Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

ইটন্ডার টেরাকোটা মন্দিরগুলি দেখতে চলুন

 ইটন্ডার টেরাকোটা মন্দিরগুলি দেখতে চলুন ঃ"



 শীতে এক সকালে গ্রামের বুড়ো বটতলায় অনন্তের চায়ের দোকানে জমিয় আড্ডা দিচ্ছিল ব্রতিন। গরম তেলে ভাজা আর গরম গরম চায়ের সাথে জমিয়ে আড্ডা। নানা বিষয়ের আলোচনার হঠাৎ উঠে এল  বাংলার প্রচিন টেরাকোটা মন্দির প্রসঙ্গে। আর হঠাৎই কথা উঠে এল এখান থেকে ২০ কিলোমিটার  দূরে অবস্থিত ইটন্ডা গ্রামে আছে বিষ্ণুপুরের আদলে নির্মিত প্রচিন টেরাকোটা মন্দির। গ্রামে এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আরো অনেকগুলি টেরাকাটা মন্দির। এই মন্দরগুলির ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম।

ব্রতিনরা বসেছিল শান্তিনিকেতন প্রান্তিকের কাছে। উত্তরে সোনাঝুরির গাছ। পাশে মন্দির। সামনে প্লাকাটে লেখা ' পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক রক্ষিত পুরাকীর্তি '   নীল বোর্ড। ভগ্ন প্রায় এই মন্দিরটি রাজ‍‍্য পুরাতত্ব বিভাগের   প্রচেষ্টায় মাটিতেই মিশে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। 
উনবিংশ শতকের মাঝামাঝি তৈরি এই কালি মন্দিরের সামনের দেওয়াল জুড়ে টেরাকোটার কাজ, পূর্ব পশ্চিম দেওয়ালে অল্প কাজ। কয়েকটি প‍্যানেলের কাজ লোপাট। এখন গ্রামের মানুষই মন্দির পাহারা দেয়। 
মন্দিরের অরাধ‍্য দেবী হচ্ছে কালী। নিত‍্য পূজো হয়। দেওয়াল জুড়ে কালী, শিব, মনসা, বিষ্ণুর দশ অবতার, কৃষ্ণলীলা,  কৃষ্ণ অবতার, শম্ভূ - নিশম্ভূ দলিনী চন্ডী, সিংহ বাহিনী দেব দেবী, পৌরাণিক কাহিনীর পাশাপাশি আছে ইউরোপীয় সন্ত ও সৈনিক। ঘোড়ায় চড়া শিকারের দৃশ‍্য। ফুল, লতা পাতা পাখি আর হরেক কিসিমের ছবি। হিন্দু পুরাণের সাথে মিলেমিশে একাকার ইউরোপ ও ইসলামিক প্রভাব। যে সব শিল্পীরা এইসব শিল্পকর্ম করে গেছেন তাঁদের নাম কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। সবাইকে  কুর্ণিশ। এই মন্দিরের কালীর প্রতিষ্ঠাতা দুর্ধষ‍্য ডাকাতেরা। প্রায় দু'শো বছরের আগে এই অজানা গ্রামে ছিল ডাকাতদের আস্তানা। তারপর ইটন্ডায় আসতে শুরু করেন ব্রিটিশ শাসকেরা। উদ‍্যেশ নীল চাষ। অনেকে মনে করেন ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী থেকে ইটন্ডা নাম করণ হয়। 
কালী মন্দির দেখার পর যাওয়া যাবে গ্রামেরই পঞ্চরত্ন শিব মন্দির। বড়জোড়া থেকে চরশো / পাঁচশো মিটার দূরে, পাশাপাশি দু'টি শিব মন্দির -- একটি পঞ্চরত্ন শৈলির আর একটা রেখ দেউল শৈলিতে নির্মাণ।
পঞ্চরত্ন শিবমন্দিরের গর্ভগৃহে প্রতিষ্ঠা ফলক এখনও অটুট। ১২৩৫  বঙ্গাব্দে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করছিলেন রসানন্দ সাধূখাঁ। উঁনার উত্তরসূরিরা এখনও ইটন্ডায় বসবাস করেন। 
পঞ্চরত্ন মন্দিরের টেরাকোটার কাজ দেখলে অবশ‍্য মুগ্ধ না হয়ে পারে না কেউ। 
প্রতিষ্ঠাফলকের নীচে একটা বড় প‍্যানেলে সপার্ষদ রাম - সীতা ও পার্ষদদের পোশাকে বাবু কালচারের ছোঁয়া, সে দলে আছে বেহালা বাদকও! নজর কাড়বে নৃসিংহ দেবের কোলে ভক্ত প্রহ্লাদ। মন্দিরের দেওয়াল জুড়ে দেব দেবী, নানা পৌরাণিক গল্পের পাশে ইউরোপীয় সেনাবাহিনী মিলে মিশে একাকার। জরাজীর্ন অবস্থাতেও শিবলিঙ্গের নিত‍্যপূজা হয় বরাবরই। এই মন্দিরের পাশে রেখদেউল মন্দির, শিব মন্দির প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল পঞ্চরত্নের তিন চার বছর আগে। এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা স্থানীয় পাইন পরিবারের কোন একজন বিশিষ্ট ব‍্যাক্তি। মন্দিরটি সংস্কার করা হয়েছে, পুরাতনের কোন চিহ্নই নেই। এই শিব মন্দিরের গা ভরা টেরাকোটার কাজ নেই কিন্তু গর্ভগৃহে প্রবেশের মুখে কৃষ্ণলীলার প‍্যানেলটি খুবই দৃষ্টিনন্দন। দরজার পাশে আলো দুটি প‍্যানেল ছিল, এখন ফাঁকা।
ইটন্ডা থেকে চার পাঁচ কিলোমিটার দূরে উচাকরণ গ্রাম। চারচালা শিব মন্দির। রাজ‍্য পুরাতত্ব বিভাগ থেকে সংরক্ষিত। 
১৭৬৮  সালে এই মন্দিরগুলি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন হরেন্দ্রনাথ সরখেল। বর্তমানে দেখ ভালের দায়িত্ব নিয়েছেন এক প‍ৌঢ় দম্পতি।  
মন্দিরগুলি দর্শন শেষে ব্রতিন পৌঢ় দম্পতিকে ধন‍্যবাদ জানেয়ে ফিরছে। ফিরতি পথে  দেখা যাবে অন্তিম বিকালে সূর্য‍্য অস্তাবলে যাওয়ার অপরূপ দৃশ‍্য। ব্রতিন সারাদিন এত টেরাকোটার কাজ দেখেছে যে মাথার মধ‍্যে গিজ গিজ করছে ইটন্ডা গ্রামের অপরূপ সৃষ্টি কর্মগুলি। কারা শিল্পী তাদের নাম খোঁজা বৃথা। শতক শতক বছর ধরে দাঁড়িয়ে থাকাই বড় কথা।

কী ভাবে যাওয়া যায় ঃ ট্রেনে বা বোলপুর। এখান থেকে শান্তিনিকেতন। তাপপর ইটান্ড যাবার বাস, অটো রিক্সা পাওয়া যাবে। 

Picture Credit and research work by Amitav Gupta - Link  

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ