ (১৯৬৪-১৯৯৬)। তিনি বিশ্বের সর্বপ্রথম আদিবাসী এবং কমলা ভট্টাচার্যের পর দ্বিতীয় নারী ভাষাশহীদ।
ইনিও শহীদ হন বিষ্ণু প্রিয়া মণিপুরী ভাষা স্বীকৃতি আদায়ে, তাও এই আসামে।
কমলা ভট্টাচার্য শহীদ হন ১৯৬১ সালের ১৯ শে মে, শিলচর রেলস্টেশনে ভারতের আসামের পুলিশের গুলিতে।
কাছাড় মূলত বাংলা ভাষাভাষীদের অঞ্চল।
সিলেটের অংশ ছিল দেশভাগের আগে। তাই সেখানের বাংলা ছিলো সিলেটের আঞ্চলিক বাংলা। এখনো তাই। শিলচর, করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি -এই সব অঞ্চল।
দেশভাগের পর ভারতের আসামের অংশ হয় কাছাড়। বাংলা নয়, অহমীয়া, শুধু অহমীয়া-কে করা হয় সমগ্র আসামের সরকারি ভাষা।
সে হিসাবে কাছাড়েরও ভাষা হয় অহমীয়া ।
এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিল কাছাড়ের বাংলাভাষীরা।
১৯৬১ সালের ১৯ শে মে দিনটিতে শহীদ হয়েছিলো মোট ১১ জন। অধিকাংশ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে জন্ম। মূলত বৃহত্তর সিলেট, দু জন ব্রাহ্মণবাড়িয়া , একজন ময়মনসিংহের।
কমলারা ঢাকা দক্ষিণ ছেড়ে কাছাড় যান ১৯৫০ এ। বাবা ছিলো না। চার বোন, তিন ভাই-এর বৃহৎ পরিবার। উপার্জনক্ষম ছিলেন শুধু শিক্ষিকা বোন, ছোটদের সেজদি।
সে বছর মেট্রিক দেয় কমলা।
সহপাঠীদের কাছ থেকে পাঠ্যপুস্তক ধার করে পুরোনো ক্যালেন্ডারের উল্টো পৃষ্ঠার খাতায় লেখা পড়া করা কমলা। পরীক্ষার পর পর আন্দোলনকারীদের খাতায় নাম লিখায় শচীন্দ্র ও কমলা।
মা বোনের বারণ ছিল কমলার ঘর থেকে বেরোতে।
কিন্তু সব কিছু উপেক্ষা করে ২০-২২ জনের একটি মেয়েদের দলের সাথে বেরিয়ে পড়ে কমলা।
নিরুপায় মা কমলার হাতে গুঁজে দেন এক টুকরো ন্যাকড়া। কাঁদুনে গ্যাস হতে বাঁচতে। ছোট বোন মঙ্গলা, ছোট ভাই বকুল, বড়দির ছেলে বাপ্পা সাথ নেয় পিছু পিছু।
সেদিনের আন্দোলনের লক্ষ্য ছিলো শিলচর থেকে কোন ট্রেন ছাড়তে না দেয়া। সত্যাগ্রহী আন্দোলনকারীরা তাই শুয়ে পড়ে রেল লাইনে।
দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মা দুপুরে খালি গায়েই ছুটে আসেন কমলা দের দেখতে। কমলা বুঝিয়ে শুনিয়ে বিদায় করে মা-কে।
এর কিছুক্ষণ পর গুলির শব্দ, সত্যাগ্রহী দের গুলিবিদ্ধ দেহ, ছোট বোন মঙ্গলার আর্ত চিৎকার।
বোনকে বাঁচাতে ছুটে যায় কমলা, তখনই সে গুলিবিদ্ধ হয়।
ডান চোখের পাশ দিয়ে ঢুকে চুরমার করে দেয় মাথার খুলি।
মেট্রিক পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়ার ফল প্রকাশিত হয় তাঁর মৃত্যু বরণের পর।
পোস্টটির সম্পূর্ণ কৃতিত্ব Tapan Roy স্যার ঢাকা।
0 মন্তব্যসমূহ