Header Ads Widget

Responsive Advertisement

সুন্দরবনের নিকটস্থ পাগল করা সৌন্দর্যে ভরপুর মাতলা নদী

 মন মাতাবে মাতলা ( একটি নদী )



প্রাত‍্যহিকতায় মলিন কর্মব‍্যস্ত দিন থেকে মুক্তি পেতে কার না ভালো লাগে। আর সেই মুক্তি যদি নদী অরণ‍্যের ঘ্রাণ নিয়ে আসে। "জাপানিজ ওয়াইফ" চলচিত্রে মাতলা নদীর উত্তাল রূপ দেখে ভীষণ রোমাঞ্চিত হয়েছিল রাজীয়া বারি। অদ্ভূত সবল পুরুষালি সে রূপ, ভয়ে গা ছম ছম করে উঠে কূলপ্লাবী তরঙ্গ দেখে। 
গঙ্গা সিনেমার গানের চলচ্চিত্রায়ণ মনে পড়ে রাজিয়ার-
' আমার ডুবাইলি রে ভাসাইলি রে....
অকূল দরিয়ায় বুঝি কূল নাই রে।'
রাজিয়া বারি খোঁজ পেয়ে গেল কূল কিনারা বিহীন মতলা নদী আর বাদাবনের জঙ্গলের কোলে নির্জনে দু 'দিন - দু' রাত্রি কটাবার আদর্শ জায়গা নিমপীঠ - কৈখালি। সুন্দরবনের এই বাদাবনে রামকৃষ্ণ মিশন জনহিতকর কাজে ও শিক্ষা দেওয়ার কাজে ব্রতি হয়েছে।
মনোনীত ২/ ৩ জনকে সাথে নিয়ে গরমের ছুটিতে বের হয়েছিল রাজিয়া বারি মাতাল করা মতলার রূপ দেখার জন‍্য। নির্জনে পাখি আর তাদের কলতান। খালে ফুটে ওঠা শাপলা - শালুক আর ফুটে ওঠা হরেক কিসিমের ফুল দেখার লোভে।
এবার নিমপীঠ যেয়ে আশ্রম অফিসে যোগাযোগ করতে হবে। আশ্রম অতিথি নিবাসে বিশ্রাম সেরে দেখে নেওয়া যাবে শ্রী রামকৃষ্ণ দেবের মন্দির। নীরব গম্ভীর পরিবেশ ও পরিচ্ছন্নতা মনকে সমাহিত করে দেবে। পাশেই শ্রীশ্রী সারদামণির আশ্রম। মেয়েদের শিক্ষালয় ও হোষ্টেল লাগোয়া মন্দির। পবিত্র ও সিগ্ধ পরিবেশ মনকে এক অপাথৃিব শান্তির অনুভূতি এনে দেবে। আশ্রমের নানা কর্মকান্ড দেখে রাজিয়ারা ফিরে এলো নীমপীঠে। নীমপীঠে ঠিক দুপুর ১২ টায় মহারাজের উপস্থিতিতে মধ‍্যাহ্ন ভোজনের আয়োজন হলো। রাজিয়া ও বন্ধুরা পরম তৃপ্তিতে গ্রহন করল সে আহার।
এবার কৈখালি। রাজ‍্য সরকারের একটি পর্যটক আবাস আছে। পরিচালনার ভার আশ্রমের উপর দেওয়া আছে। কোলাহল মুক্ত গাছ গাছালির পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে মাতলা নদী। ইচ্ছে করলেই ঘুরে আসা যাবে রয়েলবেঙ্গলের এলাকা সুন্দরবনে। লাল সূর্য‍্য তখন মাতলায় ডুবছে। ঝাঁক ঝাঁক টিয়া তখন কর্কশ ভাবে ডেকে চলেছে। সাদা বক  এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে, ধ‍্যানে মগ্ন। ফিঙে আর ছাতারে পাখির মেলা দেখতে দেখতে কেমন মহিত হয়ে পড়ে রাজিয়ারা। গেষ্ট হাউসের অদূরে আদ ডোবা গাছের গুড়ির উপর রাজিয়া বসে। শেষ বিকেলের আলো মায়া মাখিয়ে দিয়েছে সবাইকে। শুদ্ধ বাতাস গ্রহনের সাথে সাথে মন প্রান সতেজ হয়ে ওঠে। 
রাত্রিতে আশ্রমিকরা ছোট ছোট শিশু কিশোর বন্দনা গান গাইল, অনাবিল সুখানুভূতি জাগিয়ে তুললো। খোলা আকাশের নীচে রাজিয়া গান ধরলো, " অশ্রু নদীর সুদূর পারে ঘাট দেখা যায়,,,,,, 
পরদিন দেখা মিললো হলুদ পাখি বসে আছে জামরুল গাছের ডালে। তারুণ‍্যের উচ্ছ্বাস জড়িয়ে পড়লো চারিপাশ। আড্ডা গল্প আর গানে গানে জমে উঠলো পরিবেশ। দরজা খুলতেই সামনে নদীর গন্ধ মাখা সুবাতাস। সকালের আলোয় প‍ৃথিবীটা অন‍্য রকম দেখাছিলো। পাখির ডাক যে এত মধূর ও তীব্র তা না দেখলে বোঝা কঠিন। আকাশ লাল করে সূর্য‍্য ওঠা দেখা। পাশেই ধান ক্ষেতের দিগন্ত বিস্তৃত। এক পাশে জলাশয় সেখানে ফুটে আছে লালচে শালুক। 
এবার লঞ্চ করে অদূরে ঝাড়িখালিতে যাওয়ার সময় হলো। লঞ্চের ধীর গতিতে কোন এক সময় মাতলায় প্রবেশ করলাম। রাজ‍্য সরকারের তত্বাবধানে গড়ে উঠেছে একটি প্রজাপতি সংগ্রহশালা। দুটি বাঘও রাখা আছে এখানে।
এবার মাতলার চরের গ্রাম দেখার ইচ্ছে। লঞ্চ এবং আমরা পড়লাম তুমুল বৃষ্টির মধ‍্যে। উথাল পাথাল মাতলার ভয়ঙ্কর দ‍ৃশ‍্য। ফুঁসে ওঠা দামাল মাতলার জল আছড়ে পড়লো লঞ্চে। এই ভয়ঙ্কর স্ম‍ৃতি চির জীবন মনে থাকবে সবার। শান্ত হলো মাতলা একটা ভুটভূটি করে ছুটে গেলাম গ্রাম দেখতে। সরল সাধারণ মানুষদের আবাস এটা।
কী ভাবে যাবেন ঃ-  শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখা থেকে লক্ষ্মীকান্তপুর বা নামখানা স্টেশন। এখান থেকে মজিলপুর। মজিল পুর থেকে অটোয় পৌঁছান যাবে মাতলা নদীর উপকূলে। এখানেই রামকৃষ্ণ মিশন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ