Header Ads Widget

Responsive Advertisement

নদীয়ার ইদগাহ ও ঝাড়গ্রামের মাটগোদা - দেখেছেন কি ? জেনে নিন ইতিহাস ও ভ্রমন বৃত্তান্ত


বহু পুরাতন ইদগাহ দেখতে  মাটিয়ারী-বাণপুরে চলুন ঘুরে আসিঃ-

মাটিয়ারি দরগা :- খুব সকাল বেলায় বেরিয়ে পড়লাম মাটিয়ারির দরগা দেখার উদ্যেশ্যে। বাড়ি থেকে বেরিয়ে অটোয় মাজদিয়া স্টেশন,  এবার গেদে প্যাসেঞ্জারে বাণপুর। হারিশনগরের পর বাণপুর। স্টেশনের পুবদিকে সার সার টোটো দাঁড়িয়ে, হাঁকছে সবাই, মেটেরি মেলা মাত্র ১০ টাকায় একজনা। উঠে পড়লাম মায়ের আশিস নামক টোটোয়। বাজার পেরিয়ে শুধু জঙ্গল দুপাশে। মাটিয়ারী হাইস্কুল, তারপর ছোট বাজার, এখানেই শেষ। সামনে ইদগাহ। 

চাউমিন-এগরোল, জিলিপি-মন্ডার দোকান, ফুচকা, গুঘুনীসহ বহু খাবারের দোকান, মনোহারী, কাপড়ের দোকান, রান্নার কাজে লাগে গৃহস্থালির সবকিছুই পাওয়া যাচ্ছে।  কাছেই বাংলাদেশ, তাই এক কিমি দূরে বর্ডার। ৩ দিন সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা অবধী খোলা থাকে বর্ডার। এ পরম্পরা চলে আসছে ব্রিটিশকাল থেকে। এমেলায় বাংলাদেশের মানুষের উপস্থিতি চোখে পড়ার মত। এখানে শাহ-মালিক-উল-গউসের বা বুড়ো সাহেবের দরগা।

  কথিত আছে --" দরগায় গেলেই       গোস্তভাত" 

ঠিকই শয়ে শয়ে মানতের মুরগী দরগায় নিবেদন হচ্ছে। ছাড়া মুরগী ধরতে পরলেই  তার। পাশের বাঁধানো চাতালে মানতের মুরগী রান্না হচ্ছে। এক সময় নদীয়ার রাজধানী ছিল এই মাটিয়ারী। আগে আসাম অবধী রেল চলত। অম্বুবাচি উপলক্ষে আসাম-শিলচর থেকে বহু পূণ্যার্থীর সমাগম হত। মেলার ব্যাপ্তি ছিল বিশাল আকারের। সার্কাস - নাগরদোলা, পীরের গান, আলকাপ কত কি মেলাকে ঘিরে অনুষ্ঠিত হত। এখন সবই ইতিহাস।

তবে দরগার পাশে রাজার খনন করা দিঘীটি বিদ্যমান, সংস্কারের অভাবে ক্ষীণ হয়ে পড়ে আছে। পবিত্র এই দিঘীতে মানত হিসাবে স্নান করে মাটির ঘোড়া দরগায় চড়ায় সকলে। অতএব এই মাটিয়ারী মেলাকে সম্প্রীতির মেলা হিসাবে ইতিহাস প্রসিদ্ধ। 

কীভাবে পৌঁছাবেনঃ-- সারা বছর ইদগাহ খোলা থাকে, মানত দেয় মানুষে। তবে অম্বুবাচির সময়, আষাঢ় মাসের প্রথমে সপ্তাহে মাটিয়ারির মেলায় আসা ভালো। শিয়ালদহ থেকে গেদে প্যাসেঞ্জারে বাণপুর স্টেশন। স্টেশন থেকে রিক্সায়/ টোটোয় মাটিয়ারী মেলা।

কৃষ্ণনগর গড়াইপাড়ায় আছে আর একটি প্রাচীন দরগা। আমিন বাজারের পূর্ব প্রান্তে সতীশ সেন রোডে এই দরগা কিছুটা অবহেলিত ভাবেই রয়ে গেছে। কিন্তু গুরুত্বের দিক থেকে এই দরগার যথেষ্ট মূল্য রয়েছে। এই দরগায় মুসলিম স্থাপত্য টেরাকোটার নিদর্শন পাওয়া যায়।

তাছাড়া কৃষ্ণনগরে অনেক দরগার খোঁজ মেলে। জজকোর্ট পাড়ায় নরহরি মুখার্জী লেন, সিংহরায় বাড়ীর কাছে, বগুলা রোড, চকের পাড়া, ওস্তাগর রোড, কুর্চিপোতা লেন, হাতারপাড়া, মালোপাড়া, গৌড়িয় মঠের পশ্চিমে, নাজিরাপাড়ায় প্রভৃতি স্থানে প্রাচীন ঈদগাহ ও দরগা দেখা যায়।

অনুরূপ ভাবে আসাননগর পুরাতন বাজার এলাকায় দরগা গ্রামের মানুষ যত্নে রেখেছে। অম্বুবাচিতে দু'দিনের মেলা হয়। হিন্দু-মুসলমান মাটির ঘোড়া মানত চড়ায়।  


মাটগোদা: 

বন  বিভাগের বাংলোগুলি লোকালয় থেকে একটু দূরে। মাটগোদা এর ব্যাতিক্রম। জনহীন ছিল এদিকটায়। ক্রমে মানুষ বাড়তে লাগল, জঙ্গল হারিয়ে গেল, বনবাংলো ঘিরে জন বসতি শুরু হলো। তবুও বাংলোটি স্বচ্ছেন্দে ভরপুর। একটি ঘর, বারান্দার উপর মহুয়া গাছের চৈত্র সন্ধ্যায় ফুলের সুভাষে ভাসিয়ে দেয়, ছায়া দেয়, সবুজও দেয়। ঘরে আসবাব, বিছানা, ত্রুটিমুক্ত বিদ্যুৎ। তার পিছনে লাল শরু সাপের মত পথ গেছে রাইপুরে। জঙ্গল নিয়ে রানিবাঁধের পথতো বেজায় বৈরাগী। মাঝে শ্যামসুন্দরপুর সৌন্দর্যের মজুত ভান্ডার। বাংলো থেকে দুই ফার্লং দূরে, বাংলোর সামনে মাথার উপর গাছ আর দুপরের পাখপাখালির কিচির মিচির। সন্ধ্যায় ঘন কালো জোব্বায় মুশকিল আসান গাজি। সে ঘুরে ঘুরে চামর দোলায়। ধরা যাক চাঁদ নেই আকাশে, মেঘও কম্। অজস্র রূপোর চমক। নক্ষত্রের সহস্র মোহর। শুধু মাথা দোলায় অবাধ্য রাতের বাতাস।

ঘুরতে বেরিয়ে পড়ুন সকাল সকাল। প্রথমে আসুন শ্যামসুন্দরপুরের রাজবাড়ি। এরপর নীলকুঠি, এবার সোজা চলে আসুন পাতাডুমুর ড্যামে। শীতে এই ড্যামে বহু পার্টি চড়ুইভাতি করতে আসে। ঘুরে আসুন রাণীবাঁধ। ঝিলমিল যাওয়ার পথে পড়বে রাণীবাঁধ। ১৫ কিমি দূরে ক্ষুদিরাম বসুর স্মৃতিবিজড়িত বিপ্লবী কর্মকান্ডের স্থান ছেঁদাপাথর গ্রাম। এর ২ কিমি দূরে বীরকাঁড় বাঁধ। পর্যটকদের আকর্ষণীয়, পিকনিকের জন্য হাতছানি দেয়। ছেঁদাপাথর নিকটবর্তী বহু গ্রামে ব্রিটিশ আমলে তামা উত্তোলন কেন্দ্র ছিল। মূল্যবান চিপস্টোন খনি এখানে অবস্থিত। মাঘ মাসের শেষ শনিবার শুরু হয় সাত দিনের ধর্মরাজের মেলা। সর্বগোদার আদিবাসী এলাকায় আদিবাসীদের  তৈরী পাথরের থালাবাটি, প্রদীপ, শীলনোড়া সংগ্রহ করতে পারবেন।

কীভাবে পৌঁছাবেন- হাওড়া থেকে স্টিল বা ইস্পাত এক্সপ্রেসে ঝাড়গ্রাম। এখান থেকে  বাসে মাটগোদা। থাকার জন্যঃ- DFO দক্ষিণ বাঁকুড়া।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ