Header Ads Widget

Responsive Advertisement

দেখেছেন কি ফাঁসিতলার মাঠ ? জেনে নিন বাংলার দুই বীর বিপ্লবীর গ্রামের কথা


ঝাড়গ্রাম থেকে ঘুরে আসা যায় বীর বিপ্লবী শহীদ ক্ষুদিরাম বসুর গ্রাম থেকে। জায়গাটি  রানীবাঁধ থানার অন্তর্গত। এখানে গভীর জঙ্গলে সুড়ঙ্গস কেটে আস্তানা করে ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করার নক্সা তৈরী করতেন। হাতে তৈরী বোমা এখানে হতো। ক্ষুদিরামে সঙ্গী হিসিবে পাওয়া গিয়েছিল শ্যামসুন্দরপুরের রাজা ছত্রনারায়ণের ভাই তপন নারায়ণ দেউ এই বিপ্লবী কাজে যোগ দেন। তাছাড়া এলাকার আদিবাসী যুবকরাও এই বিপ্লবী কাজে অংশ নিয়েছিল। যা ঐতিহাসিকগণ অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন। যে গাছের নীচে ক্ষুদিরামরা বিশ্রাম নিতো সেই গাছটিও বিদ্যমান। বনবাংল এখানে থাকবার জন্য খুবই সুন্দর। ছেঁদাপাথরের শহীদ ক্ষুদিরাম স্মূতি উচ্চবিদ্যালয়টিও ঘুরে দেখা যাবে।

ঘন জঙ্গলের বাঁকে বাঁকে আদিবাসীদের গ্রাম। সরা পালি ঘরাগাড়ি  জাঁতাডুমুর অপূর্ব সুন্দর গ্রামগুলির নাম। শুনতেই ভালো লাগে। সমগ্র টিলায় এবং জঙ্গলে লাল  মাটির অঙ্গরাগ। আর বর্ষায়, কালো মেঘের চাঁদোয়ার নীচে বর্ষণসিক্ত জঙ্গল। এরপর রাত নিশুতে যদি মেঘের উঁকি এড়িয়ে যদি পূর্ণিমার চাঁদ দেখা যায় আর কোন আদিবাসীর বাঁশের বাঁশী বেজে ওঠে তবেতো অবশ্যই ঘরের বাইরে যেতে হবে।

২ কিমি দূরে রানীকাঁধ বাঁধ পর্যটকদের অতীব আকর্ষণীয়। ছেঁড়াপাথর বহুগ্রামে ব্রিটিশ আমলে তামা উত্তলোন হতো। মূল্যবান টিপস্টোন খনিগুলি এখানেই অবস্থিত।

যারা ট্রেকিং করতে ভালোবাসেন তারা রাইপুর ট্রেকিং রুটকে বেছে নিতে পারেনা।

কীভাবে যাবেন :-

হাওড়া থেকে  যেকোন ট্রেনে ঝাড়গ্রাম। ঝাড়গ্রাম থেকে বাসে বাঁকুড়াগামী বাসে ফুলকুসমাতে নামতে হবে। ফুলকুসমা থেকে  বাসে ছেঁদাপাথরে। আর ধর্মতলা থেকে CSTC বাসে সরা সরি ছেঁদাপাথরে পৌঁছান যাবে।

থাকবার স্থান:

ঝাড়গ্রাম ও বাঁকুড়ায় প্রচুর লজ ও হোটেলে থাকবার ব্যাবস্থা আছে।



বিশ্বনাথ সর্দার ব্রিটিশ বিরোধী লড়াইতে একজন অগ্রগণ নাম। আসাননগর অঞ্চলের একটা শুনশান মাঠে ফাঁসি দিয়ে  লোহার খাঁচায় মৃতদেহ ভরে একটা অশ্বথ গাছে লটকে দেওয়া হয়। গ্রামবাসীকে ভয় দেখাবার জন্য, যাতে আর কোন ব্রিটিশ বিরোধী কেউ  জন্ম না নেয়। বিশ্বনাথের মা ঐ বট গাছের নীচে ছেলের  জন্য খাবার নিয়ে বসে থাকতেন, ছেলে এসে খাবে। মা যত্ন করে খাওয়াবে, আদোর করবে। কাঁদতে কাঁদতে বিশ্বের মা মারা গেছেন। কে এসব খবর রাখে? ১৯৮১ সালে  স্থানীয় জ্ঞানেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বিধায়ক হিসাবে বিধানসভায় শহিদ বিশ্বনাথ সর্দারের নাম প্রশ্ন-উত্তর পর্বে  উল্লেখ করেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্মসূচী গ্রহন করেন। রাজ্যপাল ত্রিভৃন নারায়ণ সিং বিশ্বনাথ সর্দারের যেখানে ফাঁসিকাঠে ঝোলানো হয় সেখানে যান এবং শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন, একটি অশ্বথ গাছ রোপন করেন। সেই থেকে এই মাঠটার নাম হয় ফাঁসিতলার মাঠ। বহু পর্যটক এখানে আসেন ঘুরতে। পাশেই কুলগাছি ফরেষ্ট।  ঘুরতে  ভালো লাগবে। শীতের সময় বহু মানুষ পিকনিক করতে আসেন। 

আর কি দেখবেন:- 
মেঘাই সর্দারের জন্মভিটা। মেঘাই সর্দার একজন ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামী মানুষ ছিলেন। চাঁদপুর আদিবাসী গ্রামে তাঁর বসত ছিল। তাঁর নামে একটি ফলক আছে। যদি আগাম বলে রাখা যায় তবে সুন্দর ঝুমুর নাচ দেখা যাবে, টুসুগানও শোনা যাবে। এই গ্রামে বহু মানুষ আসে ঘুরতে, দেখতে। স্থানীয় ভাবে একটি রিসর্ট গড়ে উঠেছে, এখানে  উঠা যেতে পারে। সন্ধ্যায় ক্যাম্প ফায়ার হতে পারে। মেঘাই সর্দার আদিবাসী ঝুমুর দল খুব সুন্দর প্রোগ্রাম করে থাকে। রিসর্টই যোগাযোগ করে দেবে। ঠিক রিসর্টের উল্টোদিকে  অর্থাৎ ঝোর নদীর পাড়ে তৈরী হয়েছে ২০০৭ সালে মদন মোহন তর্কালঙ্কার কলেজ। ঝোর পাড় ঘিরে বাবলার সারিবদ্ধ গাছের পাশ দিয়ে হেঁটে বেড়াতে ভালোয় লাগবে।
পরদিন সকাল সকাল উঠে দেখতে পাওয়া যাবে ঝোর ও কলিঙ্গ নদীতে মাছ ধরা। প্রয়োজন হলে নদীর মাছ সংগ্রহ করা যাবে। সকালের ব্রেকফাস্ট সেরে আসুন এই অঞ্চলের খুব মনোগ্রাহী স্থান কদমখালি মহা শ্মশানে। লালনতীর্থ কদমখালি। ১৯৯১ সালে মহত্মা লালন ফকিরের তিরোভাব দিবসে লালন মেলার প্রবর্তন হয়। ওপার বাংলার কুষ্টিয়া জেলার সেউড়িয়া মাজার থেকে লালন সমাধির মাটি এনে কদমখালিতে লালন বেদি প্রতিষ্ঠা হয়। অপূর্ব সুন্দর লালন মূর্তি, কয়লার শিবের মুখ ও অন্যান্য  কাপচার আশ্রম প্রঙ্গনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে স্থাপন করা হয়েছে। এই মূর্তিগুলির শিল্পমূল্য যথেষ্ট।
 আছে যোগমায়া মন্দির, সাদা কালি। নিত্য পূজো হয়। সন্ধ্যারতি দেখবার মত। মূর্তিটি তৈরী করেছিল গভঃ আর্ট কলেজের ছাত্র স্বপনকুমার বিশ্বাস মহাশয়। এটা একটি শ্মশানভূমি, পাশেই চুল্লীতে প্রতিদিন শবদাহ হয়। 
যোগমায়া মন্দিরের পাড়ে ঝোর নদী, নদীতে  নৌকা অভিসারে যাওয়া যাবে। ৫০ মিটার দূরে ভীমপুর হাইস্কুল মাঠে প্রতি বছর লালন মেলা হয়। দুপার বাংলার গুণী বাউল শিল্পীদের উপস্থিতিতে হাজার হাজার লালন প্রেমীদের জমায়েতে। তিন দিনের মেলায় প্রায় ৫০০০০ মানুষ হাজির হন। 

কীভাবে পৌঁছাবন :- 
শিয়ালদহ থেকে কৃষ্ণনগর। কৃষ্ণনগর থেকে মাজদিয়া গামী বাসে আসাননগর। গেদে প্যাসেন্জার ট্রেনে মাজদিয়া। তারপর বাসে লালনতীর্থ কদমখালি।

থাকবার জন্য :- 
তিনটি লজ ও একটি রিসর্ট পাবেন। এছাড়া কদমখালি আশ্রমে থাকার ব্যবস্থা আছে। এখানে কোন ভাড়া লাগে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ