Header Ads Widget

Responsive Advertisement

উলা বীরনগর -এর ইতিহাস জানুন আর ঘুরে আসুন বীরনগর এবং শ্রীপুরের দূর্গা পূজা দেখে আসুন

 উলা বীরনগর এবং শ্রীপুরের দূর্গা পূজা দেখে আসুন ঃ  


কন‍ৌজ থেকে প্রথম যে কায়স্থ বাংলায় আসেন বলে কথিত আছে তাঁদের অন‍্যতম ছিলেন কালিদাস মিত্র। তাঁর ঊনবিংশতিতম উত্তর সূরি রামেশ্বর মিত্র ছিলেন ফরাসী, আরবি এবং সংস্কৃত ভাষায় সুপন্ডিত। বাংলার নবাব মুর্শিদকূলি খাঁ রামেশ্বর মিত্রকে দিল্লী পাঠান মুঘোল  সম্রাট ঔরাঙজেবের দরবারে হিসাব রক্ষকের কাজ করবার জন‍্য। তাঁর দক্ষতায় মোঘোল সম্রাট এতটাই  অবিভূত হয় যে রামশ্বের মিত্রকে "মুস্তৌফি " উপাধি প্রদান করেন। 
রামেশ্বর মিত্র মুস্তৌফি ও তাঁর বংশধরেরা উলা-বীরনগর নদীয়া, শ্রীপুর-বলাগড় ও সুখড়িয়া-সোমরা হুগলি। রাজপ্রাসাদ মন্দির ইত‍্যাদি নির্মাণ করেন। উলা-বীরনগরে দূর্গা পুজার জন‍্য কাঠের মন্ডব তৈরী করেন।
রামেশ্বর মিত্রের বানানো পুরাতন রাজপ্রাসাদের খিলান যুক্ত প্রবেশদ্বারটি কেবল অক্ষত আঠে। চন্ডি মন্ডবে যেখানে পুজো  হতো তারও অস্তিত্ব বিলিন হয়ে গেছে। কিন্তূ উলা-বীরনগরের দুর্গা পুজো তিনশো বছর পূর্ণ  করলো। বর্তমানে দেবত্বর ট্রাস্ট দুর্গাপুজা পরিচালন কমিটি করে।
একচালার ডাকের সাজের প্রতিমা লোকমুখে প্রচলিত বুড়ো মা নামে পরিচিত। রথের দিন কাঠামো পুজো হয়। জন্মাষ্টমীর  পর থেকে প্রতিমা গড়ার কাজ। কুম্ভকার বংশ পরম্পরায় প্রতিমা নির্মান করেন। অশ্বমুখাকৃতি সাদা সিংহের মাথা থেকে পিঠ পর্যন্ত কালো কেশর আর অসুরের গায়ে গাছের পাতার রং বিশেষ নজর কাড়ে। পরিবারের কুলদেবতার মন্দির থেকে আনা নারায়ণ শিলাকে পুজোর চার দিন মন্দিরই থাকে। প্রতিদিন একশো আটটির বেলপাতা দিয়ে হেমাগ্নি করা হয়। 
দেবীমূর্তি বিসর্জন হয় চূর্ণি নদীতে। মুস্তৌফি পরিবারের আনন্দ একটুও কমেনি। পুজোর ক'দিন এদের অ‍্যাপায়ণ সত‍্যিই মনে রাখবার মত। 
উলা বীরনগরে পুজো দেখতে এলে ঘুরতে হবে চন্ডি মন্ডব থেকে ডিল ছোড়া দূরত্বে দেখা যাবে জোড়াবাংলো মন্দির। ১৬৯৪  সালে নির্মিত হয়েছিল এই মন্দিরটি। তিনটি খিলান যুক্ত মন্দিরের সামনের দিকে রয়েছে প্রশস্ত টেরাকোটার  কাজ। পোড়ামাটির ফলকে ফুঁটিয়ে তোলা হয়েছে রামায়ণ মহাভারত, কৃষ্ণলীলা ও সমকালিন সমাজচিত্র। 
এখান থেকে দশ মিনিট হাঁটা পথে দ্বাদশ শিব মন্দির ও মুখোপ‍াধ‍্যায়ের বাড়ি। এই পরিবারের মহাদেব মুখোপাধ‍্যায় আঠারো শতকে বৈধনাথ ও বিশ্বনাথ দুই ডাকাতকে উচিত শিক্ষা দিয়েছিলেন। সেই থেকে এই অঞ্চলের নাম হয় বীরনগর। এই বাড়িতে একটি পিতলের রথ আছে। 

শ্রীপুর বলাগড়
রামেশ্বর মিত্রের জ‍্যেষ্ঠ পুত্র রঘুনন্দন, নদী পথে বাণিজ‍্যের সুযোগ নিতে শ্রীপুর চলে আসেন। তিনি  সেখানে দূর্গ কমপ্লেক্স স্থাপন করেন। যা মিত্র মুস্তৌফি নামে পরিচিত। রঘুনন্দন  শাক্ত ছিলেন। তবে তাঁর সময়ই শ্রীপুর শাক্ত ও বৈষ্ণবদের মধ‍্যে সাংস্কৃতিক মৈত্রী স্থাপন হয়েছিল। রঘুনন্দন রাধাগোবিন্দ মন্দির, শিবমন্দির, দোলমঞ্চ এবং রাসমঞ্চ তৈলি করেন। 
বলাগড় স্টেশন থেকে মিত্র মুস্তৌফি গড় প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। শ্রীপুর বাজার থেকে কয়েক মিনিট হাঁটা পথে রাস্তার বা পাশে দোলমঞ্চ। এখানে প্র্তি বছর দোল উৎসব অনুষ্ঠিত হয় এখানে। কিছু দূরে যমজ এক চূড়া বিশিষ্ঠ শিব মন্দির। কাছাকাছি রয়েছে রাধা গোবিন্দ মন্দির, শিবমন্দির, নয়টি চূড়া বিশিষ্ঠ অষ্টভূজ রাসমঞ্চ, নাটমন্দির, বিখ‍্যাৎ কাঠের চন্ডী মন্ডব সহ প্রধান মন্দিরের কমপ্লেক্স। 
সাদা রংঙের অষ্টভূজাকার রাসমঞ্চের প্রতিটি কোণে একটি করে মোট আটটি চূড়া একটি কেন্দ্রিয় চ‍ৃড়া রয়েছে। রাসমেলার সময় শ্রীপুর মিত্র মুস্তৌফি পরিবারের প্রধান দেবতা রাধাগোবিন্দ জিউকে স্থাপন করা হয়। বছেরর অন‍্য সময় কূল দেবতা থাকে তিন খিলান যুক্ত দালান মন্দিরে। 
শ্রীপুরের প্রধান আকর্ষণ কাঁঠাল কাঠের চন্ডিমন্ডব। এই চন্ডিমন্ডব নির্মিত হয়েছিল মোঘল আমলে। 
উলা বীরনগর চিন্ডমন্ডবের মত শ্রীপুরে চন্ডি মন্ডব। একই রকম।
পরিবারের ধারা বজায় রেখে শ্রীপুরে দুর্গা পুজো চন্ডি মন্ডবে। ডাকের সাজের প্রতিমা। পুজো শুরু হয় কৃষ্ণনবমাদ‍্যিকল্পে। নবপত্রিকা স্নান করানো হয় চন্ডি মন্ডবে। পশু বলিও হয়। সপ্তমী থেকে দশমী অবধী জ্বলতে থাকে হেমকুন্ডু। সকালে দেবীকে নৈবদ‍্য নিবেদন হয়। সন্ধ‍্যায় নিবেদন করা হয়। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ