মধ্যপ্রদেশের সাতপুরা জঙ্গলে একদিন -
সাতপূরা। শাল, সগুন, মহুয়া, বাঁশ আর নানান গাছ গাছালিতে পূর্ণ এই মধ্যপ্রদেশের পাহাড়ি জঙ্গল সৌন্দর্যে অনন্য। মধ্যপ্রদেশের পাঁচমারি শহর এখানে। সাতপুরা, বেরি আর পাঁচমারির অভয়ারণ্য-- এই তিন রেঞ্জে নিয়ে সাতপুরা ব্যাঘ্র পকল্পের বিস্তার। অত্যন্ত রুক্ষ, পাহাড়ি গর্জ, গভীর গিরিখাত সম্বনিত এই গভীর অরণ্যে বন্য প্রাণী ও পাখির বৈচিত্র্য চোখে পড়ার মত।
অতিতে পাঁচমারি থেকে থেকে ঘুরে নেওয়া যেত এই সাতপুরা অরণ্য। কয়েক বছর হলো
ধুপগড় হয়ে জঙ্গলাকীর্ণ সেই পথ জন সাধারণের জন্য বন্ধ। জঙ্গলের মধ্যে দেনওয়া নদীর ধারে সাতপুরা। পাঁচমারি আর চুর্ণায় তাওয়া ডামের ধারে রয়েছে থাকবার বাংলো।
দেনওয়া নদীর ধারে, মাধাই রেঞ্জের মধ্যে টিকিট কাউন্টার। এন্ট্রি করে নদীর ব্যাকওয়াটার বোর্ডে চেপে নদীর এদিকের ঢালে নামতে হবে। এখানে বন বাংলো আছে, বন বাংলো দেনওয়া নদীর ধারে, পাখির কলরব মুখর এলাকা। বাংলোর পাশ দিয়ে পথ চলে গেছে গভীর জঙ্গলে। দেখা যাবে নৃত্যরত ময়ূর। গাছে গাছে বানরের দল লাফিয়ে বেড়াচ্ছে। জঙ্গলের পাশে জলের ডোবা, দু'টো রাডি শেলডাক আর একটা পেইন্টেড স্টর্ক। ভাগ্য ভালো থাকলে দেখা যাবে চিতল হরিণ, শেয়াল দেখা যাবে। এগুলো বাংলো থেকে দেখে নেওয়া যাবে। চিতাবাঘ এলাকায় লোকে বলে "তেন্দোয়া" হরিণ শিকারে তৎপর তাই হরিণে তাড়িয়ে দেবার জন্য অ্যালর্ম কল, লাগান আছে। এখান থেকে বন সাফারি করে গভীর জঙ্গলে প্রবেশ করতে ঘুরতে হবে, যদি বাঘ গন্ডার দেখা যায় ।
বন বাংলো আর বন কর্মীরা থাকবার একই জায়গায়। তিন দিক খোলা ধাবায় দুপুরের লাঞ্চ করার জায়গা। সামনে নীল টলটলে জল দেনওয়া নদীর। সামনে দেখা যাবে ময়ূরের আনাগোনা, অকুতভয়। ময়ূরের পেখম তোলা নাট দেখা যেতে পারে। নদীর উপর দিয়ে ময়ূরের উড়ে যাওয়া দেখতে মন ভরে যাবে। পেরিগ্রীন ফ্যালকন অর্থাৎ বড় মাপের বাজ পাখি। ওত পেতে বসে থাকে বিলের, নদীর মাছ ধরবার জন্য। সাতপুরার জঙ্গলে বাঘের মন খুব উদার। ঘন ঘন দেখা দেবে।
এবার হুড খোলা জিপসীতে জঙ্গল সাফারিতে বন সফর - বন ডোবায় দেখা যাবে ব্রাহ্মণী হাঁস। উপরের দিকে বুনো শুয়রের আনাগোনা। সম্বর হরিণ শিশো শাবককে আদরের সাথে দুধ খাওয়ানো হামেশায় দেখা যাবে। গাউরের অনেক দলকে দেখা যাবে, কেননা গাউররা দলে দলে ঘুরা ফেরা করে। জঙ্গল সাফারিতে ময়ূরের কর্কশ ডাক শোনা যায়। আর গাছের ফাঁকে ফাঁকে শ্লথ বেয়ার বা কুঁড়ে ভাল্লুক চোখে পড়বে। গাইড সহকারে ভাল্লুকের কাছে যাওয়া যায় তবে ওদের কিছু খাবার দিতে হবে। এই বিষয়টা খুবই বিপজ্জনক।
গাইড নিলে চিনিয়ে দেবে ব্রাউন ফিস আউল অর্থাৎ প্যাঁচা হরেক কিসিমের, এরা ঝাঁকড়া গাছগুলিতে অবস্থান করে। দেখা যাবে ইন্ডয়ান স্কপস আউল। দেখা মিলবে ইন্ডিয়ান রোলার, ক্রেসেড সার্পেন্ট ঈগল, লং টেইল শ্রাইক, বাঁশপতি এমনকি হুপি বা মোহনচূড়াও। ছোট ছোট ডোবায় দেখা মিলবে কোম্ব ডাক ভেসে আছে। এছাড়া জঙ্গল জুড়ে অসংখ্য সম্বর চিতল বারশিঙা দেখা মিলবে।
এখানে উপভোগ্য ঠান্ডা আবহাওয়া। আর জেগে ওঠা প্রাণীকুল।
কামানের গোলার মত বড় বড় আটাল লেচ্ছি গুড় আর হলুদ দিয়ে গুলে এটা হাতিদের খাবার। লঙ্গুর দেখা যাবে আর হরিণতো আকছার চোখে বাঁধবে। জয়েন্ট স্কুইরেল, গাছেই তাদের বাসা। ব্রাউন ফিস অাউলের বাসা দেখা যাবে সেফ জোনে।
এবার ফেরার পালা। জঙ্গলের থেকে বেরবার গেটে রাখা ভিজিটর বুক, লিখতে হবে বাঘ দেখার তারিখ ও সময়।
কি ভাবে পৌঁছান যায় -- হাওড়া থেকে জব্বলপুর গামী ট্রেনে জব্বলপুর চলে আসতে হবে। জব্বলপুর থেকে পিপরিয়া যাবার ট্রেনে পাওয়া যাবে। পিপরিয়া থেকে সাতপুরা ন্যাশনাল পার্ক ৫৫ কিলোমিটার পথ। পাঁচমারি থেকে ঘোরা যায় সাতপুরা ৯০ কিলোমিটার দূরত্ব।
কোথায় থাকা যায় - মাধাই বাইসন রিসর্ট, মাধাই রিভার সাইড লজ, রনি, পেনি জঙ্গল লজ।
0 মন্তব্যসমূহ