Header Ads Widget

Responsive Advertisement

হারিয়ে যাওয়া মন্দির নগরী মালঞ্চ ও অল্প চেনা গ্রাম হদলনারায়নপুরে যাওয়ার গাইডলাইন


মন্দির নগরী ভাবলেই প্রথমে মনে আসে বাঁকুড়া বিষ্ণুপুরের কথা । কিন্ত বাংলায় আরেকটি স্থান আছে যেটাকে রীতিমত মন্দির নগরী বলা চলে । একাধিক সুপ্রাচীন মন্দিরে ঘেরা মেদিনীপুরের শহর মালঞ্চ । মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর স্টেশন থেকে মাত্র ৫ কিমি দূরত্বে মন্দির নগরী মালঞ্চ অবস্থিত। বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতি আধঘন্টা অন্তর বাস যাচ্ছে নিমপরায়। এখান থেকে হেঁটে বা টোটোয় পৌঁছান যাবে মন্দির নগরী মালঞ্চে। অনেক রকম মন্দির থাকলেও মালঞ্চের সর্বশ্রেষ্ঠ হলো কালিমন্দির। অপূর্ব সুক্ষ্ণ টেরাকোটার কাজ বিশিষ্ট এই মন্দিরটির উচ্চতা ৫০ ফুটের উপর। মন্দিরগাত্রে মনমুগ্ধকর ভাস্কর্যে বর্ণিত হয়েছে রামায়ণ কাহিনী। 

রাম, লক্ষ্মণ, রাবণ, সীতা, সুগ্রীব, হনুমান সবাই আছে  মন্দির গাত্রে। মন্দিরের প্রবেশ দ্বারে টেরাকোটার অপূর্ব শিল্প শৈলীর নিদর্শন মেলে। দেবী এখান নিত্য পূজিত হন। মন্দিরটি সংস্কার রং করা হয়েছে মেটে লাল রং দিয়ে ফলে টেরাকোটার স্বাভাবিকত্ব হারিয়েছে। মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে। এটি নির্মাণ করেন জকপুরের মহাশয় বংশীয় জমিদার গোবিন্দরাম রায়। কালিমন্দিরের পাশেই দেখতে পাবেন একটি শিব মন্দির। এছাড়া আছে সিদ্ধেশ্বরী মন্দির। আয়তনে বিশালাকার। এখানেও নিত্য পূজাপাঠ হয়। মন্দিরটি সযত্নে রক্ষিত। প্রায় ৩০০ বছর পুরনো হলেও মন্দিরটি রক্ষাণবেক্ষণ খুবই উদাহরণ যোগ্য।

মন্দির ও মায়ের প্রতিমা দর্শন করে বেরিয়ে খড়্গপুর স্টেশনে আসার পথে পড়বে বালাজী মন্দির।এটির বয়স ৬০ বছরের বেশী। মন্দিরটি নির্মিত হয়েছে দক্ষিণ ভারতীয় রীতিতে। নির্মাণ করেছেন  খড়্গপুরের বাসিন্দারা। আছে একটি ঝাড়েশ্বর শিবমন্দির। এখানে শিবচতুর্দশী ও চৈত্র সংক্রান্তির দিন গাজন মেলা বসে। মন্দিরটি আকারে ছোট। এটি অনেক পুরাতন মন্দির। এখানেও নিত্য পূজা হয়।

কলকাতার এত কাছে এমন সুন্দর মন্দির নগরী। কিন্তু প্রচার নেই। সকালে বেরিয়ে সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যায় ফেরত আসা যায়। যাতায়াত থাকবার জায়গা, আর ব্যাপক প্রচার পেলে মালঞ্চ একটি আদর্শস্থানীয় এবং আকর্ষণীয় গন্তব্যস্থান হিসাবে বিবেচিত হবে, এ বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ  নাই। শুধু ধর্ম নয় এখানে জড়িয়ে আছে ইতিহাস। অর্থাৎ যারা মন্দির ভাস্কর্য্য নিয়ে গবেষণা করতে ইচ্ছুক তাদের জন্য মালঞ্চ একটি আদর্শ স্থান।

কীভাবে যাবেনঃ- হাওড়া থেকে মেদিনীপুর  অথবা খড়্গপুর লোকাল ট্রেনে খড়্গপুর। যারা থাকতে চান তারা খড়্গপুরে বহু হোটেল আছে। একদিন থেকে পাশের দর্শনীয় স্থানগুলি দেখে আসতে পারেন। 


এবার আসি আরেকটি অতি অল্প পরিচিত আরেকটি গ্রামের কথায় । টেরাকোটার মন্দির ও প্রাচীন জমিদারবাড়ি নিয়ে মনোরম টুরিস্ট স্পট । বাঁকুড়া ও বর্ধমানের মাঝে একটি ছোট্ট গ্রাম হদলনারায়ণপুর। হদল একটি গ্রাম ও নারায়ণপুর আর একটি গ্রাম। দুয়ের মিলন হচ্ছে এই নাম। এখানে যাবেন তো অপরূপ টেরাকাটা মন্দির আপনাকে মুগ্ধ করবে। আছে  চারশো  বছরের জমিদার বাড়ি। সবাই বলে মন্ডল বাড়ি। হদলনারায়ণপুর গ্রামে ডুকতেই  প্রথম দর্শণ গ্রামের পুরনো আরাধ‍্য দেবতা বামনিদেবীর  মন্দির। এখানে দেবী দূর্গাই হচ্ছে বামণিদেবী। সময় নিয়ে দেবী পূজা দিতে বা পূজা দেখতে পারেন । 

এরপর এখান থেকে চলে  আসুন ছোট তরফের রাজবাড়ীতে। সাড়ে তিনশো বছর পুরাতন রাজবাড়ীতে  দেখতে পাবেন নাটমন্দির, দূর্গা দালান ডানদিকে ঘুরলেই দেখতে পাবেন কালী মন্দির এবং খুব সুন্দর দামোদর মন্দির। এর পিছনেই আছে ছোট কালী মন্দির ও শিব মন্দির। এত মন্দির দর্শণ করে চলে আসুন ছোট তরফের জমিদার বাড়িতে। এখানে দূর্গা মন্দির বিদ‍্যমান। প্রতি বছর বহু ধূমধাম করে  পূজো হয়। মেলাও বসে বড় করে।

এবার চলে আসুন বড় তরফে। দেখতে পাবেন রাসমঞ্চ,নাটমন্দির,আটচালা, রথতলা আর পিল্লাই জমিদার বাড়ীখানা। চারশো বছরের পুরোনো হলেও মনে হবে নতুন সৃষ্টি। ধা চক্ চকে  বাড়ি। এবার মেজ তরফ এখানে দামোদর মন্দিরটি দেখতে পাবেন। এবার সান্ধ‍্য কালিন অবসরের   গ্রামের বাজার ঘুরে দেখে নিন সরল মানুষ সব। 

কী ভাবে যাবেন :-- হাওড়া থেকে  বর্ধমান লোকালে মশাগ্রা, এখান থেকে বাঁকুড়া গামী ট্রেন ধরে  ধগড়িয়া স্টেশন। এখান থেকে টোটোয় চলে আসুন পাঁচ কিমি দূর হদলনারায়ণপুরে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ