Header Ads Widget

Responsive Advertisement

মুর্শিদাবাদ দূর্গাপূজা পরিক্রমা - কোথায় কি প্যান্ডেল , কোথায় কি ঠাকুর ? জেনে নিন

 গোটা মুর্শিদাবাদ দূর্গাপূজা পরিক্রমা ঃ



মুর্শিদাবাদের নাসিরি রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা মুর্শিদকুলি খাঁ ছিলেন হিন্দু ধর্মের উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। পরবর্তী শাসক, আফসারি সাম্রাজ‍্যের নবাব আলিবর্দি ও সিরাজদৌলা ছিলেন দুই ধর্মের মিলনে উৎসাহি। 
মীরজাফরদের নাফাজি রাজবংশের হাত ধরে দূর্গা পূজার উৎসব বেড়ে ওঠে। 
বছর দুয়েক আগে, দুর্গাপূজা আর মহোরম পড়েছিল একই সময়ে। নাফাজি রাজবংশের  উত্তরসূরি 'ছোট নবাব' ওরফে রেজা আলি খান ধর্মপ্রাণ শিয়া মুসলমান। নগ্ন পা ও কালো পোশাকি থাকেন এই দশ দিন। কৃচ্ছ্রসাধন করেন। তিনি হাজার দুয়ারীর সামনে যে পুজো হয় তার প্রেসিডেন্ট। ফলে ইমামবাড়ায় মাতন আর দুর্গা পুজোর এখানে তদারকি। এদের পূর্ব পুরুষ হুমায়ণ সাহ, যিনি হাজার দুয়ারি প্রসাদ বানান। তাঁর সময় থেকে এই পুজোর পত্তন। প্রতিদিন ঢালাও খাওয়া দাওয়ার ব‍্যাবস্থা। দশমীতে পাশেই টাকশাল ঘাটে দেবীকে বির্ষজন দেওয়ার নিয়ম। 
দেবী দূর্গার পূজা উপলক্ষ্যে মুর্শিদাবাদের বহু জায়গায় লাঠিখেলা হয়। অষ্টমিতে লাঠিখেলার তোড়জোড় হয় বলে বীরাষ্টমীও বলা হয়। অষ্টাদশ শতাব্দি থেকে বিং শ শতাব্দির গোড়া অবধি এই ব‍্যবস্থার প্রচলন হয়ে আসছে। যা এককালে বাগ্দিরাজা শাসন করতেন। বীরাষ্টমী গঙ্গার ভাটি বেয়ে চলে আসে কলকাতায় বাগবাজারে। এখনও এই নিয়মের প্রচলন হয়। 
রঘুনাথগঞ্জ জঙ্গিপুর স্টেশন নেমে যাওয়া যায়। এখানে ৩৫০ বছরের পুরাতন পুজো। এখানে পেটকাটি পুজোর আয়োজন সাড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হয়। জনশ্রুতি - পুরোহিতের ফুটফুটে কন‍্যা হারিয়ে যায় পুজো চলাকালিন। স্বপ্নে আদেশ দিলেন দেবীর পেট কেটে কন‍্যাকে উদ্ধার করতে। তাই করলে কন‍্যাকে পাওয়া গেলো। 
কাশিমবাজারে ছোট রাজবাড়ির পুজোও খুবই বিখ‍্যাৎ। এক কালে ইউরোপিয়ানদের বাণিজ‍্য কূঠি ছিল এখানে। ইংরেজ, ডাচ, ফরাসিরা এখানে থাকত। এখানে গঙ্গা 'কাশিম নদী' নামে খ‍্যাত। কাশিমবাজার স্টেশনের কাছে রাজবাড়ি। প্রায় বারো একর জমির উপর প্রাসাদ। অদূরে ডাচেদের সমাধি। কথিত আছে যে, সমাধিতে শুয়ে থাকা তেতাল্লিশ জন সাহেব দূর্গা পূজা দেখতে উঠে আসে। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী- এই তিনদিনই কুমারি পূজা হয়। দশমীতে হয় অপারিজিতা পূজা। বলি প্রথা ছিল এখন বন্ধ হয়ে গেছে। রাজা কমলারঞ্জন এই প্রথা বন্ধ করে দেন। বলির পরিবর্তে দবীকে দেওয়া হয় রুই মাছের ঝোল আর কাঁচা সন্দেশ। ভোগের তালিকায় আছে ইলিশ মাছ, পোলাও, ক্ষিরের শীতলভোগ ইত‍্যাদি। সপ্তমী থেকে নবমী অবধি বাল‍্য ভোগ। এক সময় সন্ধি পুজোর সময় তোপ দাগার নিয়ম ছিলো। কিন্তু সেই রাজ‍্যপাট আর নেই। রাজবাড়ীর পুঁথি থেকে পাঠ করা হতো চন্ডি। এই পুঁথি লেখা হয়েছে কালিকাপুরান ও দেবীপুরাণের সমন্বয়ে। রঘুনাথগঞ্জের বহুরা গ্রামে শুধু নবাবির ভোগ নয় মুসললমান রমণির ভোগ ছাড়া পূজো হতো না।
শরৎচন্দ্র বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়ের জমিদারিতে দূর্গা পূজা হয় মুসলমান রমণীর ভোগে। সত‍্যিই সম্প্রিতীর উদাহরণ বহন করে চলেছে। 
গভীর জঙ্গলে আছে কুদ কেদার। এই কুদের ভোগ ছাড়া দূর্গার পূজা হতো না, মায়ের আদেশ মেনে। এই দেবীকে বলে কুদাখাকি দূর্গা বা নাড়ুখাকি দূর্গা। লোক বিশ্বাস সেই থেকে এই এলাকায় কেউ অনাহারে মরেন না। দেবীর আদেশে গরীব মানুষেরা জঙ্গল থেকে কোদ দানা সংগ্রহ করে কুদের জাও রান্না করে ক্ষুদা নিবারন করেন। 
এই দূর্গারূপী মুক্তি নিয়ে ভারতীয় সংস্কতি ও দর্শন অনাদিকাল থেকে চর্চা হয়ে আসছে। বিঘ্ন বা দুঃখ যন্ত্রনা নাশের নানা পথ -- তাই দূর্গা কোন একক শক্তি নন। তিনি সকলের মিলিত শক্তি। অশুভের বিরুদ্ধে শুভ,অবিদ‍্যার বিরূদ্ধে বিদ‍্যার জ্ঞানরূপী আলো। দেবীর রূপ বর্ণনা যেমন- জয়দূর্গা,জগদ্ধাত্রী, গন্ধশ্বরী, বনদূর্গা, চন্ডী, নারায়ণী।

কী ভাবে যাবেন ঃ- কলকাতা বা শিয়ালদহ স্টেশন থেকে লালগোলা ট্রেনে মুর্শিদাবাদ। দূরত্ব ২২১ কিলোমিটার। গাড়িতে গেলে ৬ ঘন্টা। 

থাকবার জায়গা ঃ বহর টুরিজম প্রপার্টি, বহরমপুর। দ‍্য ব্লিস গোবিন্দ। দ‍্য ফ্রেম। হোটেল নন্দিনী ( বহরমপুর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে) । কশিমবাজার রয়েজ অব দ‍্য (কাশিমবাজার রাজবাড়ি ) 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ