Header Ads Widget

Responsive Advertisement

গ্রামের নাম মুড়াগাছা - নদী , রাজবাড়ি ও অভয়ারন্য নিয়ে নদীয়ার অল্প পরিচিত এই রুরিস্ট স্পট ঘুরে আসুন


নদীয়ার আরেকটি কম পরিচিত ট্যুরিস্ট স্পট মুড়াগাছা গ্রাম । মুর্শিদাবাদ যাওয়ার পথে অনেকেই খেয়াল করেছেন , ধুবুলিয়া স্টেশনের পরেই মুড়াগাছা স্টেশন , স্টেশন থেকেই দেখা যায় অনন্ত বিস্তৃত মাঠ , সরু নদী আর ছোট ছোট গ্রাম্য ঘরের মাঝে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা কতগুলো পাকা বাড়ি । এই গ্রামেই লুকিয়ে আছে গ্রাম বাংলার অনেক চেনা অচেনা মন্দির , লুকিয়ে আছে বিখ্যাত মানুষের জন্মস্থান । আসুন জেনে নিন কিভাবে যাবেন আর কি কি দেখবেন মুড়াগাছা গ্রামে । 

৩৪ নং জাতীয় সড়ক ধরে এগিয়ে ৩কিমি পশ্চিমে মুড়াগাছা গ্রাম। এখানে দেখতে পাবেন বিখ্যাত মুখার্জি জমিদার বাড়ির ধ্বংসাবসেস , সেখানেই আছে তাঁদের তৈরি প্রাচীন সর্বমঙ্গলা  মন্দির। সর্বমঙ্গলা পূজো উপলক্ষে প্রতিবছর ১৫ দিনের মেলা বসে বৈশাখ মাসের  সংক্রান্তির দিনে। দূর-দূরান্ত থেকে পূণ্যার্থীরা মেলায় জমায়েত হন। নাগোরদোলা থেকে হরেক রকমের দোকান বসে মেলায়। কবি, রামায়ণ, মাণিক পীরের গান ইত্যাদির আয়জোন হয়। বিরাট পূজা মন্ডব কিন্তু সংস্কার নেই।

পূব দিকে একটু এগিয়ে গেলে দেখতে পাবেন কল্যাণেশ্বর মন্দির। প্রতিদিন নিত্য পুজা হয়। এ মন্দিরও ভগ্নদশা চোখে পড়বে। পাশেই শালিগ্রাম, শালিবাহন রাজা এখনে আসতেন তাই এই গ্রামের নাম শালিগ্রাম, অন্যমতে শালগ্রাম শিলা থাকবার জন্য নামকরণ হয় শালিগ্রাম।

     পাখীসব করে রব রাতি পোহাইল,

      কাননে কুসুম কলি সকলি ফুটিল।

এমন বাঙালী পাওয়া মুস্কিল যিনি এই বিখ্যাত কবিতাটি পড়েননি । এই কবিতাটির রচয়িতা কবি মদনমোহন তর্কালঙ্কার । তাঁর বাড়ি পাশেই বিল্বগ্রামে। প্রতি বছর ৩ রা জানুয়ারীতে তাঁর জন্মতিথি উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয় নানা মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান। 

নাকাশীপাড়ায় ব্রাহ্মণীতলায় শ্রাবণী সংক্রান্তিতে মনসাপূজার মেলা হয়। 

বৃত্তিহুদা গ্রামের সাহেবনগর সাহেবধনী সম্প্রদায়ের পীঠস্থান।

দেবতার গ্রাম দেবগ্রামে ওলাইচন্ডির মেলা খুবই আকর্ষণীয়।

 এবার পৌঁছে যাবেন পলাশীতে। এখানে দেখতে পাবেন বিশাল আকারের সুগার মিল বা চিনিকল। এক সময় এখান থেকে চিনি রপ্তানি হতো।  চিনি পৌঁছে দেবার জন্য চলত ছোট রেল মীরা পলাশী অবধী। আছে ৪ শয্যা বিশিষ্ট ডাকবাংলো। ক্লাইবের স্মৃতি বহন করে আছে  পলাশী মনুমেন্ট। পাশেই সেই ঐতহাসিক আম বাগান। এখন আখের ক্ষেত।

উত্তরে মাঠের কাছে মীরমদন ও মোহনলালের বীরস্তম্ভ। ডান দিক ঘুরলেই দেখতে পাবেন মীরমদনের সমাধীস্থল। পাশেই গঙ্গা বহমান- মনে পড়ে, 

"ঐগঙ্গায় ডুবিছে হায় ভারতের দিবাকর,

উদিবে সে রবি বাঙ্গালীর খুনে রাঙিয়া পুণর্বার।"

কবির কবিতা সর্থক হয়েছে। ১৫ ই আগষ্ট আমরা স্বাধীনতা লাভ করেছি ।

বেথুয়ডহরি অভয়ারণ্য:

মুড়াগাছা থেকে একটু এগিয়ে গেলেই পৌঁছে যাবেন বেথুয়াডহরী অভয়ারণ্যে । নদীয়ার সেরা অভয়ারণ্য এটি । এখানে দেখতে পাবেন হরিণ, ঘোড়িয়াল, ময়ূর, অজগর, হনুমান, নানা প্রজাতির স্বাধীন পাখি, বনবেড়াল, খরগোস ইত্যাদি। প্রজাপতির মিউজিয়ামটি খুব আকর্ষণীয়। একটি বনবাংলো আছে চার শয্যা বিশিষ্ট আবাসন।  কয়েশত রকমের পাখী , শতাধিক হরিণ , ঘরিয়াল , অজগর , হনুমান , কচ্ছপ - আরো বেশ কিছু পশুয় পাখীর দেখা পাবেন । রাস্তার ধারেই এই অভয়ারণ্য । মুড়াগাছা ঘুরতে গেলে অবশ্যই একবার ঘুরে আসবেন । বেথুয়াডহরী ছাড়িয়ে কয়েক কিলোমিটার এগুলে পৌছাবেন পলাশী । 

পলাশীতে আসলে মনে পড়বে পরাধীনতার গ্লানীর কথা। সিরাজের কথায়," বাঙলার ভাগ্যাকাশে আজ দূর্যোগের ঘনঘটা।" এখন আম্রকানন নেই কিন্তু আছে ইংরাজীতে লেখা দুটি স্মৃতি ফলক " South East Corner of the Mango 's Grove. অন্যটিতে লেখা " North West Corner of Mango Grove" যা এখনও আম্রকানের কথা মনে করিয়ে দেয়।

এবার পাগলাচন্ডি

পাগলাচন্ডি সেতুর আগেই থামতে হবে। প্রকৃতির সৌন্দর্য্য বিশিষ্ট মনোরম স্থান, প্রখ্যাত বরিষ্টার শংকরদাস ব্যানার্জীর বাগানবাড়ি নাম 'দি পলাশী হাউস'। ফুল ও ফলের বাগান সুন্দর, নান্দনিক। বাড়ির মালিকের সমাধী আছে, দেখে নিতে পারেন।


কিভাবে যাবেন :- 

ট্রেনে বাসে সব জায়গাগুলি ঘোরা একই দিনে অসম্ভব। সবচেয়ে ভালো ছোট গাড়ি ভাড়া করে  নেওয়া।

আর সর্বত্র হোটেল রেস্টুরেন্ট পাবেন। থাকবার জন্য পলাশী, বেথুয়াডহরী উপযুক্ত। সাধ্যের মধ্যে হয়ে যাবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ