ব্যাসকাশীর দূর্গের অলিন্দে
ভগবতী তরঙ্গে এঁকে রেখেছেন তরলতরঙ্গের সুভাষিত লাবণ্য। চিত্রবৎ। প্রাচিন সৌধ্য, প্রাসাদ, দূর্গ, মন্দিররাজি, শ্মশানঘাট, গঙ্গাতিরের একের পর এক ঘাটের তথ্য বা ৮৪ টি ঘাটের মহিমা নিয়ে কোল ঘেসে জীবন্ত শহর কাশী। বর্ধিষ্ণু গঙ্গা কাশীর পবিত্রতা চির স্মরণীয়। গঙ্গার ঘাটকথা ছাড়াও অসংখ্য মন্দির, বেনারসি শাড়ি, জর্দা পান মশলা, কাচের চুড়ি, কাঠের খেলনা, নিজস্ব সঙ্গীত ঘরনা, রাবড়ি লস্যি মালাই, দোকান পাট, ভিড়, কোঠা, অলি গলি তস্য গলি, ষাঁড়, বাঙালিটোলা, পান্ডা আর ক্যামেরায় ধরে রাখবার মত সন্ধ্যারতি। গঙ্গার পূর্ব পাড়ে তুলসিঘাটের উল্টোদিকে শতাব্দি প্রাচিন দ্রষ্টবস্থান রামনগর।
রামনগরের প্রধান আকর্ষণ সতেরো শতকের ঐতিহ্যপূর্ণ সুবিশাল রাজবাড়ি তথা দূর্গ। বারাণসী থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে রামনগর।
কাশীর রাজাধিরাজরা বংশ পরম্পরায় এখানে বাস করতেন। ১৭৫০ সালে কাশী নরেশ রাজ বলবন্ত সিং এখানে প্রথম রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। সাম্প্রতিক অতিতে মহারাজা অফ বারানসী অনন্ত নারায়ণ সিং এখানে বসবাস করতেন। তারই বংশধর মহারাজা পলু সিং এখন এখান থাকেন। ভগ্নদশা হলেও এখনো এই দূর্গ মাথা উঁচু করে, রাজকিয় ভাবে ঐতিহ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
রাজ পরিবারের অন্যান্য সদস্যারও এখানে রাজপ্রসাদে। লাল চুনা পাথর ও বেলে পাথরের সংমিশ্রেণে তৈরি মুঘোল স্থাপত্য শৈলিতে গড়ে উঠেছে এই রাজপ্রসাদটি। একেবারে গঙ্গার ধার বরাবর। নদীর ধারে, তবে নদী থেকে খানিকটা উঁচুতে অবস্থিত। রাজ প্রাসাদ চত্বরে রাজা জিৎ সিং-এল তৈরী দূর্গা মন্দিরটি দেখবার মত। দেবী দূর্গা চতুরভূজারূপিনি হিসাবে পূজিত হন।
প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো এই প্রাসাদের মূল আকর্ষণ দুস্প্রাপ্য সংগ্রহ ভান্ডার। রাজ শাষনকালে যা ছিল দরবার হল বা জনতা দরবার। আজ সরস্বতী ভবন নামে পরিচিত। পর্যটকদের দেখার জন্য এখানে চন্দ্র, সূর্য্য, নক্ষত্রের নির্ভুল পরিমাপ এখানে পাওয়া যায়।
রামনগরে গঙ্গার পাড়ে রয়েছে শতাব্দি প্রাচিন ব্যাশকাশী মন্দির আর দক্ষিণ মুখি হনুমান মন্দির।
কাশিবাসীদের লোক বিশ্বাস, মহাভারতের কৃষ্ণদৈপায়ন বেদব্যাস সং বলেন, ব্যাসমন্দির দর্শন সম্পূর্ণ হলে তবেই ভক্তের কশী দর্শনে পূর্ণ লাভ সম্ভব। এই রামনগর অঞ্চল ব্যাসনগর বা ব্যাসকাশী নামে পরিচিত। আষাঢ় পূর্ণিমায় ব্যাসদেবের জন্ম জয়ন্তী খুব ধূম ধামের মধ্য দিয়ে পালিত হয়।
মোক্ষপুরীও বলা হয় এই ৭ নগরকে। অরোধ্যা, মথুরা, মায়া, কাশী, অবন্তিকা, কাঞ্চি ও দ্বারকা এই ৭ টি পবিত্রস্থল নিয়ে সপ্তপুরি।
রামনগরের কিনারে পতিতপাবনী গঙ্গা। কাশীতে উত্তর মুখি গঙ্গা। এখানেই বরুনা আর অসি নদী গঙ্গার বুকে সমর্পণ করেছে। নগরের নাম বারানসী। প্রাচীন এই কাশীর আরো অনেক নাম আছে। যথা--সুদর্শনা, অভিমুক্তক, রাম্য, আনন্দকানন, মহাশ্মশান, ব্রহ্মভর্দ্ধ, ও সুরন্দন প্রভৃতি।
ব্যাসদেব গঙ্গার পূর্বপাড়ে রামনগর এলাকায় ' দ্বিতীয় কাশী' তৈরি করে বসবাস শুরু করেন। নিজেই সেখানে নিজের মূর্তি গড়ে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকে জনশ্রুতি চলে আসছে প্রতি বছর এখান ব্যাস মহোৎসব পালিত হয়ে আসছে।
কাশীর রাজা যখন প্রাসাদে থাকেন তখন প্রসাদের বাইরে পতাকা ওড়ে। রামনগরে একমাস ধরে রামলীলা ও দশেরায় রাবণ দহন উৎসব খুবই চমকপ্রদ। অত্যন্ত দশেরায় কাশীর মহারাজ নিজে উপস্থিত থাকেন।
ব্যাসকাশী থেকে দশাশ্বমেধ ঘাট মাত্র ৭ কিলোমিটার। ব্যাসকাশী গঙ্গার পূর্ব পাড়ে, আর বারনসীর সব ঘাটই পশ্চিম দিকে। সেখানে গোধূলী লগ্নেই শুরু হয়ে যায় গঙ্গারতি। আরতি উৎসর্গ করা হয় শিব, সূর্য্য, অগ্নি, গঙ্গামাতা ও তাবত বিশ্বকে। এই সন্ধ্যারতি আকূল করে রাখে সবার মনে।
কী ভাবে যাবেন ঃ-- ট্রেন পথে অনেক ট্রেন রয়েছে। প্লেনে-- দমদম থেকে বারানসীর লালবাহাদুর শাস্ত্রী বিমানবন্দর। সময় লাগে দেড় ঘন্টা। বারানসী থেকে রামনগর দূর্গ ১১ কিলোমিটার দূরে, গঙ্গা নদীর উপর লোহার ব্রীজ পার হয়ে রামনগর দূর্গ। সময় লাগে ২৫ মিনিট মত।
কোথায় থাকবেন ঃ-- নানা দামের হোটল, ধর্মশালা, আশ্রম আছে। একটু খুঁজে নিলেয় হবে।
0 মন্তব্যসমূহ